আমরা এমন একটি সময়ে বসবাস করছি, যেখানে আমরা সবসময় কিছু না কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। শত ব্যস্ততার মাঝে হাতের স্মার্টফোনটি যদি কম সময়ে দ্রুত চার্জ নিতে সক্ষম হয়, তাহলে এই সুন্দর পৃথিবীর নান্দনিকতা উপভোগ করার জন্য একটি বেশি সময় পাওয়া যায়। আপনাকে এই বাড়তি সুবিধাটুকু দিতে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে এসেছে ফাস্ট চার্জিং টেকনোলজি।
এরই মধ্যে কিছু স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিগত কয়েক বছরে ফাস্ট চার্জিং টেকনোলজি নিয়ে এসে বাজারে দারুণ সাড়া ফেলেছে। এরমধ্যে কয়েকটার নামও আপনি শুনে থাকবেন, যেমন- VOOC ফ্ল্যাশ চার্জ, ড্যাশ চার্জ, কুইক চার্জ ইত্যাদি। এই ফাস্ট চার্জিং টেকনোলজিগুলো অত্যন্ত দ্রুত ফোন চার্জ করতে সাহায্য করে। ফাস্ট চার্জিং টেকনোলজি বিষয়টি বুঝতে হলে, আগে স্মার্টফোন কীভাবে চার্জ হয় তা জনে নেওয়া যাক। অধিকাংশ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই রিচার্জেবল লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করে, যাতে একইসাথে একটি পজিটিভ ও নেগেটিভ ইলেক্ট্রোড এবং একটি ইলেক্ট্রোলাইট দিয়ে তৈরি। ব্যাটারির মধ্যকার লিথিয়াম-আয়ন একটা ইলেক্ট্রোড থেকে আরেকটা ইলেক্ট্রোডে চলাচল করে, এতে করে ফোনের চার্জ হওয়া বা না হওয়া নির্ধারিত হয়। ফোন চার্জিংয়ের সময় কিছু পাওয়ার চার্জারে প্রবাহিত হয়। একটি বিল্ট-ইন রেগ্যুলেটর ব্যাটারিকে অতিরিক্ত পাওয়ার নেওয়া এবং জ্বলে যাওয়া থেকে বিরত রাখে। অর্থাৎ, স্মার্টফোনের ইনটারনাল রেগ্যুলেটর চার্জের পেরিমিটার সেট করে দেয়, যা চার্জিংকে সীমিত করে।
চার্জের ফলাফল মাপা হয় অ্যাম্পিয়ার (এএমপি) এবং ভোল্টেজে (ভি)। অ্যাম্পিয়ার হলো চার্জার থেকে সংযুক্ত ডিভাইসে প্রবাহিত হওয়া ইলেক্ট্রিসিটির পরিমাণ এবং ভোল্টেজ হলো ইলেক্ট্রিক কারেন্টের শক্তি। ভোল্টেজকে অ্যাম্পিয়ার দ্বারা গুণ করলে ওয়াট পাওয়া যায়, যা মোট পাওয়ারের পরিমাণ। ব্যাটারির শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য অধিকাংশ উৎপাদকরা হয় অ্যাম্প্যার বুস্ট করেন না হয় ভোল্টেজে তারতম্য করেন, যার জন্য ডিভাইস দ্রুত চার্জ নিতে পারে। বাজারে বর্তমানে বেশকিছু ফাস্ট চার্জার পাওয়া যাচ্ছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কোয়ালকম কুইক চার্জার, ওয়ানপ্লাস ড্যাশ চার্জার, মিডিয়াটেক পাম্প এক্সপ্রেস, অপো VOOC ফ্ল্যাশ চার্জ ইত্যাদি।
কুইক চার্জ দ্রুত ভোল্টেজ বাড়ানোর মাধ্যমে ফাস্ট চার্জ করে। কোম্পানির চিপসেটের ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে চার্জিং পদ্ধতি হিসেবে বর্তমান বাজারে এটি অনেক বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। মিডিয়াটেক পাম্প এক্সপ্রেস প্রযুক্তিও ফোনে উচ্চামাত্রায় পাওয়ার চার্জিংয়ের জন্য বিশ্বস্ত।
চার্জিং গতি এবং নিরাপত্তার অসাধারণ সমন্বয়ে অপো VOOC (ভোল্টেজ ওপেন লুপ মাল্টি-স্টেপ কনস্ট্যান্ট-কারেন্ট চার্জিং) দিচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির এবং নিরাপদ চার্জিং পদ্ধতি। অপো’র VOOC চার্জ এবং ওয়ানপ্লাস-এর ড্যাশ চার্জ তাত্ত্বিকভাবে একই। ফাস্ট চার্জিংয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, কখনও কখনও যা বিষ্ফোরণেরও কারণ হতে পারে।
VOOC ব্যবহার করলে গেম খেলা এবং চার্জিংয়ের সময় ফোন গরম হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন। বর্তমান বাজারে এটিই একমাত্র প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে গেম খেলা বা মুভি দেখার সময়ও হ্যান্ডসেট সমানতালে চার্জ নিতে সক্ষম। VOOC প্রযুক্তিতে যেহেতু ৪গুণ বেশি দ্রুততম সময়ে চার্জ হয়, তাই ফোনের তাপ বেড়ে যাওয়া রোধ করতে অ্যাডাপটর থকে পোর্ট পর্যন্ত পাঁচ-স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে।
VOOC’কে দ্রুততম চার্জিং প্রযুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে, এতে ভোল্টেজ কমানো সার্কিট এর পরিবর্তে এমসিইউ ব্যবহার করা হয়েছে। পাঁচ-স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তার মধ্যে আছে VOOC টেস্টার বিল্ট ইনটু অ্যাডাপটার, VOOC আইডেন্টিফিকেশন বিল্ট ইনটু অ্যাডাপটার, VOOC আইডেন্টিফিকেশন বিল্ট ইনটু ফোন, ভোল্টেজ টেস্টার বিল্ট ইনটু ফোন এবং ফিউজ বিল্ট ইনটু ফোন। এই সবগুলো প্রযুক্তি চার্জিংয়ের সময় হ্যান্ডসেটের তাপমাত্রা অনেক কমিয়ে রাখে।
VOOC চার্জ কেবলে ৭-পিন ইনটারফেস ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে সাধারণ ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তিতে ৫-পিন ইনটারফেস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মাল্টি-চ্যানেল চার্জিংয়ের মাধ্যমে তাপ এবং মাত্রাতিরিক্ত কারেন্ট কমিয়ে এনে, VOOC চার্জিং প্রক্রিয়াকে অনেক বেশি নিরাপদ করে তুলেছে।