প্রযুক্তি-ভিত্তিক অলাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইয়াং ফাউন্ডারস স্কুল (ওয়াইএফএস) ঢাকায় তাদের প্রথম বুটক্যাম্পের যাত্রা করেছে। শুক্রবার ২১ শে ডিসেম্বর শুরু হয়ে বুটক্যম্পটি সমাপ্ত হয় শনিবার ২২ ডিসেম্বর। এই ক্যাম্পের লক্ষ্য উদ্যোক্তা কার্যক্রম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছে দেয়া। দুনিয়াজুড়ে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়াইএফএস একটি স্বীকৃত বৈশ্বিক উদ্যোক্তা প্রোগ্রাম।
পাঠাও লিমিটেডের সিইও হুসেইন এম ইলিয়াস বলেছেন, “পাঠাও নিজেই একটি তরুণ প্রজন্মের স্টার্টআপ, তাই আমরা প্রথমদিকে উদ্যোক্তা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। এ ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো সামনে আসে সেগুলোর সঙ্গেও আমরা খুব পরিচিত। পাঠাওতে আমরা আমাদের কর্মীদের মধ্যে মালিকানাবোধ প্রচার করি এবং একইসঙ্গে উদ্যোক্তাদেরও অনুপ্রেরণা দেই। আর তাই, তরুণ উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ণে নিরলসভাবে কাজ করে এমন একটি সংস্থার সাথে অংশীদারিত্বে আসতে পারা আনন্দের বিষয়”।
বিলি নাভিদ ২০১৬ সালে ওয়াইএফএস হংকংয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। বিলি নিজে একজন ‘তরুণ প্রতিষ্ঠাতা’ হিসাবে শুরু করেন। নিজের ১৬ বছর বয়সের আগেই তিনি দুটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করেছিন। এই কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ক্রেডিট সুইস, আলিবাবা এন্টেপ্রনার ফান্ড এবং স্থানীয়ভাবে পাঠাও ও ওসিরিস গ্রুপ।
এশিয়ার প্রধান শহরসমুহ যেমন হংকং, সিঙ্গাপুর এবং শেনঝেনে এএফএস সফলভাবে চালু হওয়ার পর ঢাকার উদ্যোক্তাদের অদম্য মনোভাবের কারনে ওয়াইএফএস ঢাকাকেই পরবর্তী স্টেশন হিসাবে নির্বাচিত করে।
বুটক্যাম্পে শিক্ষার্থীরা টেক ইন্ডাস্ট্রির পথ প্রদর্শকদের কাছ থেকে নতুন স্টার্টআপ কৌশলগুলো শিখেছেন। যেমন, লিন স্টার্টআপ, প্রোডাক্ট মার্কেট ফিট এবং কম্পিটিশন এনালাইসিস। তারা তাদের স্টার্টআপ আইডিয়াকে সম্পূর্ণভাবে বিকশিত করার সুযোগ পায় এবং ফান্ড পাওয়ার জন্য তিনজন ভেনচার ক্যাপিটালিস্ট বিচারকের প্যানেলের সামনে তৈরি পিচগুলিতে উপস্থাপন করে।
বিচারকরদের মধ্যে ছিলেন স্টার্টআপ ঢাকার কো-ফাউন্ডার সামাদ মিরালি, আইডিএলসি এসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের এসোসিয়েট মাসুদ উল হক এবং বাংলাদেশ এঞ্জেলস এর সিইও নির্ঝর রহমান।
কার্যক্রম সম্পর্কে জনাব নাভিদ বলেন, “ওয়াইএফএস, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বের প্রথম গ্লোবাল উদ্যোক্তা প্রোগ্রাম। এটি উচ্চ বিদ্যাালয়ের শিক্ষার্থীদের রিয়েল-ওয়ার্ল্ড স্টার্টআপ অভিজ্ঞতা এবং সিভি-বুস্টিং দক্ষতা, এবং সেই সাথে অনুপ্রেরণীয় উদ্যোক্তাদের সাথে কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। আমরা বর্তমানে হংকং, শেনঝেন এবং সিঙ্গাপুরে কাজ করছি এবং এটি আমাদের বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশমূলক কার্যক্রম ছিল। আমরা এই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য স্টেশন, যেমন জাকার্তা এবং ব্যাংককে কাজ শুরু করব।
আমরা বিশ্বের যে কোন জায়গায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করার পরিকল্পনা করছি। আমরা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অন্যান্য কর্পোরেট, স্কুল, পিতামাতা এবং তাদের সন্তানদের আমাদের আয়োজনে স^াগত জানাই”।
ওয়াইএফএস এর পূর্ববর্তী বুটক্যাম্পগুলিতে বিজয়ী দলগুলির ব্যবসায়িক ধারনাগুলোর মধ্যে আছে- বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য পড়ে যাওয়া প্রতিরোধের জন্য হাঁটার সহায়ক হিসেবে ইন্টারনেট অফ থিংস (“আইওটি”) সক্ষম ডিভাইস, যা সঠিক সময়ে তাদের প্রিয়জনকে সতর্ক সংকেত দেবে। আরও রয়েছে একটি অ্যাপ্লিকেশন, যা মানুষের মানসিক সমস্যায় সহায়তা করে। এছাড়াও রয়েছে হাই স্কুল ইন্টার্নশিপের জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
ঢাকায় আত্মপ্রকাশের পর ওয়াইএফএস চট্টগ্রামের মতো অন্যান্য শহরগুলিতে পৌছানো এবং কার্যক্রমের পাঠক্রম বাংলা অনুবাদের মাধ্যমে সহজ করে তোলার প্রচেষ্ঠা নিচ্ছে।
গত ২৪ মাসে ওয়াইএফএস এর সূচনা থেকে শুরু করে হংকং, শেনঝেন এবং সিঙ্গাপুরে ১৩০০ এর বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে নয়টি স্টার্টআপ বুটক্যাম্প এবং সাতটি আইডিয়েশন ডে কার্যক্রম সম্পন্ন করে, যার মধ্যে ৫৭% মহিলা শিক্ষার্থী, এবং আলিবাবা গ্রুপ, গুগল, ৯গ্যাগ, মাইক্রোসফ্ট, টেকস্টারস, প্রাইসওয়াটারহাউস কুপারস, গোগোভ্যানের মত কোম্পানি থেকে ৩০০ এর বেশি মেন্টর সংযুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশী মেন্টরদের মধ্যে পাঠাও, ব্রাক সোশ্যাল ইনোভেশন ল্যাব, কমনওয়েলথ ব্যাংক অফ অস্ট্রেলিয়া, প্লান্টিক, সেলিস রকিং সফটওয়্যার এবং আরও কিছু বিখ্যাত স্টার্টআপ গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মাস্টারমাইন্ড স্কুলের এ লেভেলের ছাত্রী নাফিসা আনোয়ার বলেছেন, “এই বুটক্যাম্পের মাধ্যমে আমি অনেকগুলি জিনিস শিখেছি। কিন্তু আমার মূল শিক্ষা হচ্ছে উদ্যোক্তা প্রবণতা আসলে কিভাবে বেশি মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যায় এবং সহজভাবে তাদের সমস্যাগুলো সহায়তায় নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।