সারাদেশে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে ৫ শতাধিক ভুয়া আবেদন ও শূন্যপদের তালিকা শনাক্ত করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করার পর ৩ শতাধিক ভুয়া আবেদন ও তালিকা জমা পড়লেও ২০০ শতাধিক আসনের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ কারণে এসব পদে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনটিআরসিএ।
জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪০ হাজার শূন্য আসনের বিপরীতে সারাদেশ থেকে প্রায় ৩০ লাখ আবেদন জমা পড়ে। মেধা তালিকায় প্রথম থেকে ১৪তম নিবন্ধনধারী প্রায় ৭ লাখ আবেদনকারী গড়ে ৭টি করে আবেদন করেন। পাশাপাশি এবার এমপিওভুক্ত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের সুবিধামতো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে ৩৫ বছর বয়সসীমা শিথিল করে আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়।
এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, আবেদন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় ২ শতাধিক শুন্য আসনের হদিস পাওয়া যায়নি। পরে সেসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ভুলক্রমে হয়েছে জানিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। এ ছাড়াও ইনডেক্সধারীদের সুবিধামতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সুবিধা দিতে তাদের বয়সসীমা শিথিল করে শুন্যপদে আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়। অথচ অনেকে ইনডেক্সধারী না হলেও অন্যের ইনডেক্স নম্বর দিয়ে আবেদন করেছেন। এমন ৩ শতাধিক আবেদন শনাক্ত করা হয়েছে। এরপর সেসব আবেদন বাতিল করেছে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেন মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগের জন্য সারাদেশ থেকে পাওয়া প্রায় ৪০ হাজার আসনের মধ্যে প্রায় ২০০ শতাধিক আসনের হদিস পাওয়া যায়নি। পরে আমরা যোগাযোগ করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। ফলে সেসব পদে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ইনডেক্সধারী না হয়েও বেশ কিছু আবেদনকারী অন্যের নম্বর উল্লেখ করে আবেদন করেছেন। কেউ কেউ না বুঝে অফিস সহকারীর নম্বর উল্লেখ করে শিক্ষক পদে আবেদন করেছেন। এসব আবেদন শনাক্ত করে বাতিল করা হয়েছে।’
চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভুলের মাশুল আমাদের দিতে হচ্ছে। এ কারণে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কত শূন্যপদ রয়েছে তা সকল জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হবে। এজন্য দ্রুত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে এসব কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করা হবে। সেখানে এ-সংক্রান্ত বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হবে।’
কোনো প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত করার পর যদি সেখানে শূন্যপদ না থাকে তবে আবেদন বাবদ অর্থ সেই প্রার্থীকে ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান।
এনটিআরসিএর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ফলাফল তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে, বর্তমানে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। চলতি সপ্তাহে শিক্ষক নিয়োগ ফল প্রকাশ করা হবে। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশের পর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মেধা তালিকায় নির্বাচিত প্রার্থীকে এসএমএস পাঠানো হবে। পাশাপাশি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইলে এসএমএস ও ই-মেইল পাঠিয়ে নির্বাচিত প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে বলা হবে। ফলাফল প্রকাশের দুই থেকে তিনদিন পর থেকে যোগদান কার্যক্রম শুরু হবে।
উল্লেখ্য, বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৯ হাজার ৫৩৫ শিক্ষক নিয়োগ দিতে গত ১৮ ডিসেম্বর গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। ১৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইন আবেদন কার্যক্রম চলে। তালিকা অনুযায়ী প্রথম থেকে ১৪তম নিবন্ধিত চাকরিপ্রত্যাশী পৌনে সাত লাখ প্রার্থী প্রায় ৩০ লাখ আবেদন করেছেন। এ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করতে আদালতে ৮টি মামলা দায়ের করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
তথ্যসূত্র:জাগো নিউজ