চলমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত নিম্নআয়ের প্রায় ৩৩ লাখ ৩৯ হাজার পরিবারকে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত বছর কোভিডের শুরুর দিকে ঈদের আগেও একইভাবে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ৩৪ লাখ ৬ হাজার দরিদ্রকে ‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার’ দেওয়া হয়।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সব মিলে ৮৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হবে।
প্রথমবার ‘নগদ’ ১২ লাখ ৯০ হাজার পরিবরকে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা দিয়েছিল। এছাড়া বিকাশের মাধ্যমে ১০ লাখ ৫৪ হাজার পরিবারকে আর্থিক সতায়তা দেওয়া হবে, যা মোট পরবারের ৩১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
গত বছর বিকাশ ৯ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর বিতরণ করেছিল। ডাচ বাংলা ব্যাংকের এমএফএস সেবা রকেট এবার সাত লাখ ৮৮ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পৌঁছে দেবে। আগেরবার তাদের অংক ছিল সাত লাখ ৬ হাজার।
আগের বার শিওরক্যাশ চার লাখ ৮০ হাজার পরিবারকে আর্থিক সতায়তা পৌঁছে দিলেও এবার যেহেতু তাদের সেবা বন্ধ হয়ে গেছে সে কারণে তাদের গ্রাহককেই এবার বাকি তিন অপারেটর মধ্যে ভাগ করে করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এক্ষেত্রে শিওক্যাশের চার লাখ ৮০ হাজার গ্রাহকের অর্ধেকটা দেওয়া হয়েছে ‘নগদ’কে, ৩০ শতাংশ বিকাশকে এবং ২০ শতাংশ রকেটকে। আগের বারের মতো এবারও পরিবার প্রতি আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
আবার গ্রাহকের আড়াই হাজার টাকা ক্যাশ-আউটের জন্যে যে খবর সেটিও গ্রাহক তার মোবাইলে পেয়ে যাবেন। ফলে গ্রাহকের বাড়তি কোনো খরচ হবে না। যে অপারেরের যে ক্যাশ-আউটের রেট সেই অংক সেই অপারেটর যোগ করে সুবিধাভোগীকে পাঠাবে। তবে এর বিপরীতে অপারেটরগুলো সরকারের কাছ থেকে প্রতি হাজারে ৬ টাকা হিসেবে আড়াই হাজার টাকা পাঠাতে ১৫ টাকা করে পাবে। ফলে বাড়তি যেটা লাগবে সেটা সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে দিতে হবে বলে জানা গেছে।
গতাবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের জিটুপি পদ্ধতিতে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এবারও প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে এই ভাতা বিতরণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ সহায়তা বিতরণ বিষয়ে ‘নগদ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, কোভিডের এই সময়ে উন্নত বিশ্বও যেখানে বেশি ট্যাক্স দেয় ব্যক্তিদেরকে বেশি সুবিধা দিয়েছে, সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র এবং কাজ হারানো মানুষের পাশে দাঁড়াতেই সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী। এখানেই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা। তাছাড়া ডিজিটাল সেবার প্রতিও তার বাড়তি আগ্রহের কারণে এখন ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে সরকারের অনুদান পেতে পারছেন তারা।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই যে, ‘নগদ’র সেবার প্রতি আস্থা রেখে আগের বারের মতো এবারও তিনি ‘নগদ’-কে সবচেয়ে বড় অংশটি বিতরণের দায়িত্ব দিয়েছেন।
‘আমারা মনেকরি, ‘নগদ’র সেবার সন্তুষ্ঠু হয়েই গত বছরের চেয়ে ‘নগদ’-কে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সব নিয়ম মেনে সবচেয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকারের দেওয়া তালিকা অনুসারে সব সুবিধাভোগীর কাছে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। ‘নগদ’ সব সময়েই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে সব কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে যে ধারাবাহিকতা এক্ষেত্রেও বজায় থাকবে। ‘নগদ’ সব সময়েই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে সব কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে যে ধারাবাহিকতা এক্ষেত্রেও বজায় থাকবে,’ বলেন তানভীর।
এদিকে কোভিডে কাজ হারানো পরিবারের পাশাপাশি গত ৪ এপ্রিল সংঘটিত ঝড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ৩৬টি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচেনার সুপারিশ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এ বাবদ ৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা (নাম, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর) প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।