মানু কুমার জেইন জানালেন, ছোট্ট একটা ঘরে যেখানে ৪-৫ জন বসতে পারে, এমনভাবে ভারতে যাত্রা শুরু হয় চীনের অ্যাপলখ্যাত শাওমির। বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর আগে তেমন এক গোপন বিষয় আছে। গোপন কথাগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশে খুব ছোট আকারে কাজ শুরু করছে শাওমি। বড় জোর ৪-৫ জনের মতো লোক নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু হবে। পরে বাজার বুঝে দেশে সংযোজন কারাখানাও করা হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে নিজের পরিকল্পনার কথা টেকজানোকে বলেছেন শাওমি ভারতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মানু কুমার জেইন ।
বাংলাদেশে শাওমির পরিকল্পনা
মানু কুমার জেইন: বাংলাদেশের বাজারে স্মার্টফোনের চাহিদা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ।দেশের বেশির ভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। বিশেষ করে শহর অঞ্চলের বাহিরের গ্রাহকরা ইন্টারনেটে যুক্ত থাকতে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের বদলে স্মার্টফোন বেশি ব্যবহার করেন। তাই আমাদের লক্ষ্য দেশের সব গ্রাহকরা যেন সাশ্রয়ী দামে উন্নত ফিচারের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন সেদিকে। আমাদের পরিকল্পনা গ্রাহককে ঘিরে এবং তাদের হাতে উন্নত স্মার্টফোন তুলে দেওয়া।
স্মার্টফোনের উদীয়মান বাজার হিসেবে বাংলাদেশ আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই শাওমির সব ধরনের পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের বাজারে আমরা স্থানীয় কোম্পানি হিসেবে ব্যবসা করতে চাই।
বিজ্ঞাপন ভাবনা
মানু কুমার জেইন: বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে স্মার্টফোনের বাজারের পরিধি বিস্ময়করভাবে বেড়েছে, একই সঙ্গে শাওমিরও একটি বড় বাজার তৈরি হয়ে গেছে। তবে আমরা এই বাজারের পরিমাণ আরো বাড়াতে চাই। বিশ্ববাজারের মতো বাংলাদেশের বাজারেও দ্রুত বর্ধনশীল কোম্পানি হিসেবে নিজেদের জায়গা করে নিতে চাই। উন্নতমানের পণ্য এবং দাম সাধ্যের মধ্যে থাকায় শাওমি খুব অল্প সময়েই মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। এতে করে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞাপন খরচও অনেক কমে গেছে। তাই বিজ্ঞাপনের পেছনে খরচ না করে ও নিজেদের লভ্যাংশ কম রেখে কম দামে ভালো জিনিস সবার হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। মাত্র ৫ শতাংশ লভ্যাংশ রেখেও বিশ্ব প্রযুক্তিবাজারে শাওমি এখন সবচেয়ে বেশি ক্রমবর্ধমান প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের স্থান অর্জন করে নিয়েছে।
ট্যাক্স কম হওয়া দরকার
মানু কুমার জেইন: হ্যান্ডসেটের ওপর বাংলাদেশে ট্যাক্স তুলনামূলকভাবে বেশি ভারত ও চীনের তুলনায়। আর যেহেতু এতদিন শাওমি লোকাল ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে বিক্রি হতো সে ক্ষেত্রে অফলাইন স্টোর, ডিলারশিপ ও স্টোরগুলো নিয়ন্ত্রণে বেশি ব্যয় হতো। তাই দাম বেড়ে যেত। এছাড়া শাওমি আগে বাংলাদেশ নিয়ে ততোটা ফোকাস ছিল না। এখন থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের মত দামে পাওয়া যাবে শাওমির সব ডিভাইস। বাংলাদেশের লাখ লাখ ফ্যানের জন্য আমরা শাওমির সর্বশেষ পণ্য সর্বনিম্ন দামে নিয়ে আসতে পারব। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সেজন্য এখানে একটি শক্তিশালী দল গঠন করা হবে।
ওয়ারেন্টি বা সার্ভিসিং
মানু কুমার জেইন: শাওমি সব সময় চেষ্টা করে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে। বর্তমানে শাওমির ফোন কিনলে গ্রাহকরা এক বছরের অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি পাবেন। দেশের গ্রাহকরা বাংলাদেশের সাতটি সার্ভিস সেন্টার থেকে এ সেবা নিতে পারবেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভারতে যখন শাওমি যাত্রা শুরু করে তখন মাত্র দুইটি সার্ভিসিং সেন্টার ছিল। কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশে প্রায় তিনগুণের বেশি সার্ভিসিং সেন্টার রয়েছে শুরু থেকেই। ধীরে ধীরে সেন্টারের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।
সংযোজন কারখানা
মানু কুমার জেইন: আগামী তিন মাসের মধ্যে শাওমি বাংলাদেশে অফিস নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বাংলাদেশে অবশ্যই আমরা ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা চালু করতে চাই। এই কাজটি করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। ভারতের প্রায় ২-৩ বছর পরে আমরা ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু করতে পেরেছি। আপাততো শাওমি স্মার্টফোন নিয়ে ফোকাস দেবে বাংলাদেশের বাজারে। আগামী কয়েক মাসে শুধু স্মার্টফোন ও অ্যাক্সেসরিজ বিক্রি করবে। এরপর ধীরে ধীরে শাওমির অন্য হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যগুলো আনা হবে।
শাওমির গোপন গল্প
মানু কুমার জেইন: ২০১১ সালের দিকে আমি জাবং ডটকম নামে একটি ই-কমার্স প্লাটফর্ম চালু করি। তখন ভারতের ই-কমার্স খাত ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছিল। পরবর্তীতে আরেক জনপ্রিয় ই-কমার্স প্লাটফর্ম ফ্লিপকার্ট জাবং ডটকমকে কিনে নেয়। সেই সময় ভারতে স্মার্টফোন বেশ জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। তখন চীনের প্রতিষ্ঠান শাওমি সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তারপর আস্তে আস্তে শাওমি প্রতি ভালোবাসা জাগতে শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আমি শাওমিতে কাজ শুরু করি।। শুরুর দিকে ভারতে এক রুমের একটি অফিস নেয়া হয় সেখানে আরো দুইজন কর্মী যুক্ত হয়। ধীরে ধীরে শাওমি ভারতে এগিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার কর্মী ভারত শাওমিতে চাকরি করে।
এস ২
মানু কুমার জেইন: এমআই এস২ সেলফির জন্য বিশেষভাবে তৈরি রেডমি এস২ ফোনটিতে রয়েছে এআই সুবিধা। সামনে ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা রয়েছে। যা দিনের আলো বিশ্লেষণ করে ছবি তুলতে সক্ষম। ফোনটিতে রয়েছে পিছনে ডুয়াল ক্যামেরা। এর একটি ১২ এবং অন্যটি ৫ মেগাপিক্সেলের। রয়েছে পোট্রেইট মুড এবং এআই বিউটিফাই সাপোর্ট। রেডমি এস২ ফোনের ৫.৯৯ ইঞ্চির ফুল স্ক্রিন ডিসপ্লে। কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। তিন জিবি র্যাম এবং ৩২ জিবি রম, চার জিবি র্যাম এবং ৬৪ জিবি রমের দুটি সংস্করণে বাজারে এসেছে এটি। এর দাম যথাক্রমে ১৪ হাজার ৯৯৯ টাকা এবং ১৭ হাজার ৯৯৯ টাকা। ২৬ জুলাই থেকে অনলাইন স্টোর দারাজে পাওয়া যাবে ফোনটি। ‘রেডমি এস২’ মডেলের ফোনটি আপাতত অনলাইন স্টোরে পাওয়া যাবে। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে অফলাইনেও পাওয়া যাবে। ভিসা কার্ডসহ কয়েকটি কার্ডের মাধ্যেমে ১০ শতাংশ ছাড়ে কেনা যাবে। এ ছাড়াও সুদবিহীন ইএমআই সুবিধাতেও কেনা যাবে ফোনটি। ফোনগুলোতে এক বছরের ওয়ারেন্টি সেবা পাবেন গ্রাহকরা।
বিশেষ কিছু
মানু কুমার জেইন: বাংলাদেশ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষ লোকবল তৈরি করা হবে। বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে এসে আমরা সর্বনিম্ন দামে (অনেস্ট প্রাইসে) ডিভাইস সরবরাহ করবো। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে দেশের বাজারে শীর্ষ স্থানে নিয়ে যেতে একটি শক্তিশালী দলও গঠন করবো। বাংলাদেশের লাখ লাখ শাওমি ফ্যানের জন্য আমরা সেবার পরিমাণ দিন দিন বাড়াতেই থাকবো। এর মধ্য দিয়ে একটা ভালো অবস্থানও করে নিতে চাই আমরা।
১ comment
[…] মাত্র ১৭ হাজার ৯৯৯ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে শাওমির ৪ জিবি র্যামের ফোন রেডমি এস টু । সম্প্রতি দেশের বাজারে এই ফোনটি বিক্রির ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে চীনের শাওমি। […]