শুনে কেমন লাগে, ইন্টারনেট গতিতে পাকিস্তান ও ভারতের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ! বাংলাদেশে মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গড় গতি দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম। ভারত ছাড়া প্রতিবেশী সব দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতি ১০ এমবিপিএসের (মেগা বিটস প্রতি সেকেন্ড) বেশি। আর বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতি মাত্র ৫ এমবিপিএস। অর্থাৎ ইন্টারনেটের গতিতে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএম অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) ‘বাংলাদেশ: কান্ট্রি ওভারভিউ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতির এ দুরবস্থার চিত্র উঠে এসেছে। গত রোববার এ প্রতিবেদন বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি খারাপ হওয়ার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে প্রতিবেদনে সামনে আনা হয়েছে। একটি হলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে দেরিতে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর-জি) ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়া।
বাংলাদেশে ফোর-জি সেবা চালু হয়েছে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে, আর এ প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের জন্য ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ফোর-জি সেবা চালুর ফলে আগামী বছর বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গড় গতির উন্নতি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ প্রতিবেদন এক বছর আগের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তৈরি হয়েছে। এক বছর আগে বাংলাদেশে ফোর-জি ছিল না। প্রতিবেদনে থ্রি-জি ইন্টারনেটের গতির সঙ্গে অন্য দেশের ফোর-জি ইন্টারনেটের গতির তুলনা হওয়ায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে। আগামী বছরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এমন অবস্থান থাকবে না।
তরঙ্গের স্বল্পতা ও দুর্বল অবকাঠামোর ব্যবস্থাকেও বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি কম হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রি-জি) ইন্টারনেট সেবা চালুর সময়েও মোবাইল ফোন অপারেটেরদের হাতে যথেষ্ট তরঙ্গ ছিল না। ফোর-জি সেবা চালুর পরেও এই অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নিলামে তরঙ্গের উচ্চ মূল্যকে দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
দুর্বল অবকাঠামোর বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবার প্রসারে সবচেয়ে বড় বাধা হলো দুর্বল অবকাঠামো। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় অপারেটররা এ বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী হয় না। অপারেটররা নিজেদের মধ্যে বিটিএস (বেস ট্রানসিভার স্টেশন), ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মতো অবকাঠামো ভাগাভাগি করে ব্যবহার করলে এ সমস্যার অনেকটা সমাধান সম্ভব।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর সংজ্ঞা এখন কোনো ভৌত সীমাবদ্ধতায় বন্দী নেই। বিশ্বব্যাপী অবকাঠামো ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা এখন একটি বাস্তবতা। কিন্তু একে অপরের ফাইবার অপটিক অবকাঠামো ভাগাভাগি করে ব্যবহার করার বিষয়টি বাংলাদেশে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিদেশি মোবাইল ফোন কোম্পানির উপনিবেশে পরিণত করা হয়েছে।
জিএসএমএর হিসাবে বাংলাদেশে প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন সাড়ে ৩ কোটি। এ হিসাবে বাংলাদেশে প্রতি ৫ জনে একজন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। যদিও সরকারের হিসাবে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৮ লাখ।
বাংলাদেশে নেটের গতি কি বাড়বে না?
previous post