রোবট সাধারণত বিভিন্ন কল কারখানাতে ব্যবহার করা হলেও, এবার রোবট বিজ্ঞানীরা রোবট ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি করে দিবে মাঠে ফসল তোলার কাজে। রোবট কম খরচে দ্রুত সময়ে বড় আকারের এই কাজ করতে পারলে কৃষকদের সুবিধা হতে পারে। কিন্তু এখনও এই কাজে মানুষের দক্ষতা বেশি। মিউনিখ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রে গবেষকরা সবজি চাষে বিপ্লব আনতে চান। এক রোবটকে দিয়ে ক্যাপসিকাম ফসল তোলানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো, ফসল অক্ষত থাকতে হবে।
বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ এবং ইসরায়েল ও চিলির সহযোগিতায় ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রথম প্রোটোটাইপ তৈরি হয়েছিল৷ মিউনিখ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টোবিয়াস ব্যার্নিঙার ও তাঁর সহকর্মীরা সেই প্রোটোটাইপের সাহায্যে ল্যাবে অনুশীলন করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে আমাদের রোবটের সামনে হাত রয়েছে আর উপরে এক ভিশন-সিস্টেম রয়েছে৷ সেই চোখ ক্যাপসিকাম শনাক্ত করে৷ তারভিত্তিতে সিস্টেম রোবটের নড়াচড়া স্থির করে দেয়৷ তারপর রোবট গাছের কাছে গিয়ে ক্যাপসিকাম তুলে নেয়৷”
কিন্তু এই ফসল তোলা রোবট কি সত্যি মানুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জিততে পারে? কমপক্ষে আদর্শ পরিস্থিতিতে সেটা সম্ভব হতে পারে। টোবিয়াস ব্যার্নিঙার বলেন, ‘ল্যাবের পরিবেশ সত্যি খুব ভালো। এখানে প্লাস্টিকের তৈরি ক্যাপসিকাম রয়েছে। তাদের সবার রং এক। কোনো পাতা তাদের ঢেকে রাখছে না। তাছাড়া সব ক্যাপসিকামের হুবহু একই বৃদ্ধির হার। বাস্তবে পরিস্থিতি এর ঠিক বিপরীত। কাছের বৃন্তগুলো একইরকম মোটা হয় না। কখনও সেগুলো গাছের খুব কাছে, কখনও দূরে থাকে। রং ক্যাপসিকামের থেকে আলাদা। যথেষ্ট আলো থাকে না, প্রায়ই ঝাপসা ও অন্যরকম মনে হয়।’ গাছপালার এমন জটিল জগতে এখনও পর্যন্ত চোখে দেখে নির্ভরযোগ্যভাবে শনাক্ত করার কোনো সিস্টেম না থাকায় রোবটকে হাতে করে চালাতে হয়।
ফসল তোলার এমন রোবটের প্রয়োজন কী? আসলে ফসল তোলার হাড়ভাঙা খাটুনির জন্য লোক পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। তাছাড়া এমন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ফসল তুলতে পারলে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে ব্যয় কমে যাবে, আরও ভালো করে পরিকল্পনা করা যাবে। ফসল তোলার কিছু রোবট উৎপাদনের উপযুক্ত হয়ে উঠেছে। যেমন একটি রোবট সেন্সরের সাহায্যে মাটির নিচে অ্যাসপারাগাস শনাক্ত করে তুলে নিতে পারে। ৭৫ জনের কাজ সে একাই করে ফেলতে পারে। নেদারল্যান্ডসের এক কোম্পানি আগামী বছরই এ রোবট বাজারে আনতে চলেছে।
মিউনিখের গবেষকরা এখনও এতটা অগ্রগতি হতে পারেননি। অর্থাৎ অর্থনৈতিকভাবে সফল হতে রোবটের অনেক দেরি আছে। এছাড়া এখনও ফসলের ক্ষতি এড়ানো যাচ্ছে না। রোবট ও মানুষের তোলা ফসলের মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট তফাৎ কী? বিশেষজ্ঞ হিসেবে উলরিশ কাল্টেনস্টাডলার বলেন, ‘দেখা যায়, হাতে তোলা ফসলে বৃন্ত অক্ষত রয়েছে। কিন্তু রোবটে তোলা বৃন্তে ছত্রাকের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। ছাঁটার রকমফেরের কারণে এমনটা ঘটছে। ছুরি হাতে কাটলে এবং রোবটের কাঁচি দিয়ে কাটলে এ তফাৎ দেখা যায়। বৃন্ত চেপটে গেলে ছত্রাক গজিয়ে ওঠে।’