ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গজিয়ে উঠেছে। চারদিকে বেকার ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অল্পের জন্য চান্স না পেয়ে অগত্যা অন্তরা কলকাতার সল্টলেকে একটা বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বিটেক পড়তে এসেছে। বর্ধমান জেলার দেবীপুর গ্রামের মেয়ে অন্তরা। সাজগোজের বাহুল্যহীন, সাদামাটা, বড় চুপচাপ সে। তাদের এই শহর কলকাতার মেসের আর সব মেয়েদের থেকে অন্তরা একটু আলাদা। ওর কালো চোখে দিঘির গভীরতা-অন্তরে সহস্র চিন্তনের আনাগোনা, তাই তো সে বিজ্ঞানের ছাত্রী হয়েও পড়ার ফাঁকে ফাঁকে গল্প, কবিতা লিখতে ভালোবাসে।
মেসে খাবার টেবিলে সবাই একসঙ্গেই খেতে বসে, কিন্তু কই অন্বেষাকে তো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। অন্তরা অন্বেষার রুমমেট ইলোরাকে জিজ্ঞেস করল,
—‘কী ব্যাপার, অন্বেষাকে তো দেখছি না, খাবে না?’
—‘না, ওর ল্যাপটপটা ক’দিন ধরেই ট্রাবল দিচ্ছিল, আজ একেবারেই কাজ করছে না, তারই শোকে ও অন্নজল ত্যাগ করেছে!’
—‘সত্যি, তোরা পারিসও বটে, চল তো গিয়ে দেখি।’
—‘আমি অনেক বুঝিয়েছি, তুই বরং সৃজিতাকে নিয়ে যা, দেখ ওর অনশন ধর্মঘট ভাঙাতে পারিস কি না।’
সৃজিতাকে নিয়ে অন্তরা গিয়ে দেখে অন্বেষা শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। দেখে হাসি পায় অন্তরার। হাসি চেপে অন্বেষাকে জিজ্ঞেস করে, ‘কী রে অন্বেষা কী হয়েছে? একটা যন্ত্রের জন্য এত যন্ত্রণা পাচ্ছিস?’
—‘তুই জানিস না, আমার সব ফ্রেন্ডসদের সঙ্গে সমস্ত কমিউনিকেশন অফ, কাউকে কানেক্টই করতে পারছি না, এভাবে কি বাঁচা যায়?’
সৃজিতা বলে ওঠে,
—‘জানি রে ল্যাপটপ ছাড়া জীবন একেবারে অচল, কিন্তু কী করবি বল? এখন তো বাবা-মায়ের থেকে দূরে থেকেও জীবন চালানো সম্ভব, কিন্তু ল্যাপটপ-মোবাইল ছাড়া তো ভাবাই যায় না বল!’
—‘ল্যাপটপের প্রসেসরটাই তো খারাপ হয়ে গেছে! সেটার তো অনেক দাম। মাসের মধ্যিখানে হাতে তেমন টাকাও নেই। আর এদিকে আমার তো ভালো মোবাইল সেটও নেই। নেট, ফেসবুক ছাড়া কি একটা দিনও কাটানো যায়?’
অন্তরা অভিভাবকের সুরে ধমকে ওঠে, ‘কাটানো যায় অন্বেষা। দেখ, কয়েক বছর আগেও কেউ ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন ইউজ করত না, সবাই কি তারা খুব একঘেঁয়ে দিন কাটাত? বরং আমাদের থেকে তারা অনেক শান্তিতে ছিল। নে, নে খাবি চল, এখন তো ফোর জি সেট খুব সস্তা হয়ে গেছে— ওই একটা কিনে আপাতত কাজ চালিয়ে নিবি।’
অনেক কষ্টে অন্বেষাকে অল্প কিছু খাওয়ানো গেল। নিজের রুমে এসে অন্তরার কেবলই মনে হতে থাকে যে, তাদের জেনারেশন কী ভয়ানক যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে— এর শেষ কোথায়? চিন্তাশীল অন্তরার মনে সৃজিতার কথাগুলো কেবলই ঘুরপাক খেতে লাগল। এদের কাছে বাবা-মা’র থেকেও আপন হল মোবাইল, ল্যাপটপ! অন্তরা বোঝাতে গেলে ওরা তো অন্তরাকে ব্যাকডেটেড বলে হাসাহাসি করবে। ওদের ভেতরের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো কেমন যেন ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে— কেমন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে ওরা।
অন্বেষার বাবা দীপকবাবু প্রাইভেট ফার্মে অল্প বেতনের কেরানি। তবুও তাঁর যথাসর্বস্ব দিয়ে অন্বেষাকে প্রাইভেট কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছেন। কলেজে ভর্তির টাকা, প্রতি সেমিস্টারের ফিজ, মেসে থাকা-খাওয়ার খরচ জোগাতে দীপকবাবু একেবারে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু অন্বেষার সেদিকে হুঁশই নেই। বন্ধুদের নিয়ে ভালো রেস্টুরেন্টে খেয়ে, সিনেমা দেখে টাকার অপচয় করে সে। অন্তরা কতবার বারণ করেছে, কিন্তু কোনও ফল হয়নি। বাবাকে ভুজুংভাজুং দিয়ে টাকা আনিয়ে বেশ ভালো একটা স্মার্টফোনের সেট অন্বেষা কিনে ফেলল। ইদানীং ফেসবুকে একজনের সঙ্গে সম্পর্কটা তার অনেক দূর গড়িয়েছে। অদেখা, অজানা সেই বন্ধুর জন্যে তার প্রগাঢ় ভালোবাসা— অথচ তার মা বাড়িতে একটাও কাজের লোক না রেখে, হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে, দু-চারটে টিউশন করে মেয়ের পড়ার খরচ জোগাতে দীপকবাবুকে সাহায্য করছেন। বছরখানেক আগে অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়ার ফলে অন্বেষা যখন লিভার এনলার্জড হয়ে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, তাকে দুর্গাপুরে তার বাড়িতে দিতে এসে অন্তরা অন্বেষার বাড়ির সব কথা জানতে পারে। বর্তমানে তাঁর বাবা-মায়ের ভবিষ্যৎ ভেবে অন্তরা শঙ্কিত হয়।
সারাক্ষণ মেসের অন্য সব মেয়েরা ফেসবুকে আর হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটিং করলেও অন্তরার সব থেকে বড় বন্ধু তার দিদি সঞ্চারী। সঞ্চারী মোটে দু’বছরের বড় তার থেকে। সুগায়ক অপূর্ববাবু শখ করে গানের স্তবক বিশেষের নাম দিয়ে নাম রেখেছেন মেয়েদের। তা সঞ্চারী মুখ রেখেছে বাপের, তার মিষ্টি গলার গান শুনে অতি বড় নিন্দুকও প্রশংসা না করে পারে না। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও অপূর্ববাবু অন্তরাকে গানের ধারে কাছে আনতে পারেননি, তবে সে ভালো গান লেখে।
তার লেখা গল্প-কবিতা ইদানীং বেশ নামী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সুখের মিষ্টি সংসার অন্তরাদের। ঠাকুমার বড় আদরের নাতনি সে, তাই বাড়ি ছেড়ে মেসে থাকতে অন্তরার বড় কষ্ট হয়। সব সময় বাড়ির জন্যে মনটা হু হু করে। বন্ধুরা তো হোম সিকনেস বলে খ্যাপায়। প্রতি সপ্তাহে না হোক পনেরো দিন অন্তর তার বাড়ি যাওয়া চাই-ই। যে সপ্তাহে যেতে পারে না, দিদি কিংবা বাবা-মা নিজেই হাজির হন। মেসের সবার জন্যে নাড়ু, মুড়ি, চালভাজা, নিমকি কত কী নিয়ে আসেন। আর আনেন তাঁদের বাগানের কত ফলমূল আম, কলা, পেয়ারা, লিচু, জামরুল, নারকেল, পেঁপে—আরও কত কী। আগে অন্তরার পূর্বপুরুষেরা জমিদার ছিলেন। এখনও বেশ কিছু জমি-জায়গা, পুকুর অবশিষ্ট আছে। সে সব দেখাশোনা করে আর বাড়িতে এবং দু-চার জায়গার গানের স্কুল থেকে অপূর্ববাবুর যা আয় হয়, তা দিয়ে অন্তরাদের ভালোভাবেই চলে যায়। সঞ্চারী কলকাতায় এলেই তাকে নিয়ে অন্তরা যায় বিভিন্ন জায়গায় অডিশন দেওয়াতে, নয়তো বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য যোগাযোগ করতে। অপূর্ববাবু সুগায়ক হওয়া সত্ত্বেও গ্রামে পড়ে থাকার জন্যে সঠিক মূল্যায়ন হয়নি, তাই অন্তরার ইচ্ছে সঞ্চারী দিকে দিকে নিজেকে মেলে ধরুক, তার দিদির গান সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ুক। সঞ্চারী স্বভাবে অন্তরার ঠিক উল্টো। ভীষণ আমুদে, সাজতে ভালোবাসে। তার মিষ্টি গান আর মজার মজার গল্পের ভক্ত মেসের সব মেয়েরাই। আসলে জেঠিমা টাইপের অন্তরার থেকে সঞ্চারীদিকেই তাদের বেশি পছন্দ। সঞ্চারী যখন অনেক চেষ্টার পর টিভি’র একটা ভালো চ্যানেলে গান গাইবার সুযোগ পেয়ে গেল, মেসের সব মেয়েরা আনন্দে নাচতে নাচতে সঞ্চারীর কাছে আবদার করল, ‘সঞ্চারীদি, এবার দেশের বাড়ির খাবার নয়, রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে হবে।’ অন্তরাও দারুণ খুশি। অন্তরারও একান্ত প্রচেষ্টা ছিল, এ যেন তারই জয়। তাই সে বলল, ‘দিদি, চল না সবাই মিলে কাল রবিবার বটানিক্যাল গার্ডেনে যাই, যাব যাব করে যাওয়া হচ্ছে না! শুনেছি ব্রাঞ্চিংপাম আছে, ভীষণ দেখার ইচ্ছে।’, রবীন্দ্রনাথের কবিতাটা একটু পরিবর্তন করে বলল, ‘তালগাছ পাঁচ পায়ে দাঁড়িয়ে/ সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে।’
সবাই কলকল করে বলে উঠল, ‘পাঁচ পা মানে?’ অন্তরা বলল, ‘আরে তালগাছের তো একটা মাত্র লম্বা স্টেম হয়, সেটাই আমরা দেখি, কিন্তু বটানিক্যাল গার্ডেনে পাঁচ-সাতটা কাণ্ডেরও বেশ ক’টা তালগাছ আছে।’
‘তুই কি করে জানলি?’ অন্বেষার প্রশ্ন।
—‘আরে তোরা তো নেটে কেবল সিনেমাই দেখিস, নেটে যে কত রকমের জানবার জিনিস আছে, তার ঠিক-ঠিকানা নেই।’ নন্দিতা বলে ওঠে, ‘জানি, বোটানিক্সে একটা বড় বটগাছ আছে।’
অন্তরা বলল, ‘সেটা তো একটা পাঁচ বছরের শিশুও জানে। কিন্তু ওই বটগাছটার কতগুলো গুঁড়ি আছে, ওই গাছটা কত পুরনো জানিস?’
—‘না বাবা অতসব জানি না।’
—‘আড়াইশো বছরের পুরনো ওই বিশাল বটগাছ, হাজার তিনেক গুঁড়ি আছে, কিন্তু আসল গুঁড়িটাই নষ্ট হয়ে গেছে।’
—‘তাহলে বেঁচে আছে কী করে?’
—‘এইটাই বটগাছের অ্যাডাপটেশন। গাছের ব্রাঞ্চ থেকে ঝুরিমূল বেরিয়ে মাটিতে পৌঁছলে ঠিক আসল স্টেমের মতোই গাছকে সাপোর্ট দেয়— তাই অরিজিনাল কাণ্ডটা না থাকলেও কোনও ক্ষতি হয় না গাছটার। বিশালতার জন্যে ওই বটগাছটার গিনেস বুকেও নাম আছে।’
সঞ্চারী বোনকে ভালোভাবেই চেনে— একবার তার আউট নলেজের ভাণ্ডার যদি খোলে তো সহজে শেষ হয় না। তাড়াতাড়ি বোনকে থামিয়ে বলে ওঠে,
—‘ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে ওখানে গিয়ে খাব, কী কেমন আইডিয়া? আউটিংও হবে, আমার খাওয়ানোও হবে— কি রাজি তো?’
সবাই এক বাক্যে রাজিই শুধু নয়, অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগল কখন সকাল হবে। পরদিন হইহই করে সবাই চলল শিবপুরে বটানিক্যাল গার্ডেনের উদ্দেশে। প্রোগ্রাম ঠিক হওয়ার পরেই অন্বেষা সেই রাতেই ফেসবুক ফ্রেন্ড কাজলকে ওই গার্ডেনের সেকেন্ড গেটে অপেক্ষা করার জন্যে বলে রাখল। অন্বেষা প্রাণের বন্ধুকে, চোখের কাজলকে চোখে না দেখে থাকতে পারছে না।
পরদিন সকালে বটানিক্যাল গার্ডেনে খাবার-দাবার প্যাক করে অন্বেষার তাড়ায় সবাই একটু তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেল। শুধু ব্রাঞ্চিং পাম আর বটগাছই নয়, কত কী যে তারা দেখল, একটা পুকুরে বিরাট পদ্মপাতার মতো ভাসছে জায়েন্ট লিলি, গাইড অন্তরা জানাল, এই পাতায় দেড়-দু’বছরের বাচ্চাও নাকি ভেসে থাকতে পারে। সরু, ছোট, লম্বা, বেঁটে নানান রকম বাঁশগাছ, দারুচিনি, হিং, মেহগিনি, রুদ্রাক্ষ, জয়িত্রী এসব অচেনা গাছ দেখতে দেখতে তারা ফার্নস হাউস দেখে পৌঁছল ক্যাকটাস হাউসে। নানান ফার্নস আর ক্যাকটাস দেখে তারা তো অবাক হয়ে গেল। কিন্তু পেটুক নন্দিতা সকালে একগাদা ব্রেকফাস্ট খেয়েও লাঞ্চ করার জন্যে তাড়া দিতে লাগল। খিদে অবশ্য সকলেরই পেয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে কখন যে তিনটে বেজে গেছে কেউ খেয়ালই করেনি। খাওয়ার পর সঞ্চারীর গান, অন্তরার স্বরচিত কবিতা, ইলোরার মজার মজার জোকস আর সবাইকার প্রাণখোলা হাসিতে আসরটা যখন জমে ক্ষীর হয়ে উঠেছে, ঠিক সেই সময় হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অন্বেষা ছুটল সেকেন্ড গেটের দিকে— সবাই তো মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। ইলোরা বলল, ‘চিন্তা করিস না, ওর ফেসবুকেশ্বর কদমতলার বদলে ওই সেকেন্ড গেটটায় আসবেন।’ তার বলার ঢঙে সবাই হো হো করে হেসে উঠল।
দ্বিতীয় গেটে হাঁপাতে হাঁপাতে অন্বেষা গিয়ে দেখল তার অদেখা বন্ধু দেখা দিতে আগেই চলে এসেছে। নীল জিনসের প্যান্ট আর ব্ল্যাক শার্টে কী অদ্ভুত সুন্দর লাগছে— এই দুটো রঙের কথাই তো তাকে জানিয়ে রেখেছিল কাজল, পিছন ফিরে থাকলেও অন্বেষা তার হৃদয়েশ্বরকে ঠিক চিনতে পেরেছে। কী ম্যানলি চেহারা, আর দাঁড়াবার স্টাইলটা কী দারুণ— যেন শাহরুখ খান। অন্বেষা কাজলের কাছে গিয়ে বলল, ‘হাই কাজল, আমি অন্বেষা, একটু দেরি হয়ে গেল— মানে’
—‘হাই অন্বেষা, একটু কেন, তোমার জন্যে আমি যুগ যুগ অপেক্ষা করতে রাজি আছি। আমিই তোমার ফেসবুকের কাজল।’
কাজল সামনে ফিরতেই অন্বেষা অবাক বিস্ময়ে দেখল যে কাজল পুরুষ নয়, পুরুষালি গঠনের এক নারী। প্রচণ্ড রাগে, হতাশায় অন্বেষা চিৎকার করে উঠল, ‘তুমি মেয়ে? আমাকে সেকথা ফেসবুকে ঘুণাক্ষরে জানাওনি কেন? হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাটিং-এও তো জানাতে পারতে একবার— লুকিয়েছিলে কেন, কেন, কেন? তুমি আমার কাজল হতেই পার না, কিছুতেই না’
—‘না গো অন্বেষা, আমিই তোমার সেই ফেসবুকের কাজল, আমি মেয়েদেরই ভালোবাসি। তোমার জন্যে এই রিং আর চেন গিফট এনেছি। চলো ওই গাছটার নীচে বসি।’
—‘না, না, না, কখনওই নয়। এ আমি চাই না, না—না, না।’
হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটতে ছুটতে কোনওরকমে অন্বেষা পৌঁছল বন্ধুদের কাছে। তারপর কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি বন্ধুরা অন্বেষাকে নিয়ে স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে গেল। অনেকক্ষণ পরে খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠে বসল অন্বেষা। কিন্তু ওকে ঠিক স্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া গেল না! ঘোরের মধ্যে প্রলাপ বকছে। কেন যে এমন হল বন্ধুরা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারল না। ডাক্তারকে সব জানাল। ডাক্তার বললেন, হঠাৎ ভীষণ মানসিক আঘাত আর বিরাট আশাভঙ্গ থেকে এরকমটা হয়েছে। সারবে, তবে সময় লাগবে। তিনি একজন সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। অন্তরাই ব্যবস্থা করে পরেরদিনই অন্বেষাকে সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে গেল। দুর্গাপুর থেকে অন্বেষার বাবা-মাও খবর পেয়ে চলে এসেছেন। ডাক্তারের পরামর্শে অন্বেষাকে নিয়ে তার বাবা-মা দুর্গাপুরে ফিরে গেলেন। এখন বাবা-মায়ের সান্নিধ্যই অন্বেষার সব থেকে বেশি দরকার, বলে দিয়েছেন সাইকোলজিস্ট। এবার কি সৃজিতারা মর্মে মর্মে বুঝতে পারল বাবা-মা ছাড়া জীবনটাই অচল?
লেখক: আজিজুল হাকিম, তথ্যপ্রযুক্তি লেখক
azizulhakim2021@yahoo.com