এশিয়ান হাইওয়েকে ধরে তৈরি হবে ইন্টারনেট মহাসড়ক। বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য হবে ১৭৬৮ কিলোমিটার। এশিয়ান হাইওয়েকে ধরে একটি আন্তদেশীয় ইন্টারনেট অবকাঠামো বা ইন্টারনেট মহাসড়ক তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এই ইন্টারনেট মহাসড়কের নাম এশিয়া-প্যাসিফিক ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে (এপিআইএস)। প্রস্তাবিত এ ইন্টারনেট মহাসড়ক এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩২টি দেশকে ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের মাধ্যমে সংযুক্ত করবে। এটির দৈর্ঘ্য হবে এশিয়ান হাইওয়ের সমান অর্থাৎ ১ লাখ ৪৫ হাজার কিলোমিটার। বাংলাদেশে এই মহাসড়কের দৈর্ঘ্য হবে ১ হাজার ৭৬৮ কিলোমিটার। এশিয়ান হাইওয়ের পাশ ঘেঁষে ইন্টারনেট মহাসড়ক তৈরির এ পরিকল্পনার মূল প্রস্তাবক বাংলাদেশ। গত বছরের ডিসেম্বরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসকাপ) স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের এ প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে ভারত, চীন, জাপানসহ এ অঞ্চলের সব দেশের প্রতিনিধিরা ছিলেন। বর্তমানে এ প্রকল্পের সমীক্ষা যাচাইয়ের কাজ চলছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাদেশ হওয়া সত্ত্বেও এ অঞ্চলের আন্তদেশীয় টেলিযোগাযোগব্যবস্থা মূলত সমুদ্রের তলদেশে স্থাপিত সাবমেরিন কেবলের ওপর নির্ভরশীল। এর স্থাপনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ভূগর্ভস্থ কেবলের তুলনায় অনেক ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে এশিয়ায় পাইকারি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথের দাম ইউরোপ ও আমেরিকার গড় দামের চেয়ে বহুগুণ বেশি।
এপিআইএস বাস্তবায়ন হলে এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্তদেশীয় স্থলপথভিত্তিক (টেরেস্ট্রিয়াল) ইন্টারনেট সরবরাহ ব্যবস্থা। এর ফলে এ অঞ্চলে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট-সেবা সহজলভ্য হবে। ব্যান্ডউইটথ বেচাকেনার আরও পাইকারি বাজার তৈরি হবে। এতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথের দাম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমপর্যায়ে চলে আসবে। পাইকারি বাজার থাকলে ব্যান্ডউইটথের আদান-প্রদানের জন্য ডেটাসেন্টার তৈরি হবে। এতে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়বস্তু বাড়বে।
আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) এক গবেষণার তথ্য বলছে, ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ডিজিটাল বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলের মাত্র ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পান। এর ফলে ডিজিটাল মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থিক লেনদেন সেবা ব্যবহারের সুযোগবঞ্চিত এ অঞ্চলের একটি বড় জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তুলনায় মাথাপিছু ব্যান্ডউইটথ ব্যবহার এখনো অনেক কম। সরকারি হিসাবে এ দেশে ইন্টারনেট সংযোগসংখ্যা ৮ কোটি ৮ লাখ, আর ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথ ব্যবহারের পরিমাণ ৫০০ থেকে ৫৫০ জিবিপিএস।
প্রস্তাবিত এ ইন্টারনেট মহাসড়কের মালিকানা থাকবে প্রতিটি সদস্যদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এ হিসেবে বাংলাদেশে অংশের এপিআইসের মালিক হবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। এপিআইএসের মাধ্যমে দেশের সব জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়ক উচ্চগতির ফাইবার নেটওয়ার্কে চলে আসবে। ফলে বাংলাদেশের পুরো মহাসড়ক নেটওয়ার্ক স্মার্ট হাইওয়েতে রূপান্তরিত হবে।
স্মার্ট হাইওয়ে হচ্ছে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত একটি মহাসড়ক ব্যবস্থা। একটি কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বা মনিটরিং সেন্টারের মাধ্যমে স্মার্ট হাইওয়ের ধারণা বাস্তবায়ন করা হবে। এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত টোল প্লাজা থেকে আদায় করা টোল সঠিকভাবে সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে কি না, তা নজরদারি করা সম্ভব। যেমন: বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে এখন দিনে কত যানবাহন চলে এবং তা থেকে কত টাকা সরকার পায় তা পর্যবেক্ষণের কেন্দ্রীয় কোনো ব্যবস্থা নেই। স্মার্ট হাইওয়ে ব্যবস্থায় প্রতিমুহূর্তে সরকারের কোষাগারে কত অর্থ জমা পড়ছে, তা জানা যাবে। আবার মহাসড়কের কোথাও যানবাহন বেপরোয়া গতিতে অথবা নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার ওজন নিয়ে চললে তা ধরা যাবে স্মার্ট হাইওয়ে ব্যবস্থায়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে মহাসড়কের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে কোনো ব্যবস্থা বাংলাদেশে নেই। স্মার্ট হাইওয়ের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করা যাবে।
নিজেদের অধীনে থাকা ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক ভাড়া দিয়ে আয় করার সুযোগ থাকবে সওজের। এপিআইএস ও স্মার্ট মহাসড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সওজের প্রস্তাবের পর এ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তথ্যসূত্র: প্রথম আলো।
মহাদেশীয় ইন্টারনেট মহাসড়ক কি কাজে লাগবে?
previous post