স্মার্টফোন গরম হয়ে যাওয়ার সমস্যাটির ভুক্তভোগী সবাই। প্রায় সবধরনের ফোন এ, সে ফোন Android হোক আর Apple হোক আর উইন্ডোজ ফোন হোক কিংবা সস্তা বা দামী। একটি সমস্যা কিন্তু লেগেই থাকে, তা হলো অত্তাধিক গরম হওয়া।কেউ কেউ বলে, বেশি কথা বললে ফোন গরম হয়ে যায়। কেউ বলে, বেশি গেম খেললে গরম বেশি হয়। কেউ বলে, বেশি নেট করলে। কিন্তু কথা বলার জন্য, গেম খেলার জন্য কিংবা নেট করার জন্যই তো স্মার্টফোন।
যে কোনও ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতিই গরম হয়। গাড়ি থেকে কম্পিউটার সব। স্বাভাবিক কারণে স্মার্টফোনও গরম হয়। কিন্তু সব স্মার্টফোন সমান গরম হয় না। কোনোটা কম, কোনোটা বেশি। কেউ কেউ বলেন, বেশি কথা বললে ফোন গরম হয়ে যায়। কেউ কেউ বলেন, বেশি গেম খেললে ফোন গরম বেশি হয়। আবার কেউ কেউ ভাবেন, বেশি নেট ঘাটলে গরম হয় ফোন। আসলে তা নয়। ফোন গরম হওয়ার কারণ ভিন্ন।
প্রসেসর
স্মার্টফোন বেশি গরম হওয়ার জন্য প্রথম কারণ প্রসেসর। সেটাই ফোনের প্রধান অঙ্গ। আপনি ফোন ব্যবহার করুন আর নাই করুন প্রসেসর সবসময় চলতে থাকে। তার কাজ করতে থাকে। কখনও বেশি আর কখনও কম। প্রসেসরের ভিতরে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইলেকট্রন থাকে। সাধারণ কথা বলা কিংবা গান শোনার তুলনায় টানা ডাউনলোড করলে ইলেকট্রনগুলি বেশি তাপ উৎপন্ন করে। এতে ফোনটি গরম হয়। প্রসেসর ফোনের বডির সঙ্গে লেগে থাকে। ফলে গরম অনুভূত হয়।
ব্যাটারি
স্মার্টফোন দিন দিন পাতলা হলেও ব্যাটারির প্রযুক্তি সেভাবে উন্নত হয়নি। দুর্বল ব্যাটারি বেশি তাপ তৈরি করে। ব্যাটারি চার্জ নেওয়ার সময়ে বা ডিসচার্জ করার সময়ে ফোনকে বেশি গরম করে দেয়।
দুর্বল নেটওয়ার্ক
আপনি যদি এমন জায়গায় থাকেন, যেখানে নেটওয়ার্ক খুব দুর্বল। সিগন্যাল আসছে আর যাচ্ছে। অথবা, ওয়াইফাই সিগন্যাল পেতে ফোনটিকে খুব বেগ পেতে হচ্ছে। তবে সেই পরিস্থিতিতে স্মার্টফোনের চার্জ বেশি খরচ হয়। দুর্বল নেটওয়ার্কে সিগন্যাল পাওয়ার জন্য আপনার ফোনটি বেশি শক্তি প্রয়োগ করে। প্রসেসরে চাপ পড়ে। স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়।
কতটা গরম হওয়া স্বাভাবিক
স্বাভাবিক অবস্থায় কাজ করতে স্মার্টফোন ৩৫-৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম হতে পারে। আপনার ফোন কম দামি বলে বেশি গরম হয়, তা কিন্তু নয়। নকিয়া থেকে অ্যাপেল, সব ফোনই গরম হয়। তবে স্ট্যান্ড বাই মোডেও যদি ফোনটি ৩৫-৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম থাকে তবে বুঝবেন সমস্যা রয়েছে।
মনে রাখবেন স্মার্টফোন বেশি গরম হলে প্রসেসরের ক্ষতি হয়। কর্মক্ষমতা কমে যায়। প্রসেসর এমনভাবে তৈরি যাতে এটি বেশি গরম হলে ঠান্ডা হওয়ার জন্য নিজের থেকেই কাজ কমিয়ে দেয়। এটা বারবার হলে প্রসেসরের স্থায়ী ক্ষতি হয়।
এর থেকে মুক্তির উপায় কী?
১. স্মার্টফোনে বেশি ব্যবহার করা যাবে না বা বেশি গেম খেলা যাবে না-এটা কিন্তু একেবারই ঠিক নয়। বরং খেয়াল রাখুন, ফোনে যেন সব সময় চার্জ থাকে। বিশেষ করে, ডাউনলোড করার সময়ে।
২. এক সঙ্গে বেশি অ্যাপস বা প্রোগ্রাম খুলে রাখবেন না। সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুন। কোন কোন অ্যাপস ব্যাকগ্রাউন্ডে বেশি জায়গা নিচ্ছে সেগুলি বন্ধ রাখুন।
৩. র্যাম ও ক্যাশ পরিষ্কার রাখুন। অপ্রয়োজনীয় মেসেজ ডিলিট করুন। অ্যানিমেশন বন্ধ রাখুন। অপ্রয়োজনে ওয়াই-ফাই অফ রাখুন।
৪. স্মার্টফোনের এমন কভার নিন যেটা ফোনের তাপ শুষে নিতে পারবে। বাইরের তাপ যেন ফোনকে আরও গরম করে না দেয়। ফোনকে যতটা সম্ভব রোদ থেকে দূরে রাখুন।
৫. রাতে স্মার্টফোন চার্জে দিয়েই ঘুমিয়ে যাবেন না। এতে স্মার্টফোনের দীর্ঘস্থায়িত্ব যেমন কমে তেমনি ফোনটি গরম করে ফেলে। এভাবে প্রায়ই স্মার্টফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরণ হতে ও দেখা যায়।
৬. ব্রাইটনেস বাড়ালে ফোনটি গরম হতে পারে। ব্রাইটনেস না বাড়িয়ে বরং একটি গ্লেয়ার স্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৭. অনেক সময় এটি হতে পারে ভাইরাস ও ম্যালওয়্যারের জন্য।
৮. ফোনে হাই ইনটেনসিটি ক্যামেরা চালালে ও গরম হতে পারে।