অনেকেই জিমেইল ব্যবহার করেন। এখন কেউ মেইল পাঠালে কষ্ট করে তার জবাব লিখতে হয় না। গুগল স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু জবাব হাজির করে। এ জবাব থেকে যেকোনো একটিতে ক্লিক করলেই হয়ে যায়। এতে সময় বাঁচে। জিমেইলের এ ধরনের জবাবগুলোকে বলে স্মার্ট রিপ্লে। কীভাবে এ জবাব প্রস্তুত করে গুগল? গুগল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স সিস্টেম বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এ জবাবগুলো হাজির করে যাতে সংক্ষেপে দ্রুত জবাব দেওয়া যায় এ সময় বাঁচে।
ওয়েবে জিমেইলের হালনাগাদ সংস্করণে কাস্টমাইজড অটো রেসপন্স সুবিধাটি এসেছে। অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ও আইফোনে সুবিধাটি আগে থেকেই রয়েছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন অনলাইন জীবনে প্রভাব ফেলছে এটি তার একটি উদাহরণ। তবে, গুগলের এই স্মার্ট জবাবের বিষয়টি ব্যবহারকারীদের কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।
স্মার্ট রিপ্লেতে তিনটি সংক্ষিপ্ত জবাব হাজির করে গুগল। যেমন-‘ইট ওয়াজ গ্রেট সিইং ইউ টু’ বা ‘আই উইল লুক ইনটু ইট’। প্রেরকের পাঠানোর ইমেইলের বিষয়বস্তুর প্রেক্ষাপটে এ ধরনের জবাব হাজির করে গুগল। এগুলো থেকে একটি বাছাই করে পাঠানো যায় বা তা পাঠানোর আগে সম্পাদনা করে নতুন মেইলও পাঠানো যায়।
প্রশ্ন উঠছে, আপনার মেইল কি কেউ পড়ছে? গুগল বলছে, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের ব্যবহারে এ ধরনের জবাব তৈরি হয় বলে কোনো মানুষ মেইল পড়ে না। কিন্তু মেশিন আপনার মেইল স্ক্যান করে। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য মেইল স্ক্যান করা বন্ধ করেছে গুগল। তবে, জাঙ্ক মেইল, ফিশিং স্ক্যাম ফিল্টার করার জন্য মেইল স্ক্যান করতে হয়। এখন স্মার্ট রিপ্লাই দেওয়ার জন্যও মেইল স্ক্যান করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ভেরিজনের ইয়াহু ও এওএল এখনো বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য মেইল স্ক্যান করে।
গুগল বলছে, মেইলে পাঠানো টেক্সটের ওপর ভিত্তি করে তার জবাবগুলো প্রস্তাব করা হয়। এর বাইরে কোনো সংযুক্তি বা অ্যাটাচমেন্ট বা ছবি বিশ্লেষণ করে না গুগল। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে গুগল সেগুলো স্ক্যান করে। গুগলের বিশ্লেষণের মধ্যে রয়েছে মেইলের আগের কথোপকথন। যেমন-কেউ যদি মেইলে ‘থ্যাংকস!’ জানায় গুগল তার জবাবে শুধু ‘থ্যাংকস’ কথাটি হাজির করে। তখন আর বিস্ময়সূচক চিহ্নটি থাকে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগোর প্রাইভেসি ও ডেটা নিরাপত্তা বিষয়ক আইনজীবী ব্রায়ান ল্যাম বলেন, অটো রিপ্লাইয়ের বিষয়টি গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী প্রাইভেসি ও নতুন ফিচারের বিনিময়ের মধ্যে পড়ে।
২০০৪ সালে জিমেইল চালুর পর থেকে মেইল স্ক্যান করে গুগল। তাই স্বয়ংক্রিয় উত্তর দেওয়ার জন্য মেইল স্ক্যান করার বিষয়টি আশ্চর্যের কিছু নয়। আইনজীবী ল্যাম বলেন, গুগল যতক্ষণ এটা জনসম্মুখে স্বীকার করছে ততক্ষণ এতে উদ্বেগের কিছু নেই।
ল্যাম বলেন, দায়িত্বশীল আচরণ করার একটি বাজারমূল্য আছে। যারা প্রাইভেসিকে সম্মান করে না তাদের বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষেপে যায়। মানুষ তখন ওই সেবা ব্যবহার ছেড়ে দেয়। গুগল অবশ্য সব মেইলে জবাব দেওয়ার ওই স্বয়ংক্রিয় প্রস্তাব হাজির করে না। যে মেইলগুলোর উত্তর সংক্ষেপে দেওয়া সম্ভব, সে ক্ষেত্রেই গুগল ওই স্বয়ংক্রিয় জবাব নিয়ে হাজির হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিস শহরের ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী গ্রাহাম গার্ডেনার বলেন, তিনি গত কয়েক মাস ধরে স্মার্ট রিপ্লাই ব্যবহার করছেন। দ্রুত জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি সাহায্য করছে তাকে। ফোনে মাত্র একটি চাপেই তিনি জবাব দিতে পারছেন। মেইলে খুব বেশি কিছু লেখার প্রয়োজন পড়ছে না। দ্রুত মেইলের জবাব দিয়ে মানসিক শান্তি পাওয়া যাচ্ছে। পরে ওই মেইলের বিস্তারিত লেখার সময় পাওয়া যায়। এতে যোগাযোগ ঠিক থাকে।
তবে সান ফ্রান্সিসকোর একটি টিভি স্টেশনের অ্যাসাইনমেন্ট সম্পাদক মায়া কাস্ত্রো বলছেন, ফেসবুক চ্যাট বা টেক্সট বার্তার ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় জবাব ঠিক থাকলেও মেইলের জবাবের ক্ষেত্রে নিজে থেকে লেখাকেই গুরুত্ব দেন তিনি। এটা মেইলের টোন ও মেজাজ নষ্ট করে দেয়। এতে চিন্তা চেতনার প্রতিফলন থাকে কম।
যাঁরা মোবাইলে স্মার্ট রিপ্লে ফিচারটি বন্ধ করে দিতে চান তারা সেটিংসে গিয়ে স্মার্ট রিপ্লে বন্ধ করে দিন। তবে ওয়েবে আপাতত এটি বন্ধ করার উপায় নেই। তবে, সেটিংসে গিয়ে জিমেইল ক্লাসিক সংস্করণে ফিরে গেলে এটি আর দেখাবে না।
অবশ্য মেইল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় জবাব ছাড়াও আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করছে গুগল। গত এপ্রিল মাস থেকে জিমেইলকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবহারকারীকে মেইলের জবাব মনে করিয়ে দেওয়া বা অ্যাটাচমেন্ট যুক্ত করার মতো বিষয়গুলো রয়েছে।
তথ্যসূত্র: গুগল সাপোর্ট, ইকোনমিক টাইমস, মিয়ামি হেরাল্ড।