বিভিন্ন ধাক্কা সামলে কঠিন পথ পার করে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ই-মেইল সেবা এখন গুগলের জি-মেইল। শুরুর দিকে জি-মেইলের ই-মেইল সেবাটি শুধু গুগলের কর্মীদের ব্যবহারের জন্য ছিল। পরবর্তী সময়ে গুগল ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সবার মাঝে জি-মেইল চালুর ঘোষণা দেয়। বিশ্বজুড়ে দেড়শ’ কোটির বেশি সক্রিয় গ্রাহক রয়েছে জি-মেইলের।
সাফল্যের এই পর্যায়ে আসতে কঠিন সময়ও পার করতে হয়েছে সেবাটিকে, শুরুর ধাক্কা তো ছিলই। গুগল যখন জি-মেইল উন্মোচন করে তখন গ্রাহক এটিকে আসলে কৌতুক হিসেবেই নিয়েছিল। এর পেছনে কারণও ছিল। এপ্রিলের ১ তারিখ তথা ফুল’স ডে-তে উন্মোচন করার কারণে গ্রাহক মনে করেছিল, গুগল তাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। গ্রাহক যখন বুঝতে পারেন, গুগল আসলেই সেবাটি উন্মোচন করেছে তখন বিনামূল্যের ই-মেইল সেবাগুলোর তালিকায় গ্রাহকের পছন্দের তালিকায় আসতে শুরু করে জি-মেইলও।
মূলত ১৯৯৯ সালে জি-মেইলে নিয়ে কাজ শুরু করে গুগল। সে সময় গুগলের ২৩তম কর্মী পল বুখেইট তখন প্রতিষ্ঠানের অনলাইন ই-মেইল সেবা নিয়ে লড়েছেন। কিন্তু অনেক কর্মকর্তাই এটা নিয়ে নাখোশ ছিলেন এমনকি আস্থা রাখতে পারছিলেন না গুগলের ই-মেইল সেবার ওপর। সার্চ ইঞ্জিন প্রতিষ্ঠান ই-মেইল সেবা থেকে লাভবান হতে পারে এটা কোনোভাবেই তারা বুঝতে পারছিলেন না। সে সময় অনেক নির্বাহী কর্মকর্তাই এ প্রকল্প থেকে সরে এসেছেন বলে বেশ কিছু প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ডোমেইন নামের ইতিহাস গুগলের জি-মেইল ডটকম (www.gmail.com) ডোমেইন নামটি আগে ছিল বিনামূল্যে ই-মেইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ঘারফিল্ড ডট কমের (www.garfield.com)। পরবর্তী সময়ে ডোমেইনটি গুগল নিয়ে নেয়। শুরুর দিকে জি-মেইলের ইউআরএল ছিল http://gmail.google.com/gmail যা ২০০৫ সালের ২২ জুন রিডাইরেক্ট করে http://mail.google.com/mail করা হয়।
স্পেস : শুরুতে ব্যবহারকারীদের জন্য জি-মেইল বিনামূল্যে ১ গিগাবাইট স্পেস দেয়। পরবর্তী সময়ে তা ২ গিগা থেকে ৪ গিগাবাইট করা হয়। বর্তমানে বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য জি-মেইল ব্যবহারকারীদের ১৫ গিগাবাইট স্পেস দিচ্ছে যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর পাশাপাশি ইচ্ছা করলে জায়গা বাড়ানোর সুযোগও দিয়েছে। এক্ষেত্রে ২৫ গিগাবাইটের জন্য মাসিক ২.৪৯ ডলার, ১৬ টেরাবাইট স্পেসের জন্য মাসিক ৭৯৯.৯৯ ইউএস ডলার দিতে হবে। ২০১১ অক্টোবর পর্যন্ত জি-মেইলের ব্যবহারকারী ২৬০ মিলিয়ন। ২০০৫ সালের ১ এপ্রিল জি-মেইলে প্রথম জন্মদিনে গুগল জি- মেইলে স্পেস ১ গিগাবাইট করে।
জি-মেইল সার্চ : জি-মেইলে শুরু থেকে সার্চ অপশন ছিল যা ব্যবহার করে ই-মেইল খোঁজার কাজটি সহজ হয়েছে। ২১ মে ২০১২ থেকে জি-মেইলে আরও উন্নত সার্চ ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়। এতে ব্যবহারকারীরা যে কোনো শব্দ লিখলে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহারকারী কিংবা ব্যবহারকারী ই-মেইল সাজেশন দেখায়।
জি-মেইল মোবাইল : জি-মেইল মোবাইল গুগলের জি-মেইলের ই-মেইল সেবা। ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর জি-মেইল মোবাইল সেবা চালু হয় এবং বর্তমানে প্রায় ৪০টি ভাষায় জি-মেইল মোবাইল সংস্করণ রয়েছে। এতে সহজে গুগলের নানা সেবার মতো জি-মেইলও মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা যায়। এটি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় স্মার্টফোন কিংবা মোবাইল ফোনে। জি-মেইলের মোবাইলের জন্য বিশেষ অ্যাপসটি বেশ ছোট এবং মোবাইলের স্ক্রিনের সাইজ অনুযায়ী তৈরি করা। এতে ব্যবহারকারীরা মোবাইল ফোনেই ই-মেইল কম্পোজ, পড়া, আর্কাইভ করা, মেইলের রিপ্লাই করা, ফরওয়ার্ড করা, না পড়া মেইলগুলোকে আনরিড করা, স্টার আইকন অ্যাড করা, কাস্টম লেভেল অ্যাড করা, মেইল মুছে ফেলার কাজ করতে পারেন।
অফলাইনে জি-মেইল : ২০১১ সালের ৩১ আগস্ট জি-মেইল ব্লগ অফিসিয়ালি অফলাইন গুগল মেইল চালু করে ক্রোম ওয়েব অ্যাপস হিসেবে যা গুগল ক্রোম ওয়েব স্টোরে পাওয়া যেত। এইচটিএমএল-৫ সমর্থিত এ অ্যাপসটি ট্যাবলয়েডও ব্যবহার উপযোগী। ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল গুগলের কর্মীদের জন্য অফলাইন গুগল ডক এবং গুগল ক্যালেন্ডার চালু করা হয়।
এত কিছুর পরও ২০১২ সাল পর্যন্ত অন্যান্য প্রতিযোগীদের চেয়ে খুব বেশি ভালো করতে পারেনি জি-মেইল। তবুও ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে নিজেদের নিত্যনতুন উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ভোক্তা এবং এন্টারপ্রাইজ দু’ধরনের গ্রাহকের জন্য নতুন নতুন ফিচার এনে বর্তমানে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে গুগলের জি-মেইল।