অনেক সময়ই দেখা যায় সনদপত্রে শিক্ষার্থীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম বা পদবী ভুল থাকে। সনদপত্রে এ ধরনের ভুল লেখা থাকলে কী করবেন বা কীভাবে তা সংশোধন করবেন তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সনদপত্রে এ ধরনের ভুল থাকলে গড়িমসি না করে যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। চলুন তাহলে জেনে নেই কীভাবে এ ধরনের ভুল সংশোধন করবেন।
নাম সংশোধনের প্রাথমিক কাজ:
নাম সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সেকশন অফিসার মো. আবু বকর মিয়া বলেন, নাম (ছাত্র/ছাত্রীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, পদবী) সংশোধনের জন্য প্রথমে একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর সার্টিফিকেট নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, শাখা, পরীক্ষার সাল, পরীক্ষা কেন্দ্রের নাম, রোল নম্বর, বোর্ডের নাম এবং জন্মতারিখ উল্লেখ করতে হবে।
এরপর শিক্ষা বোর্ডের `তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্র` অথবা অনলাইন থেকে নাম সংশোধনের আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহের পর প্রার্থী স্বহস্তে নির্ভুলভাবে তা পূরণ করবেন। প্রার্থীর নাম, বাবার বা মায়ের নাম ও পদবী সংশোধনের ফি বাবদ প্রতি পরীক্ষার জন্য ৫০০ টাকা সোনালী ব্যাংকের যে কোনো শাখা হতে সোনালী সেবার মাধ্যমে জমা দিতে হবে। এ ফি সোনালী ব্যাংকের ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে বোর্ডের সচিব বরাবর জমা দিতে হবে।
যেসব কাগজ পত্র জমা দিতে হবে:
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সেকশন অফিসার মো. আবু বকর মিয়া বলেন, আবেদনপত্রের সঙ্গে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি (মূল সার্টিফিকেট না থাকলে মার্কটিসের), নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড/প্রবেশপত্র/নম্বরপত্র/মূল সনদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক সত্যায়িত কপি, ব্যাংক ড্রাফটের মূল কপি, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কাটিং, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি এবং প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছে নাম সংশোধন সম্পর্কে এফিডেভিট করে তার মূল কপি জমা দিতে হবে।
যেভাবে এফিডেভিট করবেন:
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নাম সংশোধনীর আবেদনপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রার্থীর নিজের নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে তার বয়স যদি ১৮ বছরের বেশি হয়, তাহলে তিনি নিজেই এফিডেভিট করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ২০০টকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের নিকট অফিডেভিট করাতে হবে। তবে প্রার্থীর বয়স যদি ১৮ বছর পূর্ণ না হয় বা প্রার্থী যদি তার মা-বাবার নাম সংশোধন করতে চান, তাহলে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রার্থীর বাবা কর্তৃক প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছ থেকে এফিডেভিট করতে হবে। পিতা জীবিত না থাকলে মাতাকে দিয়ে এফিডেভিট করতে হবে। পিতা ও মাতা উভয়ই জীবিত না থাকলে আইনানুগ অভিভাবক এফিডেভিট করতে পারবেন। তবে আইনানুগ অভিভাবকত্ব জেলা জজের সার্টিফিকেটও জমা দিতে হবে। এফিডেভিটে পাসের সন, রোল নম্বর, বোডের নাম এবং সংশোধনের বিষয় সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে।
নাম পরিবর্তন প্রক্রিয়া:
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সেকশন অফিসার মো. আবু বকর মিয়া জানান, নাম সংশোধনের জন্য আবেদন গ্রহণের এক মাসের মধ্যে বোর্ড আবেদনকারী এবং তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষকসহ একটি মিটিংয়ে বসে। এ মিটিংয়েই প্রার্থীর আবেদন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মিটিংয়ে বসার ১০ থেকে ১৫ দিন আগেই আবেদনকারীর ঠিকানায় চিঠি দিয়ে জানানো হয়। জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বোর্ডের চেয়ারম্যানের বিশেষ বিবেচনায় একদিনের মধ্যেও নাম সংশোধন করার সুযোগ আছে।