নতুন সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য গঠিত সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামের ক্যাবল বসাতে চাইছে ৪ কোম্পানি। ২০২০ সালের ৬ ও ৭ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে কনসোর্টিয়ামের কাছে দরপত্র দাখিল করার কথা রয়েছে খ্যাতনামা কোম্পানি সাবকমের। সি-মি-ইউ ৬ কনসোর্টিয়ামের সদস্য বাংলাদেশ। দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল হবে এর মাধ্যমে।
সিঙ্গাপুরে কনসোর্টিয়ামের দরপত্র মূল্যায়ন ও চূড়ান্তকরণ কার্যক্রমে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশও। দেশের ৩ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল যাচ্ছে এতে। ৬ থেকে ১৬ জানুয়ারির মধ্যে কোম্পানি বাছাই চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা কনসোর্টিয়ামের।
চলতি বছরের ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দরপত্র ডকুমেন্ট চূড়ান্ত করে কনসোর্টিয়াম। এরপর নভেম্বরে এই কোম্পানিগুলোকে দরপত্র ডকুমেন্ট দেয়া হয়।
সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ১৫টি অংশীজন ঠিক হয়েছে। এরমধ্যে চীনেরই আছে তিনটি কোম্পানি। শেষ নাগাদ এখানে হয়তো আরও দু’একটি কোম্পানি বা অংশীজন যোগ দিতে পারে।
দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল কার্যক্রমে যুক্ত টেলিযোগাযোগ বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলছেন, কনসোর্টিয়ামের সদস্যরা বিভিন্ন কমিটি ও গ্রুপে কাজ করে থাকে। যেমন সিঙ্গাপুরে প্রকিউরমেন্ট গ্রুপ কোম্পানিগুলোর অফার মূল্যায়ন করবে।
‘দরপত্র দাখিল করা কোম্পানির রেট ভাল হলে সার্বিক খরচও কমবে। কোনো জটিলতা না হলে সিঙ্গাপুরের এবারের বৈঠকেই কোম্পানি চূড়ান্ত করা হবে। আসলে কনসোর্টিয়ামের কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ কেমন করবে তা ঠিক হবে দরপত্রের রেট অনুযায়ী ব্যয়ের হিসাবের উপর’ বলছিলেন তিনি।
ওই কর্মকর্তা জানান, কোনো কোনো কোম্পানি বেশি বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। বিনিয়োগের এই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে এপ্রিলে। এর পর শুরু হবে মূল কাজ।
বাংলাদেশে সি-মি-উই ৬ হতে দুটি ডিরেকশনে ১০ টেরাবিট বা ১০ হাজার জিবিপিএস নিচ্ছে। একটি কক্সবাজার হতে সিঙ্গাপুরের দিকে আরেকটি কক্সবাজার হতে ফ্রান্সে দিকে। দুটিতেই ৫ টেরাবিট করে।
এই ব্যান্ডউথের জন্য একটি ফাইবার পেয়ারের অর্ধেক নেয়ায় বাংলাদেশের ৭০ হতে ৭৩ মিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হতে পারে বলে ধারণা নেয়া হচ্ছে। এটি নানা বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
কনসোর্টিয়ামে অংশীজন বেশি হলে খরচ কমবে। ১৫ জনের জন্য ৮ বা ৯ টা ফাইবার পেয়ার লাগবে। সেক্ষেত্রে অংশীজন যদি ২০টা হয় তাহলে এই ফাইবার পেয়ার লাগবে ১২টা। তখন খরচের বিষয়টি ভিন্ন হতে পারে। ক্যাবল বসানোর কোম্পানির রেটের বিষয় তো রয়েছেই।
সি-মি-উই (SEA-ME-WE) হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম ইউরোপের সংক্ষিপ্ত নাম। এই এলাকার মধ্য দিয়ে ক্যাবলটি স্থাপিত বলে প্রতিটি ক্যাবলের নামে এমনটা যুক্ত থাকে। যেমন সি-মি-উই ৪, সি-মি-উই ৫।
সর্বশেষ সি-মি-উই ৫ কনসোর্টিয়ামে এই এলাকার দেশগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, ইউএই, জিবুতি, মিসর, তুরস্ক, ইতালি, ফ্রান্স, মিয়ানমার, ইয়েমেন। এই ১৯ দেশ ১৯টি ল্যান্ডিং পয়েন্টের মাধ্যমে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
নতুন সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামের সদস্যরাও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম ইউরোপ হতেই যুক্ত হয়েছে।
দেশে এখন ১৪০০ জিবিপিএসের মতো ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে বলছে এ সংশ্লিষ্ট দপ্তগুলো। এরমধ্যে দ্বিতয়ি সাবমেরিন ক্যাবলে ৭০০ এর মতো (ক্যাবলটির ক্ষমতা ১৫০০ জিবিপিএস), ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল কোম্পানিগুলো আমদানি করছে ৩০০ এর মতো আর প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে আসছে ৪০০ জিবিপিএস।