ডিজিটাল কমার্স নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার কথা উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তিখাতের সবাই বলছিলেন। ই-কমার্স বা ডিজিটাল কমার্স নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সোমবার মন্ত্রিসভায় বৈঠকে এই নীতিমালার অনুমোদন দেয়া হয়।
দেশের শিল্প বিকাশ, রপ্তানি উন্নয়ন এবং আইসিটিসহ সংশ্লিষ্ট খাতসমূহে অধিকতর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা, ২০১৮’ তৈরী করেছে সরকার। কি আছে তাতে?
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ ও ক্ষেত্র সৃষ্টি, অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্বল্প খরচে লেনদেনসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার বিভিন্ন বিষয় এ নীতিমালায় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত নীতিমালার অধীনে বানিজ্য মন্ত্রণালয়/তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভঅগের অধীনে ডিজিটাল কমার্স সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় সেল গঠন করা হবে ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ করা হবে।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল কমার্স খাত সংশ্লিষ্ট ঝুকিসমূহ চিহ্নিতকরণ ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ডিজিটাল কমার্সে অংশগ্রহণে ক্রেতা-বিক্রেতার ভয়-ভীতি দূরীকরণ এবং আস্থা অর্জনের জন্য প্রচার প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি মেধাসত্বে ডিজিটাল কমার্স সংক্রান্ত বিষয়বস্তু অন্তর্ভূক্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দেশে শিল্প বিকাশ, রপ্তানি উন্নয়ন, আইসিটিসহ সংশ্লিষ্ট খাতে অধিকতর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এই নীতিমালা করা হচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল লেনদেন সহজ ও নিরাপদ করার বিষয়টি নীতিমালায় বর্ণনা করা হয়েছে।
পাইরেসি, হ্যাকিংসহ ডিজিটাল কমার্স খাত সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থাও করা হবে।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এটি ঐতিহাসিক কাজ হয়েছে। এখনও ভারতের মতো দেশ এই খাতের কোনো নীতিমালা চূড়ান্ত করতে পারেনি। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। সেখানে আজ আমাদের ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা অনুমোদন হলো।ডিজিটাল বাংলাদেশের অনেক বিষয়ের মতো আমাদের এই ডিজিটাল কমার্স নীতিমালাও পৃথিবী অনুসরণ করতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ডিজিটাল কমার্স খাত সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধের জন্য ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা, ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, ‘ডিজিটাল কমার্সের পরিধি এবং ডিজিটাল জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা মাধ্যম, মোবাইল অ্যাপস ইত্যাদি ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ায় বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশে শিল্প বিকাশ, রফতানি উন্নয়ন, আইসিটিসহ সংশ্লিষ্ট খাতে অধিকতর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এই নীতিমালা করা হচ্ছে।’
ডিজিটাল কমার্স সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেল গঠন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নীতিমালায় ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি রাখা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল লেনদেন সহজ ও নিরাপদ করার বিষয়টি নীতিমালায় বর্ণনা করা হয়েছে। পাইরেসি, হ্যাকিংসহ ডিজিটাল কমার্সখাত সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হবে।’
সচিব আরও জানান, নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল কমার্সে যারা অংশগ্রহণকারী ক্রেতা-বিক্রেতার ভয়ভীতি দূর করে এই খাতে তাদের আস্থা অর্জনের জন্য প্রচার-প্রচারণার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ই-ক্যাবের অভিনন্দন
ইক্যাবের পক্ষ থেকে ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা স্বাগত জানিয়ে বলা হয়, অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে আজ মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল কমার্স পলিসির অনুমোদন দিলেন। আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোস্তফা জব্বার এবং প্রতিমন্ত্রী পলক ভাইসহ আইসিটি বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাদের যাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এই পলিসিটি তৈরি হয়। উল্লেখ্য আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে, ই-ক্যাবের নেতৃত্বে আইসিটি বিভাগে ডিজিটাল কমার্স পলিসি তৈরি করার একটি প্রস্তাবনা দেই, যার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং অ্যাসোসিয়েশন সমন্বয়ে বেশ কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই ই-ক্যাব এবং বেসিসের সদস্যবৃন্দের যাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়। আজ দেশের ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির একটি মাইলফলক রচিত হলো।
বেসিসের অভিনন্দন
এদিকে ডিজিটাল কর্মাস নীতিমালা পাস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে অভিনন্দন জানিয়েছে বেসিস।
বিবৃতিতে বেসিস বলছে, ই-কমার্স খাতের বাজার সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এ নীতিমালার গুরুত্ব অপরিসীম। ডিজিটাল কর্মাস নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য ডিজিটাল কমার্স ব্যবসা পরিচালনার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা। এছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণে নীতিগত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি এ নীতিমালার অন্যতম উদ্দ্যেশ্য।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা আমাদের অগ্রসরমান ই-কমার্স খাতকে সুসংহত করবে। বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ই-কমার্স অনেক এগিয়ে গেছে। অনেক বৈশ্বিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান উপমহাদেশের ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেছে। নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হলে আমাদের স্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।