ফরেন ইনভেস্টরস’ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এবং দেশে ব্যবসার সুযোগ আরো বাড়ানোর জন্য সরকারের অংশীদার হিসাবে কাজ করবে ফিকি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে আয়োগিত চেম্বারের ৬১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম)এ কথা জানিয়েছেন ফিকি সভাপতি জাভেদ আখতার।
সভায় উদ্বোধনী বক্তব্যে ফিকি সভাপতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে চেম্বারের ধারাবাহিক ভূমিকা এবং গত এক বছরে ফিকির অর্জন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। চেম্বারের সদস্য কোম্পানিগুলোর উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা স্বীকার করে তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য যৌথ প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
ফিকি সভাপতি বলেন, “চেম্বারের ৬১তম বার্ষিক সাধারন সভার সভাপতিত্ব করতে পেরে আমি সম্মানিত এবং আনন্দিত। বছরের শুরুতে আমাদের এ পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে বর্তমান মেয়াদের যাত্রা শুরু করেছিলাম। ফিকির সব সদস্যদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের প্রতি তাদের আস্থা আর ধারাবাহিক সহযোতিার জন্য। একটি ভাল ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, উদ্ভাবনীমূলক আইডিয়া এবং প্রতিশ্রুতিই ফিকির ক্রমাগত সাফল্যের পিছনে চালিকাশক্তি হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য, দক্ষতা এবং দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে, আমি নিশ্চিত যে আমরা একটি সমৃদ্ধ ও স্থিতিস্থাপক বাংলাদেশ গড়ে তুলব- যেটি শুধু বিনিয়োগের বৈশ্বিক কেন্দ্রই নয় বরং উদ্ভাবন, অন্তর্ভুক্তি এবং টেকসই উন্নয়নের উদাহরন হবে এবং পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা নিয়মিত সরকার এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে আমাদের যোগাযোগ বজায় রাখি। বর্তমান সরকারের সাথে বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় আমরা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের চারটি মূল ক্ষেত্র: আইন-শৃঙ্খলা, জ্বালানি নিরাপত্তা, লেভেল প্লেুয়িং ফিল্ড এবং পূর্বাভাসযোগ্য বা আগে থেকে অনুমানযোগ্য নীতিমালার বিষয়ে জোর দিচ্ছি।
নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা এবং একটি ইতিবাচক আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্য কার্যকর আইন-শৃঙ্খলার পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী, এবং টেকসই জ্বালানি মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয় ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। বহুজাতিক কোম্পানিগুলিকে তাদের বাজারের শেয়ারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর প্রদানের সময় স্থানীয় আইন ও প্রবিধান মেনে চলার জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রয়োজন। সেই সাথে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করতে এবং বাংলাদেশে অনুমানযোগ্য বিনিয়োগের ভবিষ্যত শক্তিশালি করার জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদী নীতি প্রয়োজন।”
সমাপনী বক্তব্যে ফিকির সহ-সভাপতি ইয়াসির আজমান চেম্বারের সস্যদের এই পরিচালনা পর্ষদের প্রতি অবিচল সমর্থন এবং বিশ্বাস রাখার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের জন্য এ্যাডভকেসি করার জন্য চেম্বারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেন। সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে বৈশ্বিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ফিকির নেতৃবৃন্দকে ব্যবসায়িক অ্যাম্বাসেডর হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার উপর জোর দেন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে আরও অবদান রেখে সরকার ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অংশীদারিত্ব জোরদার করার আশাবাদ ও দৃঢ় সংকল্পের সাথে শেষ হয় ফিকির ৬১তম সাধারন সভা । অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চেম্বারের নির্বাহী পরিচালক টি আই এম নুরুল কবির, পরিচালনা পর্ষদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সদস্য কোম্পানিগুলোর অন্যান্য কর্মকর্তারা।
ফিকি সম্পর্কে
বাংলাদেশে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) ১৯৬৩ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ সার্বিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের ২১টি খাতে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া বিশ্বের ৩৫টি দেশের প্রায় ২১০টি সদস্য প্রতিষ্ঠান শীর্ষস্থানীয় চেম্বার ফিকির প্রতিনিধিত্ব করছে। ছয় দশকের এই গৌরবময় যাত্রায় চেম্বারের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের অভ্যন্তরীণ প্রায় ৩০% রাজস্ব আয়ে অবদান রাখছে এবং বাংলাদেশে ৯০% এর বেশি অভ্যন্তরীণ এফডিআই-এর প্রতিনিধিত্ব করছে।