আহসান রনি নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। বন্ধুরা তার নাম দিয়েছে ;১০০১আইডিয়ার রনি! সবসময় নতুন নতুন আইডিয়া যেন তার মাথায় ঘুরতেই থাকে। তবে অন্যদের থেকেথেকে রনি একটু ব্যতিক্রম। কারণ অনেকের মাথায় আইডিয়া থাকলেও খুব কম মানুষই পারেন সেই আইডিয়া বা প্ল্যানগুলোকে বাস্তববায়ন করতে, কিন্তু রনি পারেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আহসান রনি, ২০১৫ সালেবিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব ও অনুষ্ঠানে কাজ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কেন্দ্রীয়সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। সেই চিন্তা করেই থেমে থাকেননি। ক্যাম্পাসের অসাধারণ কিছু শিক্ষক, বড় ভাই-বোন, বন্ধু, ছোটদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় একটি সংগঠন হিসেবে কাজ করছে ডিইউসিএস। দেশে-দেশের বাইরে বিভিন্ন আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলায় ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে এই প্ল্যাটফর্মটি জিতেছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কার। কাজ করছে দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে। নিজের নানা সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভারত, ইন্দোনেশিয়াতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন আহসান রনি। শুধু তাই নয় ইন্দোনেশিয়ার ইয়্যুথ সামিটে বিশ্বের ২২টি দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে ;বেস্ট অ্যাকশন প্ল্যান; অ্যাওয়ার্ড জিতে দেশের পতাকা উড়িয়েছেন বিশ্বদরবারে, সারা পৃথিবীর সামনে গর্বিত করেছেন বাংলাদেশকে।
আহসান রনি লিখেছেন বইও। সেখানেও পেয়েছেন বিশাল সফলতা। ২০১৭ সালে ;অমর একুশে বইমেলা ২২ তরুণের জীবন সংগ্রাম ও অনুপ্রেরণার সত্যি কাহিনী নিয়ে তার সম্পাদিত বই ‘দেখা হবে বিজয়ে সেবারের বইমেলায় অন্যতম ‘বেস্ট সেলার’ ছিল। এসব সফলতা থেকেই যেন আরও বড় কিছু করার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন এই তরুণ। তাইতো ২০১৭ সালে ভ্রমণপ্রিয় আহসান রনি আরও কিছু ভ্রমণপ্রিয় বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ট্রাভেল বাংলাদেশ; নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
আহসান রনি জানান, বিভিন্ন আয়োজন ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে গিয়ে খেয়াল করেছেন,এসব দেশগুলো তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, উৎসব, দর্শনীয় স্থান, খাবারগুলোকে তাদের দেশ ও অন্য দেশের মানুষের সামনে যত সুন্দরভাবে তুলে ধরে ও প্রচার করে; যা বাংলাদেশে হচ্ছেনা। আমাদের শ্যামল প্রকৃতি, নদী, সমুদ্র, পাহাড় ও খাল-বিলের অপরূপ সৌন্দর্য বিদেশিরা তেমনভাবে জানেন না। দেশের মানুষজনও নিজের দেশের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে তেমন জানেন না বা জানার সুযোগ পান না।
ট্রাভেল বাংলাদেশ নিয়ে বলতে গিয়ে আহসান রনি বলেন,ট্রাভেল বাংলাদেশ (www.travelbd.xyz) মূলত এমন একটি ট্রাভেল প্ল্যাটফর্ম যা বাংলাদেশের ৬৪ জেলার প্রতিটি স্থানের ইতিহাস,ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, দর্শনীয় স্থান, স্থানীয় খাবার, উৎসব, ভ্রমণ গল্প, থাকার জায়গাসহ দেশের বাইরের ভ্রমণ বিষয়ক সকল তথ্য দিয়ে থাকে। বাংলা, ইংরেজি লেখা এবং ভিডিও-র মাধ্যমে ট্রাভেলারদেরকে ভ্রমণে আগ্রহী করে তোলা, সাহায্য করা, তাদেরকে পরিবেশ বিষয়ে সতর্ক করার কাজ করে।
শুধু ট্রাভেলারদেরকে নয় বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সী, ট্যুর অপারেটর, রিসোর্ট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য ট্রাভেল প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যবসার প্রসারের জন্য বাংলা-ইংরেজী কনটেন্ট, ভিডিও মেকিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, আইটি ও কনসালটেন্সি সেবা প্রদান করছে ট্রাভেল বাংলাদেশ।
বর্তমানে দেশের ভ্রমণ বিষয়ক সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি ট্রাভেল বাংলাদেশ। সারা দেশে প্রায় ৫২ জনের বিশাল টিম রয়েছে ট্রাভেলবিডির। প্রতি মাসে ৫ লাখের অধিক মানুষকে ভ্রমণ তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে ট্রাভেল বাংলাদেশ। নতুন টিম নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ট্রাভেল বাংলাদেশ টিম ওয়াই-ওয়াই গোষ্ঠী ও ইএমকে সেন্টারের যৌথ উদ্যোগ আয়োজিত সামাজিক উদ্যোগ ইনকিউবেটর-২০১৮-তে সেরা উদ্যোগগুলোর একটি হিসেবে জায়গা করে নেয়। পরবর্তীতে দেশের অন্যতম সেরা স্টার্টআপ সাপোর্ট প্ল্যাটফর্ম স্টার্টআপ ঢাকা -এর ইনকিউবেটরেও জায়গা করে নেয় ট্রাভেল বাংলাদেশ। দেশের শীর্ষস্থানীয় স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ট্রেনিং নিয়ে ট্রাভেল বাংলাদেশ টিম এখন আরও পরিণত বলে জানালেন ট্রাভেল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আহসান রনি।
তিনি আরও জানালেন, সম্প্রতি সার্ক চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত স্টার্টআপ উদ্যোগদের নিয়ে আয়োজিত ক্যাম্পেও দেশের সেরা উদ্যোগগুলোর একটি হিসেবে অংশ নেয় ট্রাভেল বাংলাদেশ।
আহসান রনি জানালেন, সম্প্রতি দারুণ একটি অর্জন যুক্ত হয়েছে ট্রাভেল বাংলাদেশের মুকুটে। নেপালের কাঠমান্ডুতে সারা পৃথিবীর ট্রাভেল কোম্পানি ও অর্গানাইজেশনগুলোর অংশগ্রহণে দ্যা রিজিলিয়েন্ট কাউন্সিল ও নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের যৌথ আয়োজনে এশিয়ান রিজিলিয়েন্স সামিট ২০১৯-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে ট্রাভেল বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় ইন্টারন্যাশনাল ইস্টিটিউট ফর পিচ থ্রু ট্যুরিজম বা আইআইপিটি অ্যাওয়ার্ড ২০১৯-এ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেরা ভিন্নধর্মী ১২টি উদ্যোগের একটি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন পেয়ে এই আয়োজনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ট্রাভেল বাংলাদেশ।
আহসান রনি স্বপ্ন দেখতে ভালবাসেন এবং দেশের জন্য বড় ধরনের কিছু করার জন্য সবসময় কাজ করে চলেছেন। এই পথে প্রতিনিয়ত প্রচুর বাধাঁর সম্মুখীন হতে হয়; কিন্তু আহসান রনি আগেও থেমে যাননি, ভবিষ্যতেও থেকে যেতে চান না। দেশ থেকে যাত্রা শুরু করলেও ট্রাভেল বাংলাদেশকে একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে রুপ দেওয়ার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় এই উদ্যমী তরুণের।
নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে আহসান রনি
previous post