কত প্ল্যান করে একেবারে নির্বাচন হওয়ার আগ মুহর্তে বন্ধ করা হল সব আয়োজন। একটি মাত্র চিঠিতে বন্ধ বেসিস নির্বাচন। এ নিয়ে #বেসিস বাচাও নামে মঙ্গলবার বিকেল থেকে একজোট হন অনেক বেসিস সদস্য ও প্রার্থীরা। সবার মুখে এক প্রশ্ন কারা ওই ১১ জন?কারা আছে এর নেপথ্যে। কাদের জন্য বানচাল হল আর কারা লাভবান হবে? এ নিয়ে ফেসবুক সরগরম।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত বেসিস তাদের এক চিঠিতে নির্বাচন বাতিল করেছে। একই সঙ্গে বর্তমান কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক আদেশে ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন বাতিল করে নতুন পুন:তফশিল ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছে। বেসিসের ১১ জন সদস্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ নির্দেশনা দেয়।
১১ জনের সঙ্গে কে আছে, কেনো হয়েছে, কোন কর্মকর্তা জড়িত আছে বা পেছনে কে আছে সব বের করা হবে
আদেশে বলা হয়েছে, ৩১ অক্টোবরের বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে নির্বাচনের পুন:তফসিল ঘোষণা করতে হবে। একই আদেশে বর্তমান কমিটিকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সময় দেওয়া হয়েছে। আর মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে ৬ মাস।
নির্বাচন বাতিলের খবর শুনে প্রতিবাদমুখর হন বেসিস সদস্যরা।মঙ্গলবার বিকলে কাওরান বাজারস্থ বিডিবিএল ভবনে সংগঠনটির কার্যালয়ে সদস্যরা জড়ো হয়ে এই ঘটনার জবাব চান এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তুলছেন। নির্বাচনে প্রার্থীসহ শতাধিক সদস্য কার্যালয়ে উপস্থিত হন। অনেকেই নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন চান। আবার অনেকে আশাহত।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর ফেইসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, বেসিস নির্বাচন নিয়ে ডিটিও থেকে পাওয়া চিঠি অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্খিত। বেসিস পরিবারের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য এই চিঠি উদ্দেশ্য প্রণোদিত। জরুরি বোর্ড সভা ডাকা হয়েছে। আইনি পরামর্শের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি বা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে আবেদন
- তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ও বাণিজ্য মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত
- আদালতে রিট
- নির্বাচনী প্রস্তুতি চলবে
এদিকে সবার উপস্থিতিতে একটি সভা হয়। তাতে বেসিস নির্বাচন বাতিলের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি বা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে আবেদন করবে বেসিস বলে সিদ্ধান্ত হয়। আবেদনে যদি চিঠি বা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে আদালতে রিট করবেন তারা। আর এসব প্রক্রিয়া এক দিনের মধ্যেই (বুধবার) করতে চায় বেসিস কার্যনির্বাহী কমিটি। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে বেসিস নেতৃবৃন্দ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এর সঙ্গে মঙ্গলবার রাতেই দেখা করবেন। মঙ্গলবার কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে শামীম আহসান, ফাহিম মাসরুরসহ সংগঠনটির কয়েকজন সাবেক সভাপতিও যোগ দেন। বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর জানান, বুধবার ডিটিওর কাছে আবেদন করা হবে। আপিলের অপশন আছে তবে এখন আপিল করা হবে না কারণে আপিল প্রসেসে গেলে সময় নষ্ট হতে পারে। তাই আবেদন করা হবে যে, চিঠিটা প্রত্যাহার করে নেয়া হোক।বেসিস সভাপতি বলেন, যদি এতে কাজ না হয় তাহলে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কোর্টে রিট করা হবে। এজন্য আজ রাত (মঙ্গলবার)এর মধ্যেই সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কোর্টে রিট করে বুধবারেই শুনানি করার চেষ্টা করা হবে, চিঠিটা স্টে করা করাবো। তিনি জানান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ও বাণিজ্য মন্ত্রীর সঙ্গেও বেসিসের ভাল সম্পর্ক। ওনাদের সঙ্গেও দেখা করা হবে। বুধবার যখন ডিটিওতে আবেদন করা হবে তখন ওনাদের রেফারেন্সে তখনই ওটা সলভ হয়ে যাবে। আমাদের রিট করতে হবে না। তারপরও আমরা প্রস্তুত থাকছি যদি কোনো কারণে সেটা না হয় তাহলে যেন দ্রুত রিট করতে পারি। ইলেকশন চালু আছে। বুধবার এমন সময়ের মধ্যে সব সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন ।আলমাস বলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি বোঝা গেছে, যে চিঠি দেয়া হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এই চিঠি ইস্যুর জন্য কাজগুলো সব এক দিনে করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২১ তারিখ কমপ্লেইন করা হয়েছে ২২ তারিখ চিঠি ইস্যু হয়ে গেছে। আর ২২ তারিখের চিঠি ইস্যুটা আমরা ২৭ তারিখ দুপুর বেলা পেলাম। তাও আবার বাই হ্যান্ড ডেলিভারি । আলমাস জানান, চিঠিতে যে কারণটা দেখানো হয়েছে তা ভ্যালিড নয়। এতে বলা হচ্ছে আমরা আরজেসিতে অনুমতি নেইনি। কিন্তু আরজেসিতে অনুমতির দরকার হয় না। এছাড়া ডিটিওর বই অনুযায়ী তাদের কোনো এখতিয়ার নেই নির্বাচন বন্ধ করার। বক্তব্য দিতে উঠে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান এস এম কামাল নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যেতে বলেন। সাবেক সভাপতি শামীম আহসান বক্তব্যে বলেন, বর্তমান ইসির দায়িত্ব সময়মতো নির্বাচন করা। নির্বাচন যদি পিছিয়ে যায় সে দায়িত্বও ইসিকে নিতে হবে । আর ইলেকশন কমিশন তাদের দায়িত্বের দিক হতে যা করার করছে বা করবে। ফরমালিটিসের দিক হতে রিট বা আপিল যা করার করবে।বেসিসের মতো সংগঠনের নির্বাচন বাতিলে সরকার বা ডিজিটাল বাংলাদেশকে বিব্রত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কাল-পরশুর মধ্যে সমাধান করা না যায় তাহলে টিম মেম্বারদের নিয়ে আন্দোলন , ডিটিওতে স্মারকলিপি দেয়াসহ সব আন্দোলনে তিনি সঙ্গে থাকবেন বলে ঘোষণা দেন ।এছাড় এ ধরণের কার্যক্রমে এই ১১ জনের সঙ্গে কে আছে, কেনো হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা জড়িত আছে বা পেছনে কে আছে সব বের করা হবে বলে তিনি প্রত্যয় প্রকাশ করেন।
বেসিসের নির্বাচন বন্ধ চেয়ে করা আবেদনে বেসিস সদস্য মধুমতি টেকের নাম চিঠিতে উল্লেখ আছে। শিগগিরই অন্যদের নাম প্রকাশ হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।