বাংলাদেশে সবচেয়ে নারী বান্ধব প্রতিষ্ঠান বলে দাবী করলেও নারীদের হয়রানি শুরু করেছে দেশের সবচেয়ে বড় টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন। ২০১০ সালে কোম্পানীটি প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও ২০১৭ সালে তার পরিমান দাড়ায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা কোটি টাকা অথচ এসময়ে প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র স্থায়ী জনবল কাঠামোতে কর্মী সংখ্যা কমিয়েছে প্রায় ৩০০০। কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বললেও প্রতিনিয়ত জনবল কমানোর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি, যার প্রভাব পড়ছে দেশের কর্মসংস্থানে। মূলতঃ অটোমেশনের বা টেকনোলজী পরিবর্তনের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে গত কয়েক বছরে ৩জি ও ৪জি বাদে প্রকৃত কোন কারিগরী পরিবর্তন আসেনি টেলিযোগাযোগ খাতে। অথচ আউটসোর্সের আড়ালে টেকনোলজি পরিবর্তনের কথা বলে জনবল কমানোর এই খেলা অব্যাহত রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর শ্রম মন্ত্রনালয় সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপই নিচ্ছে না এই বিষয়ে।
গতকাল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে অফিস সময়ের পরে ই-মেইল দিয়ে ১৩ জন নারী কর্মীকে ঢাকার বাইরে বদলীর আদেশ জারী করে ঈদুল ফিতরের আগেই নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের আদেশ জারী করে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। ফলে অনেকেই যখন বাসায় পরিবারের জন্য ইফতার আয়োজনে ব্যস্ত, তখন সহকর্মীদের ফোন পান। দীর্ঘদিন কোম্পানীর জন্য কাজের এই মূল্যায়নে নারী কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে, গ্রামীণফোন এর কল সেন্টার ২০১৭ সালে দুইটি কোম্পানীর কাছে আউটসোর্স করা হয়। এর ফলে, সেবার প্রাপ্তির মূল্য না কমলেও একদিকে যেমন গ্রাহক সেবার মান কমেছে, অপরদিকে অনেক কর্মী হয়েছে চাকুরীহারা। কিন্তু যারা চাকুরী ছেড়ে যায়নি, তাদের চাকুরী ছাড়তে বাধ্য করতে এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিষয়টি অবগত হয়ে রাতে এক বিশেষ জরুরী সভায় গ্রামীণফোন এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ) মিলিত হয়। সভায় গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের এই ধরনের একতরফা সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। জিপিইইউ এর পক্ষ থেকে বলা হয়, নারী কর্মীদের প্রতি কোম্পানীর এই সিদ্ধান্ত অসম্মানজনক। জিপিইইউ নেতৃবৃন্দ আশংকা প্রকাশ করেন, কোম্পানীর এই সিদ্ধান্তকে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে, তাকে স্বেচ্ছা অবসরের নামে চাকুরী ছাড়তে বাধ্য করা হতে পারে। কোম্পানীটি সামাজিক দায়বদ্ধতা বা কর্মীদের প্রকৃত উন্নয়নে কাজ না করে শুধুমাত্র তার মুনাফার দিকে নজর দিচ্ছে এবং জিপিইইউ মনে করে, এই ধরনের কর্মকান্ড কোম্পানীর দীর্ঘমেয়াদে লোকসানের কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই, অবিলম্বে এই বদলীর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে একটি যৌক্তি সমাধানের দাবী জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গ্রামীণফোনের সাধারন কর্মীরা গত একমাসের বেশী সময় ধরে তাদের যৌক্তিক বেতন বৃদ্ধির দাবীতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছে। বিজ্ঞপ্তি।