ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘কোভিড-১৯’ প্রমাণ করেছে যে টেলিকম খাতকে ডিজিটাল প্রযুক্তি যেমন বিগ ডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, আইওটি ইত্যাদিতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে। টেলিকম খাত এখন আর কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। এটি ডিজিটাল বিশ্বের সুপার হাইওয়ে। বাংলাদেশ এই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে কোভিড-১৯ সৃষ্ট চলমান মহামারিকালীন বৈশ্বিক দুর্যোগে নাগরিক সমাজ, সরকার ও ব্যবসায়ীদের সহায়তার লক্ষ্যে করোনার ভয়াবহ প্রভাব ও এ বিষয়ে জরুরি করণীয় বিষয় নিয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, জিএসএমএ, ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন ও বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে একউচ্চ পর্যায়ের ভিডিও সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার রাতে এ ভিডিও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয়ে বৈঠক রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে।
বিশ্বের সব প্রান্তের ৩৫০ জন অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এতে অংশ গ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রী, কয়েকজন টেলিকম নিয়ন্ত্রক, টেলিকম অপারেটর ও টেলিকম ব্যবহারকারী ছিলেন। বুধবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোস্তাফা জব্বার তার মন্তব্যে বলেন, কোভিড ১৯ বিশ্ববাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে টেলিকম হচ্ছে বিশ্ববাসীর প্রাণশক্তি। কোভিড-১৯ প্রমাণ করেছে যে, টেলিকম খাতকে ডিজিটাল প্রযুক্তি যেমন বিগ ডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, আইওটি ইত্যাদিতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে। টেলিকম খাত এখন আর কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয় এটি ডিজিটাল বিশ্বের সুপার হাইওয়ে। বাংলাদেশ এই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।
বৈঠকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মন্ত্রী, নিয়ন্ত্রক, টেলিকম অপারেটর ও ভোক্তার কোভিড ১৯ কে কেন্দ্র করে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। কারা কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন ও ভবিষ্যতে তারা কী করতে চান সেসব বিষয়ে তারা আলোকপাত করেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোভিড মোকাবিলায় টেলিকম খাতের অবদান ফোরামকে অবহিত করা হয়। ফোরামকে জানানো হয় লকডাউনকালীন সময়ে মানুষকে ঘরে রাখা অপরিহার্য এবং এই সময়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নির্বিঘ্ন রাখতে তাদের জন্য টেলিযোগাযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা অনিবার্য।
সেই বিবেচনায় মোবাইল অপারেটরগুলোকে দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানির অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক কলসেন্টারে বিশেষ করে ৩৩৩, ১৬৬২৬৩ অথবা ১০৬৯৯ ইত্যাদির সংযোগ সক্ষমতা ব্যাপক পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
ভিডিও সম্মেলনে জানানো হয়, করোনাভাইরাস সংকটকালীন সময়ে ঘরে বসেই মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস ( এমএফএস) ব্যবহার করে মোবাইল ভ্যালেন্স রিচার্জ করার সুবিধা গ্রাহকদের রয়েছে। এমএফএসগুলোকে রিচার্জ সার্ভিস বিষয়টি অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউটিলিটি পরিষেবা ও শিল্প কারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন এমএফএসের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। এমএফএসগুলো ফি হ্রাসের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যবসা ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্টদের সহায়তার ফিনটেক ও ডিজিটাল ব্যবসায়িক প্লাটফর্ম অত্যন্ত কার্যকর ও শক্তিশালী করা হয়েছে।
ফোরামকে অবহিত করা হয়, বিগডাটা প্রয়োগের মাধ্যমে কোভিড সংক্রমণ বিস্তার রোধ এবং সচেতনতা তৈরিতে ডিজিটাল ম্যাপিং উন্নয়নে দেশের টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে।
বিটিআরসি, এটুআই ও এমএনও যৌথ উদ্যোগে কোভিড-১৯ বিষয়ক ডাটাবেস ও ডিজিটাল ম্যাপিং প্লাটফর্ম প্রস্তুত করছে। এর ফলে এলাকাভিত্তিক আক্রান্তের সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব হবে। ডিজিটাল ম্যাপিং সংশ্লিষ্টদের চিকিৎসা কাজের জন্য ও করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। জনসাধারণও ডিজিটাল এই ম্যাপ থেকে সংক্রমিত এলাকাগুলো এড়িয়ে চলতে পারবেন।
ফোরামকে আরও জানানো হয়, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কল সেন্টারে কর্মীদের অফিসে না এসে দূরবর্তী প্লাটফর্ম থেকে তাদের কাজ করার সুযোগ প্রদান করেছে, যা লাইসেন্সিং গাইড লাইনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। এ ছাড়া সরকার নিরবচ্ছিন্ন টেলিকম সেবা নিশ্চিত করতে টেলিকম সেক্টর বিশেষ করে টেলিফোন ইন্টারনেট সেবাকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যা একটি বড় হুমকি। গুজব প্রতিরোধে ও সঠিক তথ্য ডিজিটাল প্লাটফর্মে তুলে ধরার মাধ্যমে সরকার কাজ করছে বলে ফোরামকে অবহিত করা হয়।
বিশ্বের ফোরামের শীর্ষ সংস্থাসগুলোর নেতাদের আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এই ভার্চুয়াল সম্মেনটি তিনটি পৃথক অধিবেশনে তিনটি প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম অধিবেশনের প্রতিপাদ্য ছিল নেটওয়ার্ক রেজিলেন্স, দ্বিতীয়টি একসেস অ্যান্ড এফোরডেবিলিটি অব ডিজিটাল সার্ভিসেস এবং তৃতীয় অধিবেশনটির শিরোনাম ছিল কানেকটিভিটি অ্যান্ড বিগডাটা ফর বিজনেস কন্টিনিউয়েটি অ্যান্ড টু এড্রেস দি হেলথ ক্রাইসিস।
মন্ত্রী করোনা পরবর্তী এই খাতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে এখনই যথাযথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বেইলি রোড়ে অবস্থিত সরকারি বাসভবন থেকে আলোচনায় অংশ নেন মন্ত্রী।