প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের এই যুগে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং পেশাদারদের জন্য ল্যাপটপ খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় একটি ডিভাইস। তাই ল্যাপটপ কেনার সময় কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। অন্যথায় ল্যাপটপটি ফলপ্রসূ নাও হতে পারে।
প্রসেসর: প্রসেসরের গতির উপরই ল্যাপটপের সার্বিক গতি নির্ভর করে থাকে, আর প্রসেসর এর কোয়ালিটি এবং স্পিড এর উপরই ল্যাপটপের দাম কমবেশি হয়ে থাকে। তাই সঠিক প্রসেসর নির্বাচন করতে হবে। বর্তমানে বাজারে ইন্টেল এবং এএমডি প্রসেসর পাওয়া যায়। ইন্টেল বাংলাদেশে বেশি জনপ্রিয় তবে এএমডির কম দামের মধ্যে ভালো পারফরম্যান্স সুবিধা রয়েছে।
যে ল্যাপটপই কিনতে হোকনা কেন- ছাত্র বা সাধারণ ব্যবহারকারী জন্য ইন্টেল কোর আই ৩ যথেষ্ট। আর পেশাদার কাজের জন্য সর্বশেষ প্রজন্মের কোর আই ৫ বা কোর আই ৭ বা এএমডি ৭ প্রসেসর ক্রয় করা আবশ্যক।
র্যাম: ল্যাপটপের পারফরমেন্স সরাসরি এই র্যামের উপর নির্ভর করবে। সাধারণ ব্যবহারকারীদের এক স্লটে ৪ গিগাবাইট র্যাম থাকা প্রয়োজন, যা পরবর্তীতে সুবিধামত বর্ধিত করা যাবে। অন্যদিকে ব্যবসায়ী বা পেশাদারদের জন্য প্রয়োজন ৮ গিগাবাইট র্যাম যা প্রয়োজন হলে ১৬ জিবি পর্যন্ত বর্ধিত করা যাবে। তবে কিছু ল্যপটপের সাথে র্যাম জুড়ে দেয়া থাকে যা পরবর্তীতে বর্ধিত করা যায় না, তাই এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
গ্রাফিক্স কার্ড: যদি বেসিক ফটো এডিটিং, ভিডিও দেখা এবং কিছুটা গেমিংয়ের মতো সাধারণ উদ্দেশ্যে ল্যাপটপ ক্রয় করার প্রয়োজন হয় তাহলে ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ড হলেই যথেষ্ট।
অন্যদিকে, ভারী গেমিং বা ভিডিও এডিটিং এর জন্য ল্যাপটপ ব্যবহার করতে চাইলে কমপক্ষে ৪ জিবি ভিডিও র্যাম (ভিআরএএম) এর একটি ডেডিকেটেড ভিডিও কার্ডের প্রয়োজন।
স্টোরেজ: এসএসডি (সলিড স্টেট ড্রাইভ) হলো সর্বশেষ প্রযুক্তি যা প্রচলিত এইচডিডি (হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ) এর থেকে প্রায় ১০ গুণ বেশি দ্রুত গতিতে কাজ করে। তবে স্বল্প বাজেটের বিপরীতে বড় স্টোরেজের প্রয়োজন হলে প্রচলিত হার্ড ডিস্কগুলি বেছে নিতে হবে। কিন্তু, ল্যাপটপের মাধ্যমে ডিজাইনিং অথবা পেশাদার কোন কাজ করতে চাইলে হাইব্রিড স্টোরেজ (এইচডিডি + এসডিডি) ব্যবহার করা ভাল হবে।
ব্যাটারী ব্যাকআপ: ব্যাটারীর চার্জ ধারণ ক্ষমতা, চাজিং স্পিড, ব্যাটারী টাইপ (Nica, NiMH or Li-ion), ব্যাটারী ম্যানুফেক্চার ব্রান্ড, ব্যাটারী ভোল্টেজ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে ব্যাটারিটি কতক্ষণ ব্যাকআপ দিতে পারবে। কাজেই ল্যাপটপ কেনার সময় অবশ্যই এবিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার।
ডিসপ্লে : এটা নির্ভর করবে কাজের প্রকৃতি ও ল্যাপটপটি কোথায় ব্যবহৃত হবে তার ওপর। যদি শুধু অফিস বা বাসয় ব্যবহৃত হয় তাহলে ১৪” এবং ১৮” ভাল হবে। কারণ এগুলোর স্ক্রিন এইচডি এবং ফুল এইচডি সমর্থন করে ল্যাপটপগুলি ১৩ ইঞ্চি বা আরও ছোট স্ক্রিন আছে। কিন্তু, ল্যাপটপটি নিয়ে ভ্রমণ করলে ১৪” এর বেশি হলে পরিবহনে অসুবিধা হতে পারে।
ব্র্যান্ডের মান: বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ পাওয়া যায় আমাদের দেশে। এসবের আবার বিভিন্ন মডেল রয়েছে। ব্র্যান্ডের মান নয় বরং ভাল পারফরম্যান্স দেয় এমন ল্যাপটপই আপনার প্রয়োজন। তাই ল্যাপটপ কিনার আগে ভালভাবে রিভিউ পড়ে নিন।
দামের তুলনা: ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক, ড্রাইভ, প্রসেসর ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। তাই ল্যাপটপ কিনার আগে এবিষয়গুলো তুলনা করে নিবেন।
অন্যান্য বিষয়: কিবোর্ড, ওয়্যারলেস কানেকশন, ব্লুটুথ, ইউএসবি ও এসডি কার্ডের পোর্ট ওয়ারেন্টি কার্ড প্রভৃতি বিষয় ভালভাবে জেনে নিতে হবে।
লেখক: মিজানুর রহমান; তথ্যপ্রযুক্তি লেখক
ইমেইল : mizanurdin95@gmail.com