বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ক্যারিয়ারে অগ্রসর হতে চাইলে পেশাগত দিক থেকে দক্ষ হওয়ার বিকল্প নেই। পেশাগত জীবনে নিজেকে এগিয়ে রাখতে বা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে তথ্যপ্রযুক্তি খাদের চাহিদা অনুযায়ী গড়ে তুলতে চাইল পেশাদার বেশ কিছু কোর্স কাজে লাগতে পারে।
একটি পেশাদার সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম সাধারণত কোনো বিষয়ের ওপর দক্ষতা অর্জনের বিশেষ প্রশিক্ষণ। যেমন কেউ চাইলে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষ কোনো চাহিদাসম্পন্ন বিষয় শিখে তার একটি সনদ অর্জন করতে পারে।
এই সনদ দেশের প্রতিষ্ঠানে যেমন গুরুত্ব পায় তেমনি বিদেশি প্রতিষ্ঠান, অনলাইন মার্কেটপ্লেস কিংবা প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য দক্ষ কর্মীর মর্যাদা দেয়।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান ও প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে দক্ষ কর্মী বিশেষ করে বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সনদপ্রাপ্ত কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে সনদের পাশাপাশি যদি কর্মী হাতে কলমে কাজ জানেন তবে তার কদর ও মূল্যায়ন হয় অনেক বেশি।
যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি সনদ অর্জন করেন এবং নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলেন তিনি পড়াশোনা শেষ করতে না করতেই বড় বড় প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন পোষ্টে নিয়োগ পান।
বাংলাদেশের বাজারে এ ধরনের কর্মীর বেতন ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন আইটি ক্ষেত্র এবং দক্ষতার সনদ অর্জনের নানা কারণ রয়েছে। এ ধরনের সনদ মূলত কর্মীকে আস্থা অর্জনে সহায়তা করে। নিজের পোর্টফোলিওতে এ সনদ একটি অর্জন হিসেবে দেখানো যায়।
এ ছাড়া এ খাতের বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা সম্ভব হয়। কাজের জন্য যথোপযুক্ত দক্ষতা প্রমাণের জন্য সার্টিফিকেশন কোর্স তাই গুরুত্বপূর্ণ।
কেউ যখন চাকরির পাশাপাশি নিজেকে হালনাগাদ করতে এ ধরনের সনদ অর্জন করেন তখন তিনি নিজের যোগ্যতা বাড়িয়ে নিতে সক্ষম হন। তাঁর সনদই তাঁর দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে দাঁড়ায়।
প্রতিযোগিতার বাজারে তাঁকে এগিয়ে রাখে। বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কাজ করতে গেলে নিজেকে যুগের সঙ্গে হালনাগাদ রাখা জরুরি। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তাই দক্ষতার সনদ অর্জন করলে কর্মীর জন্য তা সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত ও প্রশিক্ষণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উপযোগী বেশ কিছু সার্টিফিকেশন কোর্সের চাহিদা এখন অনেক বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফুল ডেটা সায়েন্স, বিগ ডেটা, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড মেশিন লার্নিং, ক্লাউড কম্পিউটিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, বিজনেস ইনটেলিজেন্স, নেটওয়ার্কিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডেভওপস, সাইবার সিকিউরিটি ও ডিজিটাল মার্কেটিং।
শুধু দেশেই নয় এ ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষতা অর্জন করলে ও বিশেষায়িত ও গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেশন কোর্স সম্পন্ন করলে এর চাহিদা দেশের বাইরেও রয়েছে।
দেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেশাদার কোর্স পরিচালনা করে থাকে। বেসিসের বিআইটিএম, পিপলস অ্যান্ড টেক, নিউ হরাইজন, পিএমপিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পেশাদার এসব প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। সাধারণত ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৩––৪০ হাজার টাকার মধ্যে এসব কোর্স করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে তিন মাস থেকে ছয় মাস মেয়াদে এসব কোর্স সম্পন্ন হয়।
শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ:
দেশের শিক্ষার্থী বা নতুন কর্মীদের জন্য বেশ কিছু প্রশিক্ষণ আছে যা তাদের ক্যারিয়ারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এসব প্রশিক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে নেটওয়ার্কিং, মাইক্রোসফট এসকিউএল সার্ভার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, অফিস ৩৬৫ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, এমএস এক্সচেঞ্জ সার্ভার, রাউটিং অ্যান্ড সুইচিং, পাইথন ফর নেটওয়ার্কিং, এথিক্যাল হ্যাকিং, উইন্ডোজ সার্ভার, মাইক্রোটিক উইথ আইএসপি সেটআপ, মাইক্রোসফট অ্যাজুর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, ভিএমওয়্যার, আমাজন ওয়েব সার্ভিসেস, লিনাক্স সার্ভার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, আইটি এশেনসিয়ালস, রেডহ্যাট সার্টিফায়েড ইঞ্জিনিয়ার, সিসিএনএ, সিসিএনপি, ডাইনামিক সিআরএম, ভিজ্যুয়াল স্টুডিও, ওয়েবডিজাইন ডেভেলপমেন্ট, পিএইচপি মাইএসকিউএল।
তথ্যপ্রযুক্তির যুগোপযুগী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট এজেন্সী। বর্তমানে পাঁচটি গ্লোবাল অথরিটির চল্লিশটিরও বেশি আন্তর্জাতিক ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেশন কোর্স নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি বাংলাদেশে শুরু করেছে ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি) সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম। প্রতিষ্ঠানটি গত ২ বছর ধরে বিগ ডাটা, মেশিন লার্নিং, ক্লাউড কম্পিউটিং, ইনফরমেশন সিকিউরিটি, আইটি সার্ভিস ম্যানজমেন্ট-আইটিআইএল, ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট-প্রিন্সটু, এজাইল স্ক্র্যামসহ বিভিন্ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম প্রদান করছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন জানান, এসব বিষয়ে প্রশিক্ষনের জন্য আগে আমাদের পাশ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষনের জন্য যেতে হতো।
কিন্তু এখন চিত্র পাল্টে গেছে। অনেক প্রফেশনালই এখন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, কানাডা, নরওয়ে থেকে আমাদের এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসে। বর্তমানে ব্যাংক, টেলিকমসহ বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গ্লোবাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট এজেন্সীতে প্রশিক্ষণার্থী হিসাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল (পিএমপি)
প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট (পিএমআই) দ্বারা এই সার্টিফিকেশন কোর্সটি তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২১০ টি দেশে প্রায় ৭ লক্ষের অধিক পিএমপি কোর্সের অবস্থান রয়েছে।
এই কোর্সের ফি ১৪০০ থেকে ৩০০০ ডলারের মধ্যে হয়ে থাকে। কোর্স করার জন্য পিএমপি এক্সাম প্রিপারেশন বুট ক্যাম্পে অংশ নিতে হবে। সেখানে সাইকোমেট্রিক বেইজড পরীক্ষা নেয়া হবে। সেই পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করবে, আপনি কোর্সটি করতে পারবেন কি না।
দেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত প্রযুক্তি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ধরনের কোর্সগুলো সাধারণত পেশাদারদের জন্য। কিন্তু কেউ যখন কম্পিউটার সায়েন্স বা কোনো কোনো বিষয় থেকে পড়াশোনা করে বের হন তখন চাকরি ক্ষেত্রে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি পেশাদার সনদকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এ জন্য পেশাদার সনদ অর্জন ও দক্ষতা অর্জন জরুরি। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি নেটওয়ার্কিংয়ে আগ্রহী হতে চান তবে তার জন্য নেটওয়ার্কিং বিষয়ক প্রশিক্ণ, কেউ যদি সার্ভার বা সিকিউরিটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে চান তবে তিনি সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রথমত স্থানীয়ভাবে এ প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। এরপর আন্তর্জাতিক সনদ অর্জন করতে অনলাইনে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হয়। এই সনদ অর্জন করতে পারলে বিশ্বের সবখানেই মর্যাদা ও গুরুত্ব পাওয়া যায়। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য যোগ্যতা ও পরীক্ষা পদ্ধতি আলাদা।