ইবনুল করিম রূপেন রিভ সিস্টেমসের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে ২০১৩’র সেপ্টেম্বরে এক্সিকিউটিভ পদে জয়েন করেন। তখন রিভের মূল ফোকাস ছিল আইপি টেলিফোনি। রূপেনের দায়িত্ব ছিলো আইপি টেলিফোনি প্রোডাক্টের জন্য কন্টেন্ট তৈরি করা, বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ সম্পর্কিত কাজগুলো সম্পাদন করা এবং পিআর ম্যানেজ করা। ধীরে ধীরে আরও দায়িত্ব যোগ হতে থাকে। এখন তিনি জ্যেষ্ঠ বিপণন ব্যবস্থাপক। ২০১৫তে অ্যান্টিভাইরাসের মার্কেট নিয়ে গবেষণা শুরু করে রিভ। এরপর রিভ সিস্টেমস যখন ‘রিভ আন্টিভাইরাস’ বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নেয় তখন থেকে রূপেন এর মার্কেটিং, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন।
ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস আপনার জন্য ক্ষতিকর
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অ্যান্টিভাইরাস বাজার কেমন?
বাংলাদেশে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তিন ধরণের ক্রেতা এখানে আছেন – সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং যারা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কেনেন। বাজারে বেশ ভালো কিছু ব্র্যান্ড এখানে প্রতিযোগী যাদের অভিজ্ঞতা অনেক বছরের।আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাচ্ছি যে এখনও বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারী আকারের প্রতিষ্ঠান সাইবার সিকিউরিটি নিয়েযথেষ্ট সচেতন নয়। অনেকেই বছরজুড়ে ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করছে, অনেকে করছেই না। ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের মধ্যেও এই সচেতনতাটা অনেক কম। এছাড়াও অনেক সময় প্রকিউরমেন্ট জটিলতায় লাইসেন্স নবায়নে অনেক বেশি সময় নিয়ে নিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এতে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। সংখ্যায় কম হলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারী প্রতিষ্ঠানের একটা অংশ অনেক বেশি সচেতন। নতুন কম্পিউটার কেনার সঙ্গে লাইসেন্সড অ্যান্টিভাইরাস কিনছেন এবং সঠিক সময়ে তা নবায়নও করছেন। ধীরে ধীরে এই সংখ্যাটা বাড়বে।
প্রশ্ন: অ্যান্টি ভাইরাস কি পিসি স্লো করে?রিভ কেন আলাদা? এর কি কি অনন্য ফিচার আছে?
যেকোনো পণ্যের ক্ষেত্রেই আপনি যখন নতুন কোনো ব্র্যান্ড নিয়ে আসবেন এর সাথে নতুন কিছু ইউনিক ফিচারও আপনাকে নিয়ে আসতে হবে। রিভ অ্যান্টিভাইরাসে বেশ কিছু ইউনিক ফিচার রয়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের মূল ফোকাস হচ্ছে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশ। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ কম্পিউটার ব্যবহারকারী ‘পিসি স্লো’ সমস্যার কারণে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে চান না। আমরা আমাদের ইঞ্জিনটি এমনভাবে তৈরি করেছি যেন এটি স্ক্যানের সময় অনেক কম রিসোর্স ইউজ করে এবং পিসিকে স্লো না করে। একই সাথে আমাদের ভাইরাস ডিটেকশন রেটও অনেক ভালো।
অন্যান্য অ্যান্টিভাইরাসের ক্ষেত্রে ‘ওয়ান ইউজার’ বলতে একটি কম্পিউটার বোঝানো হয়। কিন্তু আমরা জানি যে আকজন কম্পিউটার ব্যবহারকারী একটি স্মার্টফোনও ব্যবহার করেন। তাই রিভ প্রতিটি লাইসেন্সের সাথে একটি করে মোবাইল সিকিউরিটি ফ্রি দিচ্ছে। এই মোবাইল অ্যাপ থেকেই কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারে নজর রাখা যাবে এবং নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার তাঁর অফিসের কম্পিউটারে নজর রাখতে পারবেন এই অ্যাপ থেকেই, এমনকি বাবা-মা’ও তাদের সন্তানের অনলাইন ব্যবহার এই অ্যাপ থেকেই পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
খুব দ্রুত আমরা এন্ডপয়েন্ট সলিউশন বাজারে ছাড়বো। এতে একজন অ্যাডমিনের কন্ট্রোল প্যানলে অত্যাধুনিক মনিটরিং এবং কন্ট্রোলিং ফিচার রয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা এই প্রোডাক্ট নিয়ে দারুণ সাড়া পেতে শুরু করেছি।
বাংলাদেশে একমাত্র রিভ অ্যান্টিভাইরাস দিচ্ছে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা গ্রাহক সেবা, এমনকি ট্রায়াল ব্যবহাকারীদের জন্যও। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে ফ্রি ডেমোনস্ট্রেশন নিয়ে আমাদের প্রোডাক্ট যাচাই করে দেখতে পারেন।
প্রশ্ন: ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস কি ভালো?
আচ্ছা ধরুন, আপনার বাসায় একজন দারোয়ান নিয়োগ করা প্রয়োজন। কেউ একজন এসে যদি আপনাকে বলে যে ‘আমি দারোয়ানের চাকরিটা করতে চাই এবং এর জন্য আমাকে কোনো টাকা পয়সা দিতে হবে না।‘ আপনি কি সেই ব্যক্তিকে চাকরিটা দেবেন? আপনি ধরেই নেবেন যে এই লোকের নিশ্চয়ই অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। ফ্রি দারোয়ান যেমন আপনার বাড়ির নিরাপত্তার জন্য সন্দেহজনক ঠিক একইভাবে ফ্রি অ্যান্টিভাইরাসও আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সন্দেহজনক।
ফ্রি অ্যান্টিভাইরাসের ডিটেকশন রেট গড়ে ৬৫%, যেখানে একটি ভালো মানের লাইসেন্সড অ্যান্টিভাইরাসে এই হার ৯৬% এর উপরে। ফ্রি অ্যান্টিভাইরাসের সিগনেচার হালনাগাদ থাকে না কখনোই, যেখানে লাইসেন্সড অ্যান্টিভাইরাস প্রতিদিন কয়েকবার করে সিগনেচার আপডেট করছে। এছাড়া ফ্রি অ্যান্টিভাইরাসে স্ক্যানিং ছাড়া তেমন কোনো ফিচার থাকে না বললেই চলে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে যে কেন এই ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস বাজারে ছাড়া হয়। অনেক ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারকারীদের কন্ট্যাক্ট ইনফরমেশন বিভিন্ন মার্কেটারদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। অনেকে আবার হাতিয়ে নিতে পারে অনেক ব্যক্তিগত তথ্য। তাই ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস আপনার জন্য ক্ষতিকর।
প্রশ্ন: ব্যবহারকারীর কি করা দরকার?
বিশ্বব্যাপী ভাইরাস, ম্যালওয়ার এবং র্যানসমওয়ার আক্রমণ বেড়েই চলেছে। আমরা আশংকা করছি বাংলাদেশেও বেশ কিছু বড় হামলার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং আমরা যদি সচেতন না হই বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছি। ক্ষুদ্র, মাঝারী কিংবা বৃহৎ প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তিগত ব্যবহারকারী – ডিজিটাল নিরাপত্তায় সময় দিতে হবে, বিনিয়োগ করতে হবে। উইন্ডোজ হালনাগাদ থাকতে হবে এবং লাইসেন্সড অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য নিয়মিত সিকিউরিটি ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করাও গুরুত্বপূর্ণ।