দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে জনপ্রিয় করে তোলা, বিজ্ঞানের আনন্দকে উপভোগ করতে শেখানো এবং গুগল সায়েন্স ফেয়ার কিংবা ব্রেকথ্রু জুনিয়র চ্যালেঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানভিত্তিক আয়োজনগুলোতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত হয়েছে শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস ২০১৯। রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী ও দুই হাজারের বেশি শিক্ষক, গবেষক, বিজ্ঞানী ও দর্শনার্থী এবারের কংগ্রেসে অংশ নিয়েছে। ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানের এই বিশাল যজ্ঞ ষষ্ঠবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে এবছর। বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (এসপিএসবি) ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ) যৌথভাবে এটি আয়োজন করেছে।
দুই দিনব্যাপী কংগ্রেসে সারা দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা বৈজ্ঞানিক পেপার, বৈজ্ঞানিক পোস্টার ও বিজ্ঞান প্রজেক্ট প্রদর্শন করেছে। আজ কংগ্রেসের দ্বিতীয় দিনে যৌথ কংগ্রেস, নেটওয়ার্কিং পর্ব ও পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে এবছরের বিজ্ঞান কংগ্রেস শেষ হয়েছে।
সারা দেশ থেকে সাড়ে ছয়শতর বেশি শিক্ষার্থী এবছরের কংগ্রেসে অংশ নেয়ার উদ্দেশে কনসেপ্ট পেপার বা ধারণাপত্র জমা দিয়েছিল। সেখান থেকে কয়েক ধাপে বাছাইকৃত প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী মূল পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। দুইদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিন গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কংগ্রেসের কার্যক্রম শুরু হয়। কংগ্রেসের প্রথমদিনে শিক্ষার্থীরা তাদের পোস্টার ও প্রজেক্টের প্রদর্শনী এবং পেপার উপস্থাপনে অংশ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে গঠিত বিচারক প্যানেল শিক্ষার্থীদের এসব গবেষণা যাচাই করে পুরস্কারের জন্য ষাটজন শিক্ষার্থীকে সেরা নির্বাচিত করেন।
আজ সকালে দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ক্ষুদে বিজ্ঞানী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষক-বিজ্ঞানীদের নিয়ে যৌথ কংগ্রেস। দ্বিতীয় দিনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার ড. রেজাউর রহমান, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনির হাসান ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান। শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানীদের সাথে দেশের বিজ্ঞান শিক্ষা, গবেষণা এবং এ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো নিয়ে মতবিনিময় করেন। যৌথ কংগ্রেস শেষে একটি প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হয় যে জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘরের সঙ্গে স্কুল- কলেজের শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ বাড়ানো এবং বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান জাদুঘর পরিদর্শনের
ব্যবস্থা করা হোক। আরেকটি প্রস্তাবনা ছিল, বিভাগীয় পর্যায়ে কংগ্রেসের আয়োজন করতে হবে।
প্রধান অতিথি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান গ্রামে গ্রামে বিজ্ঞান ক্লাব গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীকে আহ্বান জানান। এজন্য বাংলাদেশ সরকার যে কোনরকম সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীরা একক বা দলীয়ভাবে কংগ্রেসে মোট ৪৮ টি পেপার, ৮১ টি প্রজেক্ট ও ৪২ টি পোস্টার উপস্থাপন করে। এই তিনটি সেকশনে মোট অংশ নেয় প্রায় চারশত জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্য থেকে বৈজ্ঞানিক পেপারে ১৯ জন, পোস্টারে ২১ জন এবং প্রজেক্টে ২০ জন বিজয়ী হয়। কংগ্রেসের সেরা গবেষণাকাজগুলোকে পুরস্কৃত করার পাশপাশি নির্বাচিত তিনটি গবেষণাকে পেপার অফ দ্য কংগ্রেস, পোস্টার অফ দ্য কংগ্রেস এবং প্রজেক্ট অফ দ্য কংগ্রেস হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
‘পেপার অব দ্যা কংগ্রেস’ নির্বাচিত হয়েছে আবরার তাসনিম আবির (সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল ও কলেজ), মুয়াম্বার সারওয়ার নিবিড় (নারায়নগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ) এবং আবসার খান সিয়াম (আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ, মতিঝিল) এর দল। তারা কাজ করেছিল নির্দেশক ছাড়াই এসিড-ক্ষার টাইট্রেশনের উপায়ে বের করতে। মাকসুদুল আলম সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে রিসার্চ গ্র্যান্ট পেয়ে গবেষণাটি করেছে তারা। ‘পোস্টার অব দ্যা কংগ্রেস’ খেতাব পেয়েছে অয়ালিদ হাসান। সে কাজ করেছিল বাংলাদেশে নারীদের ঋতুস্রাব-স্বাস্থ্য সম্বন্ধে অসচেতনতা নিয়ে। প্রজেক্ট অব দ্যা কংগ্রেস হয়েছে আরাফ ইসরাক, যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে একটি রোবট তৈরী করেছে। যেটি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারে, এবং কথা বলার মাধ্যমেই নতুন নতুন কথা শেখে।
কংগ্রেসের বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আগামী ২-৪ মে ২০১৯ অনুষ্ঠিত হবে ৩ দিনব্যাপী আবাসিক ৬ষ্ঠ জগদীশচন্দ্র বসু ক্যাম্প।
শিশু-কিশোর বিজ্ঞানকংগ্রেস নিয়ে আরো বিস্তারিত জানা যাবে কংগ্রেসের ওয়েবসাইট www.cscongress.net এবং ফেইসবুক পেইজ www.facebook.com/cscongressbd