সম্প্রতি সিরিজ ডি ফাইন্যান্সিং বা ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং-এ ২২৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগসহ মোট ৩০৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিতের পর বাংলাদেশে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এশিয়ার দ্রুত প্রবৃদ্ধিশীল ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস জিলিঙ্গো। বিটুবি ব্যবসায় প্রবৃদ্ধির অংশ হিসেবে বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিদ্যমান বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও নতুন বিনিয়োগকারীদের মাঝে রয়েছে সিকোয়া ক্যাপিটাল, তামাসেক, বার্দা প্রিন্সিপাল ইনভেস্টমেন্ট, সোফিয়ানা, সিঙ্গাপুর ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ইডিবিআই।
বিনিয়োগের এই অর্থ ব্যয় করা হবে সাপ্লাই চেইনের মান উন্নয়নে, পাশাপাশি বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামের প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায়। এছাড়া ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার বাজারসমূহে ব্যবসা সম্প্রসারণে বিনিয়োগের অর্থ ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
“আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করেছি ও অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বিশাল বাজার যা আন্তর্জাতিক বাজারে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। বিশ্বে তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নেতৃস্থানীয় একটি দেশ। বাংলাদেশের এই গৌরবে নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হবো বলে আমরা আশাবাদী।” বলছিলেন জিলিঙ্গোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অঙ্কিতি বোস।
তিনি আরও বলেন, “বিটুবি সোর্সিং ব্যবসায় নতুন অংশীদার তৈরির লক্ষে জিলিঙ্গো বাংলাদেশে কাজ করতে আগ্রহী, যা গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলোর সাথে এশিয়ার ব্যবসায়িক সংযোগ তৈরিতে সহায়তা করবে। বিভিন্ন পণ্য ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইকোসিস্টেম তৈরি করে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করতে চাই আমরা। ট্রেড ফাইন্যন্সিং ও অটোমেশন টেকনোলজি সংক্রান্ত পণ্য ও সেবা সরবরাহ করতে আমরা প্রস্তুত। মূলত আমাদের অভ্যন্তরিণ প্রাইভেট লেবেলের জন্য উপযুক্ত সোর্সিং খুঁজে বের করার ব্যাপারে আমরা বেশি আগ্রহী।”
অঙ্কিতি বোস ও ধ্রুব কাপুরের হাত ধরে ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল মার্কেটপ্লেস হিসেবে জিলিঙ্গোর যাত্রা শুরু হয় বিগত ২০১৫ সাল থেকে। শুরু থেকেই তারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাথে সরাসরি কাজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পান সেখানে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। যেখানে সব বড় ব্র্যান্ডসমূহ একই সময় নিজেদের সম্প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে প্রযুক্তিগত ও বিনিয়োগের অভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসায় লাভ তুলতে বা বৃদ্ধিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বড় ব্র্যান্ডগুলো বিপুল পরিমাণে পণ্য কেনার মাধ্যমে যেমন দামের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছাড়টি আদায় করে নিতে সক্ষম হচ্ছে, তেমনি ব্যবস্থাপনায় তাদের সক্ষমতার কারণে পুরো সাপ্লাইচেইন প্রক্রিয়াটিই দারুণভাবে সুফল বয়ে আনছে, এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অসম প্রতিযোগীতার মুখে পড়তে হচ্ছে।
এই অবস্থার উত্তরণে জিলিঙ্গো তাদের ব্যবসার মূল জায়গাটি কেবল মার্কেটপ্লেস সেবায় সীমাবদ্ধ না রেখে এশিয়ার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সমন্বয় করবার মাধ্যমে সোর্সিং-এ সহায়তা দিতে শুরু করে। জিলিঙ্গোর সেবা গ্রাহক মার্চেন্ট হওয়ার মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ডিজাইন, সেরা ক্রয়মূল্যে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা, উপযুক্ত লজিস্টিকস সুবিধা, আর্থিক সেবা, বীমা, ঋণ সুবিধা ও ব্যবসায়িক বিশ্লেষণ সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
অঙ্কিতি জানান, “শুধু মার্চেন্টদেরই নয়, আমরা ক্ষুদ্রতম প্রস্তুতকারকদের সাথেও কাজ করতে আগ্রহী। আইটেম প্রতি সর্বনিম্ন ২০০০ ইউনিট উৎপাদনে সক্ষম যেকোনো প্রস্তুতকারক আমাদের অংশীদার হতে পারবে। এটি সবার জন্যেই লাভজনক বলে আমরা মনে করি।”
জিলিঙ্গো, এর মার্চেন্ট ও প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে নিবিঢ়ভাবে কাজ করতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। এতে করে মালিকানা প্রযুক্তি ও বিশ্বব্যাপি অপার সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত করে তাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে এবং ‘ফ্যাশন ও বিউটি’ খাতে উৎপাদক, বিক্রেতা ও ভোক্তাসহ সকলের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।