বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সবচেয়ে বড় সিএসআর প্রোগ্রাম ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার-২০১৮’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১০টার দিকে বেইজিংয়ে হুয়াওয়ের কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন আইসিটি মেধাবী শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানায় বেইজিং হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, সিডস ফর দ্য ফিউচার প্রতিযোগিতাটি মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যকর করার অংশ, যা ২০০৮ সালে শুরু হয়। এখনও পর্যন্ত বিশ্বের ১০৮টি দেশ ও অঞ্চলে সিডস ফর দ্য ফিউচার প্রতিযোগিতা চালু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত বিশ্বের ৩৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে চীনের শেনজেন-এ হুয়াওয়ের হেডকোয়ার্টারে শিক্ষা সফরে গিয়ে হাতে কলমে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এই প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য বিশ্বমানের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য নতুন নতুন আইসিটি মেধাবীদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করা।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হুয়াওয়ের কাস্টমার সল্যুশন ইনোভেশন অ্যান্ড ইন্টিগ্রিশন এক্সপেরিয়েন্স সেন্টারে (সিএসআইসি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১০ জন আইসিটি মেধাবী শিক্ষার্থীকে চ’ড়ান্ত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের চীনে নিয়ে যাওয়ার আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর সিএসআইসি সেন্টারে আয়োজিত এক গালা অনুষ্ঠানে তাদের সংবর্ধনা দেয় হুয়াওয়ে বাংলাদেশ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিডা চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সব সময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করে, বিশেষ করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। ১৯৯৮ সাল থেকে হুয়াওয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। দুই দেশের এই দীর্ঘমেয়াদী সুসম্পর্ক হুওয়াওয়ে ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্য ফলপ্রসূ। বাংলাদেশের মানুষ যে মেধাবী এটা বিশ্বাস করায় আমি অন্তর থেকে হুয়াওয়েকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশ, যেটাকে এখন স্বর্ণের খনি বলা যেতে পারে। কারণ বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া ‘‘ভিশন-২০২১’’ বাস্তবায়ন করতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং সেসব প্রকল্পে নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আমি আশা করি দুই দেশের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিন বজায় থাকবে।’
বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মো. মাহফুজুল আলম খান বলেন, ‘আমি প্রথমেই শিক্ষার্থীদের সফলতার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তোমরাই আমাদের গর্বিত করেছো। ক্যারিয়ারকে আরও সামনে এগিয়ে নিতেই হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ তোমাদের চীনে নিয়ে এসেছে। সবসময় মনে রাখবে, উদ্ভাবনী বিজ্ঞানের জন্য আমাদের ভালো বিজ্ঞানী দরকার। আর ভালো বিজ্ঞানী হওয়া নির্ভর করে তাদের ভালো কাজের ভিত্তির ওপর। বিজ্ঞান ও নতুন নতুন উদ্ভাবনই আধুনিক বিশ্বের মূল চালিকাশক্তি। আর হুয়াওয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে এই চালিকাশক্তি তৈরি করছে, যা কোম্পানিকে পরিস্কারভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। অগ্রসারমান প্রযুক্তি, উন্নতমানের গবেষণা এবং সেবাই হুয়াওয়ের সফলতার মূলমন্ত্র। তাই হুয়াওয়ে তোমাদের যে সুযোগ দিয়েছে তার সৎব্যবহার করো।’
অনুষ্ঠানে হুয়াওয়ের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্টের বেইজিং অফিসের পরিচালক ঝাও জিয়াওবিন বলেন, ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার শিক্ষার্থীদের কারিগরি দক্ষতা এবং কর্মক্ষেত্রের দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। হুয়াওয়ে টেলিকম, আইটি এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রগুলোতে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করার জন্য একটি রোল মডেল হয়ে উঠেছে। আমরা আশা করি, উন্নত প্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আরও অনেক কোম্পানি আমাদের পদক্ষেপ অনুসরণ করবে।’
বিভিন্ন দেশে আরও আইসিটি প্রতিভা গড়ে তোলার জন্য ও আইসিটি প্রযুক্তিগুলো হাতেকলমে শিক্ষা দিতে এবং চীনা সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিতেই হুয়াওয়ে প্রতিবছর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করে থাকে।