প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ১০ হাজার ফাইজি বেইজ স্টেশন হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছে হুয়াওয়ে। সম্প্রতি লন্ডনে আয়োজিত ৯ম গ্লোবাল মোবাইল ব্রডব্যান্ড ফোরামেএ ঘোষণা দেয়া হয়।এ ফোরামেহুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান কেন হু ৫জি নিয়ে কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলেধরেন। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে হুয়াওয়ে ৫জি প্রযুক্তি নিয়ে ২২টি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এবারের মোবাইল ব্রডব্যান্ড ফোরামে সারা বিশ্ব থেকে মোবাইল টেলিকম অপারেটর, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার ২,২০০ নেতৃস্থানীয়ব্যক্তিবর্গ এবং বিশ্লেষকরা উপস্থিত ছিলেন।
হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান কেন হু বলেন, “সারা বিশ্বে প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটাতে চলেছে ৫জি। এটি সমগ্র আইসিটি ক্ষেত্রকেআরও শক্তিশালী করবেএবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। নতুনঅনেক সুযোগ তৈরিহবে যা আমরা আগে দেখিনি।সব দিক থেকে৫জি প্রযুক্তি সম্পূর্ণ সমাধান দিতে প্রস্তুত। এটি সাশ্রয়ীএবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটি এখন সময়ের চাহিদা। তবে অবশ্যই ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপনে কিছু বাধা অতিক্রম করতে হবে।”
হু আশাবাদ ব্যক্ত করে ৫জির মাধ্যমে আসন্ন পাঁচটি মৌলিক পরিবর্তন তুলে ধরেছেন।
১.৫জি সংযোগ একটি প্ল্যাটফর্মেরমতো হবে। ৫জি প্রযুক্তিতে তারবিহীন নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেসেরমাধ্যমে সবাই এবং প্রয়োজনীয় সবযন্ত্রাংশ ও জিনিসপত্রএকটি সীমাহীন, নিরবচ্ছিন্ন সংযোগেযুক্ত থাকবে।
২. সবকিছু অনলাইন হয়ে যাবে। এই মুহূর্তেআমরা দেখি বেশিরভাগ জিনিস অফলাইনে থাকে এবং অধিকাংশ ইলেকট্রনিক ডিভাইস একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে না।
৩.সারা বিশ্বক্লাউড প্রযুক্তিভিত্তিক হয়ে যাবে। ক্লাউডনির্ভর ৫জি প্রযুক্তিব্যাপক কম্পিউটিং ক্ষমতা এবং অত্যন্ত দ্রুত গতির তথ্য স্থানান্তর নিশ্চিত করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্নএই প্রযুক্তি সর্বত্র ও সবার কাছে ‘অন-ডিমান্ড’পৌঁছে যাবে। নতুন নতুন ব্যবসাক্ষেত্র আবির্ভূত হবে।
৪. ডিভাইসগুলো পুরোপুরি বদলে যাবে। ডিভাইস, নেটওয়ার্কএবং ক্লাউড, সব কিছুআর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর সাথে জুড়ে এমন এক ব্যবস্থা তৈরি হবে যার ফলে ডিভাইসগুলি ‘প্লাগ এন্ড প্লে’ থেকে হয়ে যাবে ‘প্লাগ এবং থিংক’। কমান্ড অনুসরণ করে করে কাজ করার পাশাপাশি ডিভাইসগুলো নিজেরাই তাদের ব্যবহারকারীদের আরও ভালভাবে বুঝতে পারবে, কখন কী প্রয়োজন তা আগেই আন্দাজ করতে পারবেএবং আরো স্বাভাবিকভাবে আমাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে।
৫.প্রযুক্তি ব্যবহারকারীরা নির্বিঘ্নঅভিজ্ঞতা পাবে। বিদ্যমান নেটওয়ার্কগুলোতেগ্রাহকদের যে অভিজ্ঞতা হয় তা মোটেই সুখকর নয়। ফাইভজি আসার পর যখন সমস্ত জিনিস অনলাইন এবং ক্লাউডভিত্তিক হয়ে যাবে, তখন যে কেউ যে কোনো পরিস্থিতিতে সব সময় যে কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে নির্বিঘ্নপ্রযুক্তির সেবা পাবে।
অনুষ্ঠানে পরবর্তীতে বাণিজ্যিক চুক্তির ব্যাপারে হুয়াওয়ের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও ক্যারিয়ার বিজনেস গ্রুপের সভাপতিরায়ান ডিং বলেন, “এই চুক্তিই হুয়াওয়ের ৫জি প্রযুক্তির সক্ষমতা এবং তাদের উদ্ভাবনীসল্যুশনগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থা প্রমাণ করে।হুয়াওয়ে৫জি প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় উদ্ভাবনী সল্যুশন সরবরাহ করবে। আমরা ৫জি’র জন্য ২২টি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছি এবং ৫জি’র বাণিজ্যিক পরীক্ষা করার জন্য৫০টিরও বেশি ক্যারিয়ারের সাথে কাজ করছি। ব্যাপক বিনিয়োগ এবং ক্রমাগত উদ্ভাবনের মাধ্যমেসহজে,দ্রুতগতিতেওসাশ্রয়ীভাবেবিভিন্ন ক্যারিয়ারকে৫জি নেটওয়ার্ক চালু করতে সহায়তা করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিশ্বব্যাপী মোবাইল ব্রডব্যান্ড ফোরাম ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই বছরের গ্লোবাল মোবাইল ব্রডব্যান্ড ফোরাম শুরু হয় দুই দিনব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে। এসব বিষয়ের মধ্যে ছিলো বাণিজ্যিকভাবে ৫জি স্থাপনায়নতুন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি,এলটিই নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত পরিষেবাসমূহ, ডিজিটাল ইনডোর সিস্টেম, উদীয়মান প্রযুক্তিতে যারা সংযুক্ত নেই তাদের যুক্তকরণের উপায়, নেটওয়ার্ক অটোমেশন, সেলুলার ভেহিকল টুভেহিকল (C-V2X) নেটওয়ার্ক, ইত্যাদি।