গোপনে ভিডিওর মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা (সার্ভিলেন্স সিস্টেম) বা সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন) এখন বেশ পরিচিত।একটু খেয়াল করে দেখবেন বাসায় ঢোকার মুখে বা ভবনের কোথাও না কোথাও গোলাকার এক ধরনের ক্যামেরা বসানো। এটা মূলত ডোম ক্যামেরা। এ ক্যামেরায় চারপাশের সব ঘটনা ও কার্যক্রম ধারণ হতে থাকে। বাজারে ডোম ক্যামেরা ছাড়াও বুলেট ক্যামেরা, ডল ক্যামেরা, ফিশ আই ভিশনসহ নানা রকম ক্যামেরা কিনতে পারবেন। বাজারে মূলত দুই রকম ক্যামেরার চাহিদা বেশি। ডোম ক্যামেরা ও বুলেট ক্যামেরা। ডোম ক্যামেরা সাধারণত আর্চওয়ে বা যেখানো লোকজন যাতায়াত করে সেখানে বসানো হয়। এর বাইরে দেওয়ালে বসানোর জন্য উপযোগী বুলেট ক্যামেরা। ছোট ছোট ডিভাইসে ডল ক্যামেরা বসানো থাকে। বিস্তারিত দেখার জন্য ফিশআই ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। এসব যন্ত্রের দামও হাতের নাগালে। এটা লাগানোও খুব সহজ। সেটআপ করে দেওয়ার জন্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। চাইলে একটি কক্ষে যেমন ছোট আকারের ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ যেমন আছে তেমনি বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের জন্য নিরাপত্তা সিস্টেম হিসেবে সিসিটিভি যুক্ত করার প্রকল্পও রয়েছে।
এখাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে নিরাপত্তা পণ্যের বাজার বড় হচ্ছে। বিশেষ করে দেশে সিসিটিভির বাজার বড় হচ্ছে। ২০১৩ সাল থেকে এর বাজার বাড়তে শুরু করে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।বর্তমানে বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ সিসিটিভির চাহিদা রয়েছে।
‘সিসিটিভি’ শব্দটি সাধারণত নজরদারি করার ক্যামেরার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে চল্লিশের দশকের পর থেকে সিসিটিভির ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৪২ সালে জার্মানিতে প্রথম সিসিটিভি ব্যবহৃত হয়। এই সিসিটিভি তৈরি করে সিমেন্স এজি। এই রেকর্ডিং তারের মাধ্যমে বা পিয়ার টু পিয়ার (স্বাধীন গ্রাহক থেকে গ্রাহকের মধ্যে যোগাযোগ) তারহীন যোগাযোগের মাধ্যমে সম্প্রচার করার সুবিধা ছিল। সেই সময়কার সিসিটিভির সঙ্গে আধুনিককালের সিসিটিভির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য চোখে পড়ে। আধুনিক সিসিটিভি নেটওয়ার্কে নজরদারির কাজের জন্য একসঙ্গে একাধিক ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ব্যাংক থেকে শুরু করে রাস্তা, অফিস, দোকান এমনকি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য বাড়িতেও সিসিটিভি বসানো হচ্ছে।
আধুনিক সিসিটিভি কিভাবে কাজ করে? মূলত নিরাপত্তা ক্যামেরার সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সরাসরি কাজ করে এ পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম। এতে প্রতিষ্ঠানের যেসব জায়গা গুরুত্বপূর্ণ, সেসব স্থানে ক্যামেরা লাগানোর পর সেটি ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় আনা হয়। ক্যামেরায় ধারণ করা চলমান ছবি মনিটরে দেখা যায় সরাসরি। পুরো কার্যক্রমটি পরিচালিত হয় একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে। সাধারণত সিসিটিভি শুধু তথ্য সংরক্ষণ করে, যা পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন হলেই ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সময়ে রিয়াল টাইম সার্ভিলেন্স মনিটরিং ব্যবস্থা নামে আরও উন্নত ব্যবস্থাও ব্যবহৃত হচ্ছে। এ কার্যক্রমে নিরাপত্তার বিষয়টি যে কেউ তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে পারেন। এ ব্যবস্থায় চাইলে নিজের স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেট থেকেও অ্যাপের মাধ্যমে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা সম্ভব।
গত কয়েক বছরে দেশে সিসিটিভির চাহিদা অনেক বেড়েছে। এখন অনেক কম খরচেই নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি সেট করা যায়। তাই অনেকেই এ সুবিধা নিচ্ছেন। নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন সবাই। সিসিটিভির সঙ্গে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির চাহিদাও বাড়ছে। ডিভিআর, স্টোরেজ, কেবল ও মনিটরের বিক্রি বেড়ে গেছে।
সিসিটিভি সলিউশনের চাহিদা রয়েছে। অনেকেই নিারপত্তার কথা ভেবে ক্যামেরা কিনছেন। অনেকেই করপোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাশাপাশি সলিউশন দিচ্ছেন। সিসিটিভি ক্যামেরার বাজারে নানা প্রকল্পে গ্লোবাল ব্র্যান্ড সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। তাদের কাছে দুই হাজার থেকে দুই লাখ টাকা দামের ক্যামেরা রয়েছে। একেক ক্যামেরার কার্যক্ষমতা একেক রকম। সাধারণত চার ক্যামেরা, আট ক্যামেরা সিস্টেম হিসেবে সেটআপ করা হয়।
স্মার্ট টেকনোলজিসের কাছে প্রতি মাসে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার সিসিটিভির চাহিদা রয়েছে এখন।শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। এর চাহিদা বাড়ছেই। এনালগ ক্যামেরা আর আইপি দুই ধরনের ক্যামেরার চাহিদা রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা অনেকে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বা সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার দিকে জোর দিচ্ছেন। এতে রাজধানীসহ সারা দেশে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার চাহিদা বেড়েছে।
ক্যামেরাগুলোর বেশির ভাগই চীন ও তাইওয়ান থেকে আসছে । বর্তমানে বাজারে হাইকভিশন,প্যানাসনিক, বোস, লিলিন, ডাহুয়া থেকে শুরু করে নানা রকম চাইনিজ ও তাইওয়ানিজ ব্র্যান্ড পাবেন। তবে বাজারের ৯০ শতাংশের বেশি পণ্য চীনে তৈরি।
দাম: ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা দামের সিসি ক্যামেরা আছে। এ ছাড়া এই ক্যামেরার তথ্য সংরক্ষণ করতে নানান যন্ত্রপাতি কিনতে হয়। এর মধ্যে ডিভিআরসহ চার ক্যামেরা সেটআপে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ পড়ে। সাধারণত চার, আট, ১২ ক্যামেরা হিসেবে সেটআপ করা হয়। একটি মনিটরে কয়েকটি ক্যামেরার ছবি দেখা সম্ভব। মনিটর, স্টোরেজ, ডিভিআর আলাদা কিনতে হয়। এক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী দামের হেরফের হয়।একেক প্রতিষ্ঠানের ইনস্টল করার খরচ একেক রকম।
কোথায় পাবেন: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রযুক্তিপণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি পাবেন। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ, স্টেডিয়াম মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, ধানমন্ডি, বনানী, কম্পিউটার সিটিসহ বড় বড় কয়েকটি শপিং সেন্টারে সিসি ক্যামেরার দোকান পাবেন।
১ comment
সিসিটিভি ক্যামেরা এখন খুবই গুরুত্ব পূর্ণ একটা পণ্য নিরাপত্তার জন্য। প্রতিনিয়ত এর ব্যবসায় বাজার ও সহজলভ্যতা বেড়েই চলেছে। আমরাই বাজারে অরিজিনাল পণ্য বিক্রি করি। কম দামে ১ নম্বর সিসিটিভি ক্যামেরা নিতে হলে অনুমোদিত ডিলারদের থেকে পণ্য কিনুন।