মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ফেসবুকের মুদ্রার সমালোচনা করছেন। ফেসবুকের হাতে এখন অনেক পাওয়ার। আবার যদি অর্থের পাওয়ার চলে যায় তবে অনর্থ হতে পারে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ক্রিপটোকারেন্সির ভক্ত নন। ফেসবুককে যদি লিবরা নামের ক্রিপটোকারেন্সি চালু করতে হয়, তবে তাদের ব্যাংকিং চার্টারের প্রয়োজন পড়তে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক টুইটে তিনি এসব কথা বলেছেন।
ফেসবুকের পক্ষ থেকে নতুন ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা চালুর পরিকল্পনা জানানোর পর থেকে অনেকেই এর সমালোচনা করছেন। সে তালিকায় এবার যুক্ত হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর আগে সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রধান, ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার জেরোম পাওয়েল, ফ্রান্সের অর্থনমন্ত্রী ব্রুনো লা মারি, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কার্নি ফেসবুকের লিবরার সমালোচনা করেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন ডলারের মতো নির্ভরযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য মুদ্রাই হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত মুদ্রা।
ট্রাম্প তাঁর টুইটে বলেছেন, ক্রিপটোকারেন্সি প্রকৃত অর্থ নয়। অনিয়ন্ত্রিত ক্রিপটো সম্পদ বেআইনি আচরণ, বিশেষ করে মাদক ও অন্যান্য অনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে পারে। ফেসবুক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যদি ব্যাংক হতে চায়, তবে তাদের নতুন ব্যাংকিং চার্টার খুঁজতে হবে এবং পুরোপুরি ব্যাংকিং নিয়মনীতির আওতায় আসতে হবে।
ফেসবুকের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের টুইট বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুকের এ মুদ্রা যদি মূলধারার লেনদেন পদ্ধতি হিসেবে ঢুকে পড়ে, তবে গ্রাহকদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি হবে। অনেকের বাজে খরচের অভ্যাস গড়ে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক আইনপ্রণেতা এ মুদ্রা আনার বিপক্ষে। সমালোচকেরাও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন।
কনসোর্টিয়াম সহযোগী, পেমেন্ট সেবাদাতা, ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি ও গ্রাহক কোম্পানিদের সঙ্গে নিয়ে নতুন মুদ্রা আনতে বেশ আটঘাট বেঁধে নেমেছে ফেসবুক। ২০২০ সালের প্রথমার্ধ্বে এ মুদ্রা আনার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ফেসবুকের লিবরা সবাইকে একটি ইলেকট্রনিক ওয়ালেটের সুবিধা দেবে। ফেসবুক বলছে, আন্তর্জাতিক সব মুদ্রার মূল্যমানের সঙ্গে সংগতি রেখে এই মুদ্রার মূল্যমান ধরা হবে। প্রচলিত মুদ্রা দিয়ে লিবরা কেনা যাবে।
ফেসবুকের এক শ্বেতপত্রে বলা হয়, লিবরার সঙ্গে ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্যের যোগসূত্র থাকবে না বলে তাদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হবে না। তবে ফেসবুকের পক্ষ থেকে লিবরা পেমেন্টের সঙ্গে ফেসবুকের বিভিন্ন পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ফেসবুকের। ফেসবুকের এসব পণ্য কয়েক শ কোটি ব্যবহারকারী নিয়মিত ব্যবহার করছেন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিটকয়েনের মতো ক্রিপটোকারেন্সির সঙ্গে এর পার্থক্য হবে সহজলভ্য ও সহজে ব্যবহার করার সুবিধা। বিটকয়েন ব্যবহার করে বিভিন্ন বিল দেওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও সেবার দাম দেওয়া যাবে।
বিশেষজ্ঞ রস বলেন, লিবরা মূলত কোনো কিছু বিনিময়ের মুদ্রা বা কারেন্সি হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে। এটি বিটকয়েনের মতো কোনো বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। একে স্থিতিশীল ডিজিটাল ক্রিপটোকারেন্সি হিসেবে বর্ণনা করেছে ফেসবুক। এর পেছনে বাস্তব সম্পদের সম্পূর্ণ বিনিয়োগ থাকবে।
ফেসবুক বলছে, ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় ব্যাংক ডিপোজিট, স্বল্পমেয়াদি সরকারি নিরাপত্তার মতো বিষয় যুক্ত থাকবে। এতে অন্যান্য ক্রিপটোকারেন্সির মতো মুদ্রাস্ফীতি হবে না।
লিবরার উন্নয়নকারী ফেসবুকের ক্যালিব্রা বিভাগের প্রধান ডেভিড মার্কাস বলেন, ভবিষ্যতে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় তাঁরা নানা আর্থিক সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে ঋণদানের মতো বিষয়ও রয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁর অ্যাকাউন্টে যে লিবরা জমা রাখবেন, তার বিপরীতে ফেসবুক তাঁকে কোনো সুদ দেবে না। কিন্তু ফেসবুক গ্রাহকের জমা রাখা সেই লিবরা বিনিয়োগ করে তা দিয়ে আয় করা যাবে। কোটি কোটি গ্রাহকের জমা রাখা কোটি কোটি লিবরা লগ্নি করে ফেসবুক আয় করবে, কিন্তু সেই আয়ের কোনো অংশ গ্রাহক পাবেন না।