অনুমোদনের দীর্ঘ এক বছর পর বাংলাদেশের বাজারে এসেছে ঐতিহ্যবাহী ও রাজকীয় বিখ্যাত রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল। ৩৫০ সিসির মোটরসাইকেলটি দেশের বাজারে নিয়ে এসেছে ইফাদ মোটরস।
সোমবার (২১ অক্টোবর) থেকে দেশের বাজারে পাওয়া যাবে রয়্যাল এনফিল্ড। আইকনিক ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলটির বাংলাদেশে একমাত্র প্রস্তুতকারক ও পরিবেশক ইফাদ মোটরস।
কোম্পানিটির সূত্রে জানা গেছে সোমবার দুপুরে চারটি ৩৫০ সিসির মডেল-হান্টার, বুলেট, ক্লাসিক ও মিটিয়র-অনলাইনে লঞ্চ করা হবে। পরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রয়্যাল এনফিল্ডের ফ্ল্যাগশিপ শোরুমে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মডেলগুলো উন্মোচিত হবে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মোটরসাইকেল উৎপাদন কারখানা তৈরি করেছে ইফাদ মোটরস। যার দাম পড়ছে সাড়ে চার লাখ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকার মধ্যে। বুলেট, ক্লাসিক ও মিটিয়র মডেলগুলোর দাম ক্রমান্বয়ে বেশি রাখা হবে।
মোটরসাইকেলটির টেস্ট রাইডাররা বলছেন, নতুন প্রজন্মের রয়্যাল এনফিল্ড মডেলগুলো ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি আরও উন্নত পারফরম্যান্স নিশ্চিত করবে।
এই চারটি মডেলে থাকবে উন্নত ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম এবং পরিমার্জিত সিঙ্গেল-সিলিন্ডার ‘জে’ (J) সিরিজের ইঞ্জিন। এছাড়া রং ও ব্রেকিং সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে আলাদা ভেরিয়েন্টও থাকবে।
দীর্ঘ দুই দশক ইঞ্জিন সক্ষমতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখার পর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ৩৭৫ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন সক্ষমতার মোটরসাইকেলের অনুমোদন দেয়।
Royal Enfield কেন জনপ্রিয়
ঐতিহ্যবাহী এবং রাজকীয় মোটরসাইকেলের কথা বললেই মানসপটে ভেসে ওঠে রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইকের ছবি। বিভিন্ন দেশের তুমুল জনপ্রিয় এই বাইক দেশের বাইকারদের (বাইকচালক) কাছেও সমান জনপ্রিয়।
রয়্যাল এনফিল্ড ক্লাসিক ৩৫০রয়্যাল এনফিল্ড
ঐতিহ্যবাহী এবং রাজকীয় মোটরসাইকেলের কথা বললেই মানসপটে ভেসে ওঠে রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইকের ছবি। বিভিন্ন দেশের তুমুল জনপ্রিয় এই বাইক দেশের বাইকারদের (বাইকচালক) কাছেও সমান জনপ্রিয়। এবার বাংলাদেশের বাজারে আসতে যাচ্ছে রয়্যাল এনফিল্ডের বাইক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরই মধ্যে এ নিয়ে শোরগোল শুরু হয়ে গেছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চালু হয় ‘রয়্যাল এনফিল্ড বাংলাদেশ’ নামের পেজ। পেজটিতে ২৩ হাজারের বেশি অনুসরণকারী (ফলোয়ার দেখা) রয়েছে। দেশের বাজারে চলতি মাসের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে রয়্যাল এনফিল্ড ছাড়বে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইফাদ মোটরস লিমিটেড।
রয়্যাল এনফিল্ডের শুরুটা যুক্তরাজ্যে, ১৯০১ সালে। ইংল্যান্ডে দুই ব্রিটিশ উদ্যোক্তা বব ওয়াকার স্মিথ এবং অ্যালবার্ট ইডি তাঁদের প্রথম মোটরসাইকেল তৈরি করেন। স্ট্যানলি সাইকেল প্রদর্শনীতে তাঁরা মোটরসাইকেলটি দেখান। বাইকারদের মন জয় করে নেওয়া শুরু হয় তখন থেকেই। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি ভারতের মাদ্রাজ মোটরসের সঙ্গে চেন্নাইয়ে সংযোজন কারখানা স্থাপন করে। ভারতের বাইকবাজারে আধিপত্য বিস্তার করে। পাশাপাশি বেশি সিসির এই বাইক বিশ্বস্ততা ও আস্থাতেও এগিয়ে যায়। হলিউড, বলিউডের জনপ্রিয় অনেক তারকা এবং খেলোয়াড়দের পছন্দের তালিকায় রয়েছে রয়্যাল এনফিল্ড। এই সময়ে এসে প্রায় অর্ধশত দেশে রয়্যাল এনফিল্ডের জনপ্রিয়তা দেখা যায়।
রয়্যাল এনফিল্ডের বাইকের বিভিন্ন মডেলের নামগুলোতেও আভিজাত্য প্রকাশ পায়। এই ব্র্যান্ডের স্লোগান ‘মেড লাইক এ গান’। যার অর্থ হলো তুলনাহীন স্থায়িত্ব এবং প্রকৌশল দক্ষতা। রয়্যাল এনফিল্ড কঠিন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিল। পাশাপাশি হিমালয় পর্বতমালায় মোটরযানযাত্রা সম্পন্ন করেও উচ্চতার রেকর্ড করেছে। ৩৫০ সিসির ইঞ্জিনে বুলেট, ক্লাসিক, মিটিওর ও হান্টার, ৪১১ সিসিতে স্ক্রাম, ৪৫০ সিসিতে গুয়েররিল্লা, হিমালয়, ৬৫০ সিসিতে শর্টগান, সুপার মিটিওর, ইন্টারসেপ্টর ৬৫০ এবং কন্টিনেন্টাল জিটি ৬৫০ মডেলগুলো জনপ্রিয়।
Royal Enfield এর ফিচার
৩৫০ সিসির শ্রেণিতে রয়্যাল এনফিল্ডের প্রতিটি বাইকে স্বকীয়তা রয়েছে। বুলেট, ক্লাসিক এবং হান্টার মডেলগুলো উন্নত ইএফআই ইঞ্জিন দিয়ে চলবে। নিরাপত্তার জন্য বাইকগুলোতে দ্বৈত চ্যানেলের এবিএস, ডিজিটাল এবং সেমি ডিজিটাল মিটার এবং স্মার্টযন্ত্র সংযোগ বৈশিষ্ট্যসহ সজ্জিত। ক্লাসিক ৩৫০ মডেলে একটি একক সিলিন্ডার এবং এয়ারকুল্ড ৩৪৯ সিসি ইঞ্জিন রয়েছে। এটি ৬ হাজার ১০০ আরপিএমে ২০.২ বিএইচপির হর্স পাওয়ার এবং ৪ হাজার আরপিএমে ২৭ এনএমের টর্ক উৎপন্ন করে, যা শহরে ও খোলা রাস্তায় চালানোর জন্য ভারসাম্যপূর্ণ। বাইকটিতে একটি ইস্পাতের ফ্রেম রয়েছে এবং চালক ও যাত্রীর জন্য স্ট্যান্ডার্ড হ্যান্ড গ্রিপস, হ্যান্ডেলবার এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ পাদানি রয়েছে। মোটরসাইকেলটি একটি টেলিস্কোপিক ফর্ক ফ্রন্ট সাসপেনশন এবং একটি টুইন সাইড সুইং আর্ম রিয়ার সাসপেনশন দিয়ে সজ্জিত। ক্লাসিক ৩৫০–এর ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলে একটি স্ট্যান্ডার্ড স্পিডোমিটার এবং একটি ফুয়েল লেভেল ওয়ার্নিং লাইট রয়েছে। বর্ধিত কার্যকারিতার জন্য ঐচ্ছিক আনুষঙ্গিক যেমন হার্ডসাইড কেস, একটি পেছনের র্যাক এবং ব্যাগ লাইনার যোগ করা যেতে পারে।
হান্টার ৩৫০ বাইক রেট্রো রোডস্টার নকশায় তৈরি। বাইকের সামনে থাকছে গোলাকার হেডলাইট, হ্যান্ডলবারের দুই পাশে দুটি রিয়ার ভিউ মিরর, টার্ন ইন্ডিকেটর এবং কনসোল। সঙ্গে থাকছে রোটারি সুইচ, টিয়ার-ড্রপ শেইপের ফুয়েল ট্যাংক, যা এই বাইকের রেট্রো লুককে যেন আরও বাড়িয়ে দেয়। তবে ছিমছাম হলেও এই বাইকের বিল্ড-কোয়ালিটি এবং পেইন্ট ফিনিশ দিবে প্রিমিয়াম ফিলিং।
একটি চমৎকার চিরায়ত নকশার প্রাচীন ধাঁচের ক্রুজার টাইপ মোটরবাইক হলো রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট ৩৫০। বাইকটির বর্তমান সংস্করণে ডুয়েল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। সামনের চাকায় ৩০০ মিলিমিটার ডাবল পিস্টনের ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনের চাকায় ২৭০ মিলিমিটার ফ্লোটিং সিঙ্গেল পিস্টন ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্রেকিং ব্যবস্থা রুক্ষ সড়কেও স্থিরভাবে বাইক চালাতে ও থামাতে সাহায্য করে। বাইকটি মূলত দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয়।
রয়্যাল এনফিল্ড মিটিওর ৩৫০ হলো আধুনিক ঘরানার আভিজাত বাইক। এই বাইকটিও চিরায়ত ধারার ক্রুজার বাইক। এটির এগজস্ট নোট, ক্লাসিক স্টাইলের কনসোল প্যানেল এবং শক্তিশালী গোলাকার হেডলাইট মুগ্ধ করার মতো।