ইন্টারনেট নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন দেশের ১২৮ জন তরুণ-তরুণী। এবার দেশের ৬৪ জেলায় ডিজিটাল জগতের ঝুঁকি ও নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করবে এই ‘যুব অ্যাম্বাসেডর’রা।
আজ শনিবার ‘সাবধানে অনলাইনে’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশ নেন যুব অ্যাম্বাসেডররা। মানিকগঞ্জের এইচআরডিসি ভবনে ওই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগো ফাউন্ডেশন এবং জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম টিকটক।
ইন্টারনেট আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অংশ হলেও এর সাথে রয়েছে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, হয়রানি এবং সাইবার অপরাধের মতো নানা ঝুঁকি। বিশেষ করে ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪৬৫ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৮৩৪ মিলিয়নে পৌঁছেছে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ায় নিরাপদ অনলাইন ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, জাগো ফাউন্ডেশন এবং টিকটক যৌথভাবে ‘সাবধানে অনলাইনে’ যুব অ্যাম্বাসেডর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করে।
প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ১২৮ জন যুব অ্যাম্বাসেডরদের ডিজিটাল জগতের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যুব অ্যাম্বাসেডররা নিজেদের কমিউনিটিতে এই জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পারবেন, যা একটি নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
ক্যাম্পের মূল লক্ষ্য ছিল অনলাইন নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, ইতিবাচক ও কার্যকর যোগাযোগের দক্ষতা উন্নয়ন, এবং টিকটকের ইন-অ্যাপ সুরক্ষা ফিচারগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি সচেতন ও দায়িত্বশীল ডিজিটাল প্রজন্ম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা হয়েছে, যারা নিজেদের কমিউনিটিতে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রচার চালাবে।
জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভি রাখসান্দ বলেন, “আধুনিক যুগে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে, ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটে বিভিন্ন নিরাপত্তা জনিত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তাই জাগো ফাউন্ডেশন এবং টিকটকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সচেতনতামূলক ‘সাবধানে অনলাইনে’ ক্যাম্পেইন। বাংলাদেশে তরুণ তরুণীদেরকে অনলাইনে নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করতে এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইতিবাচক দিক ছড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার এই ক্যাম্পেইন আয়োজন করা হচ্ছে। এই ক্যাম্পেইনের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা দেশের তরুণদের মধ্যে অনলাইন ভিত্তিক নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে সক্ষম হব। একই সঙ্গে ধন্যবাদ টিকটক কে এই চমৎকার উদ্যোগটিতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য।”
প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, “আমরা এই প্রশিক্ষণে অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হতে পেরেছি এবং আমাদের নিজ নিজ কমিউনিটিতে এই জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অনলাইনের ঝুঁকি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়ে আমরা নিজেদের এবং অন্যদেরকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হব।”
সাবধানে অনলাইনে প্রকল্প ম্যানেজার মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, “বর্তমান সময়ে তরুণরা দিনের একটি বড় অংশ পার করছে অনলাইনে। তাদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা গত দুই বছর ধরে ‘সাবধানে অনলাইনে’ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছি। এই বছর আমরা বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ২৫৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করব এবং জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরি করব।”
সাবধানে অনলাইনে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে নিরাপদ ও দায়িত্বশীল ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। টিকটকের সহায়তায় এবং জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের কার্যক্রমে, এই ক্যাম্পেইন বাংলাদেশে একটি নিরাপদ এবং ইতিবাচক অনলাইন পরিবেশ তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
জাগো ফাউন্ডেশন
জাগো ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক উন্নয়ন সংগঠন হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা, মানবাধিকার, যুব সমাজ উন্নয়ন, বাল্যবিবাহ রোধ, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধসহ বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে কাজ করছে। জাগো ফাউন্ডেশন, যুব সমাজ দ্বারা পরিচালিত অলাভজনক একটি শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করে আসছে। জাগো ফাউন্ডেশনের প্রধান লক্ষ্য সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের মূলধারার সাথে যুক্ত করে এই সমস্ত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা। জাগো ফাউন্ডেশন যুবকদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উন্নয়ন ও সচেতনতা নিয়েও কাজ করছে।