করোনা পরিস্থিতিতে ঈদের আগে শপিংমল খোলার বিপক্ষে মত দিয়েছেন ৯৩ শতাংশ। আর শপিংমল খুললে না যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ৯৬ শতাংশ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগের (সিপিডি) এক অনালইন জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে সিপিডি।
‘কোভিড-১৯ : বর্তমান প্রেক্ষাপট ও বাজেট ২০২০-২১’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২৬ মার্চ থেকে যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেটাকে আমরা লকডাউন হিসেবেই দেখছি। সেটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর জন্য সারাবিশ্বেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। তবে এই কারণে অর্থনৈতিক কর্মকা- স্থবির হয়ে পড়েছে। সীমিত আকারে শপিংমল, দোকানপাট খুলে দেওয়ার ঘোষণা এসেছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, শপিংমল, পরিবহন, কাঁচাবাজার এসব জায়গায় মানুষের সমাগম বেশি হয়। যেখানে মানুষের সমাগম বেশি হয়, সেখানে এটার (করোনা ভাইরাস) বিস্তার বেশি হয়। আমরা অনলাইনে একটি জরিপ করি। তাতে প্রশ্ন ছিল- বর্তমান পরিস্থিতিতে শপিংমল খুলে দেওয়া প্রয়োজন কিনা? এর উত্তর দিয়েছেন ২২৬৪ জন। এদের মধ্য ২১০০ জন ‘না’ ভোট দিয়েছেন। সেটা প্রায় ৯৩ শতাংশ। আর ১৬৪ জন খুলে দেওয়ার পক্ষে। সুতরাং আমরা দেখছি অধিকাংশ শপিংমল না খোলার পক্ষে।
আমরা আরেকটি প্রশ্ন করেছিলাম, শপিংমল খুলে দিলে আপনি যাবেন কিনা? এর উত্তর দিয়েছেন ১০৪৭ জন। এর মধ্যে ১০০০ জন বলেছেন শপিংমলে যাবেন না। অর্থাৎ ৯৬ শতাংশ শপিংমলে না যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিপরীতে ৪৭ জন শপিংমলে যাবেন বলে জানিয়েছেন। সুতরাং মানুষ কী ভাবে তা বিবেচনায় নেওয়া ভালো, বলেন ফাহমিদা।
দিকে ব্যবসা, অর্থনীতি ও কর্মচারীদের জীবিকার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে রাজধানীর গুলশান ১ ও ২ নম্বর সেকসনের ডিনএসসি মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, গাজী শপিং কমপ্লেক্স এবং এলিফ্যান্ট রোডের সব দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব মার্কেট সমিতির কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে তাদের ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জমানো পুঁজি ভেঙে খাওয়ার ফলে তারা এখন অনেকটাই অসহায় হড়ে পড়েছেন। কর্মচারীরা অনাহারে অর্ধহারে দিনাতিপাত করছেন। দোকান বা ব্যবসা চালু হলে তারা কিছুটা হলেও অর্থের মুখ দেখবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানার নিশ্চয়তা দিয়ে ১০ মে রবিবার থেকে সীমিত আকারে দেশীয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ং ও বাংলাদেশের জুতা তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান এপেক্স ও বাটা। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নিজ নিজ সিদ্ধান্তে আউটলেট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো।
এদিকে নিউ মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আগে হলেও শনিবার সকালে চাঁদনী চক, গাউছিয়া, ইস্টার্ন মল্লিকার মতো মার্কেটগুলো খোলার প্রাথমিক আলোচনা ছিল। দুপুরে মিরপুর সড়কের সব মার্কেটের মালিকরা এ বিষয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার বিষয়টি সামনে আসায় সর্ব সম্মতিক্রমে মিরপুর সড়কের ১২টি মার্কেট বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো হচ্ছেছ গাউছিয়া, চিশতিয়া, নিউ চিশতিয়া, ইসমাইল ম্যানশন, নূর ম্যানশন, ইস্টার্ন মল্লিকা, চাঁদনী চক, গোল্ডেন প্লাজা, গ্রিন স্মরণিকা, ধানমন্ডি হকার্স, প্রিয়াঙ্গন, নূরানী মার্কেট। এ বিষয়ে মিরপুর ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সদস্য সচিব আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস উদ্বেগজনক হারে বিস্তারের কারণে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে মিরপুর এলাকার সব শপিংমল ও মার্কেট ঈদের আগ পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।