পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো একজোট হয়েছে সরকারের ৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং আরো ৪টি সংস্থা। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু’র ছোবল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে উন্মোচন করা হয় ‘স্টপ ডেঙ্গু’ মোবাইল অ্যাপ।
শনিবার (১৭ আগস্ট) সকাল ১০টায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ জাতীয় স্কাউট ভবনের শামস্ হলে ‘পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই বহুপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ স্কাউটস্, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) , ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর, আইসিটি বিভাগের অধীনস্থ এটুআই প্রকল্প এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
চুক্তি অনুযায়ী পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংক্রমিত রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রযুক্তির সহায়তায় নাগরিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে যে যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান এমপি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর কমিশনার ও বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান।
এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও বাংলাদেশ স্কাউটস এর সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি বলেন, জানাকীর্ণ ও সংকীর্ণ হলেও আজকে যে অ্যাপটি উন্মোচন করা হচ্ছে তা জন সম্পৃক্ততায় বিশেষ অবদান রাখবে। কেবল ডেঙ্গু মোকাবেলায় নয়, সুস্থ্য নাগরিক জীবনের প্রয়োজনে আমাদের জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আজকে যে ডেঙ্গুকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে এটাই সব নয়। ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ও বায়ু ও পানি দূষণ থেকে নাগরিকদের সুরক্ষায় প্রযুক্তি জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। এসব বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে সকেলে মিলে কাজ করতে হবে।
এসময় নাগরিক সচেতনতায় পাঠ্য সূচিতে গরুর রচনার পরিবর্তে এডিশ মশা’র মতো সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মতো বিষয় সন্নিবেশ করার পরামর্শ দেন মন্ত্রী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় আজ থেকে আমরা রোভারদের মতো ‘তিন দিনে একদিন, জমা পানি ফেলে দিন’ স্লোগান দেশজুড়ে প্রত্যেকের মধ্যে ছড়িয়ে দেবো।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান এমপি বলেন, এবার ডেঙ্গু ব্যাপকতা পেলেও তা দুর্যোগ পর্যায়ে পৌঁছেনি। ন্যাশনাল গাইডলাইনের ফলে সব মানুষের জন্য এখন ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা ও চিকিৎসা এখন সুলভ হয়েছে। মূলত শক সিন্ড্রম নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসায় তাদের সুরক্ষা দেয়া কঠীন হয়ে পড়ে। তাই জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর কমিশনার ও বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান বলেন, আশির দশকে ডেঙ্গু আমাদের দেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছিলো। তখন ঢোল-কলমি গাছ কাটা হয়েছিলো। এখন জমা পানি এবং পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কথা হচ্ছে। অবশ্য এরপরও সম্প্রতি এটি মোকাবেলায় আমরা সমালোচিত হয়েছি। তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এই উদ্যোগ যেন ক্যামেরা ট্রায়েল না হয়। সম্মিলিত ভাবেই সচেতনতা গড়ে তোলার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবো।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও বাংলাদেশ স্কাউটস এর সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গু নিধনে দুই সিটি করপোরেশেনের পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং স্কাউট সদস্যরাও কাজ করছে চালাচ্ছে। আজকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সম্পাদিত এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে স্ব-স্ব প্রচেষ্টার সম্মিলিত উদ্যোগটি আরো সুচারু ও নিবিঢ় হলো। এর মাধ্যমেই আমরা আগামীর প্রজন্মের কাছে আরো একটু ভালো কাজ করে রেখ যাবো।
ই-ক্যাব বাংলাদেশ সভাপতি শমী কায়সার বলেন, গত দুই সপ্তাহ আগে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের এক হাজার সদস্যকে নিয়ে ডেঙ্গু সচেতনতায় সম্পৃক্ত হয়। কাজ করতে গিয়ে আমরা ডেঙ্গু সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনায় একটি অ্যাপের প্রয়োজনীয়তা বোধ করি। তথ্য-উপাত্ত ভিত্তিক সেবা দিতেই ‘স্টপ ডেঙ্গু’ অ্যাপের ম্যাপিং করা হয়। অ্যাপটি আগামীতে একটি হলিস্টিক ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ হিসেবে কাজ করবে। সাধারণ মানুষ যেন এটি সহজেই ব্যবহার করতে পারে সে দিকটায় খেয়াল রাখা হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর‘স্টপ ডেঙ্গু’নামে একটি বিশেষায়িত অ্যাপ প্রকাশ করা হয় ই-ক্যাব বাংলাদেশের সার্বিক তত্বাবধানে অ্যাপটি তৈরিতে কারিগরি সহায়তায় ই-পোস্ট ও বিডি-ইয়ুথ।
অনুষ্ঠানের অ্যাপটির ব্যবহার ও কার্যকারিতার ওপর আলোকপাত করেন ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। তিনি জানান,‘স্টপ ডেঙ্গু’ অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে যে কেউ সারা দেশের যে কোন স্থানে মশার প্রজনন স্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারবেন। এর মাধ্যমে পুরো দেশের মশার প্রজনন স্থানের ম্যাপিং তৈরি করা হবে। ফলে সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় সরকার খুব সহজেই কোন এলাকায় কত জন লোক নিয়োগ করতে হবে তা মশার জন্ম স্থানের ঘনত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে পারবে। মশা নিয়ন্ত্রণে কি পরিমান ঔষধ কিনতে হবে বা ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়টিও জানা যাবে অ্যাপটির মাধ্যমে। একইসঙ্গে পরবর্তী বছরের জন্য পূর্বের থেকে সতর্কতামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করা যাবে।
স্টপ ডেঙ্গু অ্যাপের উদ্বোধনের পর বাংলাদেশ স্কাউটের নির্বাহী পরিচালক আরশাদুল মোকাদ্দেস, ই-কমার্স বাংলাদেশ সভাপতি শমী কায়সার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সিইও মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সিইও আব্দুল হাই, ডাইরেক্টর হেলথ ডিজি আবুল কালাম আজাদ, হেলথ সার্ভিস ডিভিশনের অতিরিক্ত সচিব জাকিয়া সুলতানা, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন, এটুআই প্রকল্প পরিচালক মো: আব্দুল মান্নান এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মহসিন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে সই করেন।