কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ৩ হাজার ৫০০ মেগাহার্টজের ফাইভজি স্পেকট্রাম নিলাম স্থগিত করেছে কানাডা। ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দেশটির নাগরিকরা যাতে প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারে, সেজন্য ছয় মাসের জন্য এ নিলাম স্থগিত রেখেছে কানাডার ইনোভেশন, সায়েন্স অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রণালয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে মন্ত্রণালয়টি। এ নিলামের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী বছরের ১৫ জুন। খবর রয়টার্স ও ইয়াহু ফিন্যান্স।
৩ হাজার ৫০০ মেগাহার্টজের এ স্পেকট্রাম ফাইভজি চালু করার জন্য কানাডার টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ব্র্যান্ড। এটি চালু হলে দেশটির স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সিনেমা ডাউনলোড করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা ফাইভজির মাধ্যমে রোবট, ডিভাইস ও সেন্সর ব্যবহার করে স্মার্ট ফ্যাক্টরি পরিচালন করতে পারবে।
ইনোভেশন, সায়েন্স অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টমন্ত্রী নাভডেপ বেইনস জানান, কভিড-১৯-এর এ সময় টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে কানাডার নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার ব্যবস্থাপনা আরো উন্নত করতে পারে, সেজন্য এ নিলাম স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে গত মার্চে ফাইভজি স্পেকট্রামের নিলামের জন্য আগামী ১৫ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়। তবে সেটি থেকে এখন সরে এসে এ নিলামের সময় আরো বাড়ানো হলো। আর মন্ত্রী বেইনস জানিয়েছেন, ৩ হাজার ৫০০ মেগাহার্টজের পাশাপাশি ফাইভজি নেটওয়ার্কের অন্যতম ব্র্যান্ড ৩ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজের বিষয়েও সরকার ভাবছে। আগামী আগস্টে এ বিষয়ে সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারে।
জানা গেছে, ৩ হাজার ৫০০ মেগাহার্টজের এ স্পেকট্রামের জন্য ৫৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার প্রারম্ভিক নিলাম মূল্য ধরা হয়েছে। যেখানে গত বছর ৬০০ মেগাহার্টজের স্পেকট্রাম নিলামে দাম উঠেছিল ৩৫৭ কোটি ডলার।
মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে বেইনস বলেন, কানাডার টেলিকমিউনিকেশন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ কঠিন সময়েও তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার কাজ করছে তারা। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্বেগ জানিয়েছে, যা আমলে নিয়ে তাদের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। টেলিকমিউনিকেশন খাতের সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে। যাতে করে তারা নাগরিকদের কম দামে আরো উচ্চ গতির নেটওয়ার্ক সরবরাহ করতে সক্ষম হয়।
সরকারের এ সহযোগিতার অংশ হিসেবে আগামী দুই বছরের জন্য তারবিহীন নেটওয়ার্ক সেবার মূল্য ২৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন বেইনস, যা আগামী মাস থেকে কার্যকর হবে।
এদিকে সম্প্রতি কানাডার দুটি টেলিকম প্রতিষ্ঠান টেলাস ও বেল ফাইভজি সরবরাহের জন্য নকিয়া ও এরিকসনের সঙ্গে কাজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে এরিকসনের সঙ্গে ফাইভজি সরবরাহের জন্য অংশীদার হিসেবে কাজ করছে দেশটির আরেক টেলিকম প্রতিষ্ঠান রগার্স।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা সীমিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করতে কানাডার ওপর চাপ তৈরি করেছে ওয়াশিংটন। গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন কানাডার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কানাডায় পঞ্চম প্রজন্মের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে হুয়াওয়ের সরঞ্জাম নিষিদ্ধ করা উচিত। ওই সময় কানাডায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোরামে অংশ নিয়েছিলেন রবার্ট ও’ব্রায়েন। আয়োজনে ৭০টি দেশের প্রায় ৩০০ শিক্ষাবিদ, সামরিক ও সরকারি কর্মকর্তার সামনে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, হুয়াওয়ের কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রের মতো কানাডার জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। ধারণা করা হচ্ছে, রবার্ট ও’ব্রায়েনের ওই বক্তব্যের জেরে ফাইভজি নেটওয়ার্ক নির্মাণে কানাডার দুই টেলিকম কোম্পানি নকিয়া ও এরিকসনের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে।
সম্প্রতি হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনায় নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। এর আওতায় মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে এমন প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিতে হবে। এর ফলে হুয়াওয়ে তাদের বিভিন্ন ডিভাইসের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় নিয়ে সংকটে পড়েছে।