অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত ২০২০-২০২১ বাজেট বক্তব্য-এ বলেছেন প্রাতিস্থানিক সেবা প্রদান ছাড়াও মোবাইল ফোনে কোভিড-১৯ এর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান জোরদার করা হয়েছে।করোনা সংক্রমণ যাচাইয়ের জন্য একটি স্ক্রিনিং অ্যাপ এবং ভাইরাসের কমিউনিটি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জাতীয় কভিড-১৯ ডিজিটাল সারভেইল্যান্স সিস্টেম প্রস্তুত করা হয়েছে।
যে মোবাইল ফোন ব্যাবহার করে গ্রাহক এই কোভিড-১৯ সেবা নিবেন সেখানে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় গ্রাহক ১০০ টাকার কথা বা ডাটা ব্যাবহার করলে ২৫ টাকা সরকার জনগন থেকে নিচ্ছে ।এইবছরের বাড়তি সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ জনগন নয় বরং অপারেটরদের থেকে নেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
নতুন অর্থবছরে সেলুলার ফোন উৎপাদন ও সংযোজন শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধার মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। দ্রুত বর্ধনশীল এ খাতের সম্প্রসারণে এ সুবিধা আরো এক বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব আমরা স্বাগত জানাচ্ছি যার ফলে শিল্প আরও বিনিয়োগ বান্ধব হতে যাচ্ছে।
দেশের তরুণদের আত্মকর্মসংস্থানে তথ্য প্রযুক্তি বিকাশের কোন বিকল্প নেই।তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য প্রয়োজন সুদক্ষ আইটি কর্মী বা প্রোগ্রামার।অভিজ্ঞ প্রোগ্রামার দিয়েই নতুন নতুন সফটওয়্যার আর পরিসেবা প্রদান করে দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মদ্রা অর্জন করা সম্ভব। দেশের সফটওয়্যার ও সেবা খাতে রফতানি আয় বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ‘অনলাইনে ভ্যাট’ সেবাটি দিচ্ছে ভিয়েতনামের এফপিটি কর্পোরেশন নামক একটি প্রতিষ্ঠান।ভিয়েতনামের এই একটি প্রতিষ্ঠানই বছরে ২ বিলিয়ন ডলার এর সফটওয়্যার এবং সার্ভিস রফতানি করে ,আর সেখানে কাজ করে ৩৬০০০ কর্মী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ২০ জনকে আইসিটি ইন এডুকেশন লিটারেসি, ট্রাবল শুটিং অ্যান্ড মেইনটেনেন্স বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ এর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এই ধরনের প্রশিক্ষণ কতোটা যুক্তি-যুক্ত?এই প্রশ্ন অনেকেই করছেন। ২০২০ সালে এসে ‘বেসিক আইটি ট্রেনিং’ একাধারে সরকারের একাধিক মন্ত্রনালয়,অধিদপ্তর করাচ্ছে একই জেলার একই শিক্ষার্থীদের যার ফলে সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে।
লাস্ট মাইল ব্রডব্যান্ড নিয়ে বাজেটে নির্দেশনা নেই।এই করনাকালিন সময়ে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করার জন্য প্রথমেই দরকার দ্রুতগতির ইন্টারনেট। যা শহরাঞ্চলে থাকলেও গ্রামাঞ্চলে নেই। শহরাঞ্চলে ৫০০-৬০০ টাকার বিনিময়ে ব্রডব্যান্ড লাইনের কানেকশন নিয়ে আনলিমিটেড টাইম এবং আনলিমিটেড ডাটা অ্যাক্সেস করা যায়। তাই শহরাঞ্চলে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হওয়া খুবই সহজ যদি থাকে তার ল্যাপটপ বা স্মার্ট ডিভাইস। গ্রাম কিংবা দ্বীপাঞ্চলে এখনো ব্রডব্যান্ড কানেকশন নেই। ফলে শিক্ষার্থীদেরকে মোবাইল ডাটার উপর নির্ভর করতে হয় যা খুবই ব্যয়বহুল। অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এসব শিক্ষার্থীরা মোবাইল ডাটা ক্রয় করে যা খুবই অল্পসময়ের জন্য বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হয়।
উল্লেখ্য যে, একটি এক ঘণ্টার ভিডিও ক্লাসের জন্য প্রায় ৭০০-১০০০ মেগাবাইট ডাটা প্রয়োজন হয়।
ব্রডব্যান্ড সংযোগ আছে, সেবা নেই।অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছলেও সত্যিকার অর্থে ইন্টারনেটের সকল সুযোগ সুবিধা এখনো গ্রামবাসীরা ভোগ করতে পারছে না। ইন্টারনেট সেবার মানে গ্রাম ও শহরের মধ্যে চরম বৈষম্য বিদ্যমান।
আইটি অ্যানাবেল সার্ভিস হিসেবে ইন্টারনেট এর নাম সবার আগে আসে তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্টারনেট এর উপর ১৫% ভ্যাট দেশের শিক্ষা স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে।ব্রডব্যান্ড সংযোগ নির্ভর করে ফাইবার অপটিক মডেমের উপর এই ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো সময় উপযোগী দাবি।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, প্রতি ১০ শতাংশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পেনিট্রেশনের মাধ্যমে ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঘটে। আর প্রতি ১ হাজার ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ১০ জন কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান হয়।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ১ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৮.৭ শতাংশ বেশি। তথ্য প্রযুক্তির এই বাজেটকে দেশের আইটি গ্র্যাজুয়েটদের বিশ্বমানের আইটি প্রফেশনাল হিসেবে তৈরি করতে ব্যাবহার করলে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
মোঃ মোজাহেদুল ইসলাম
বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) এর সভাপতি