জিপি হাউজে ৬ নভেম্বর এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হলো স্টার্টআপগুলোর জন্যে সাড়ে ৪ মাসব্যাপী গ্রামীণফোন অ্যাকসেলারেটর প্রোগ্রাম (জিপিএ)-এর ষষ্ঠ ব্যাচের কার্যক্রম। ভবিষ্যতের উদ্যোক্তাদের জন্যে ডিজাইন করা এই প্রোগ্রামে মূলত সেরা স্টার্টআপগুলোকে নির্বাচন করে সেসব স্টার্টআপসমূহে গ্রামীণফোন অ্যাকসেলারেটরের রিসোর্স বা সুযোগ-সুবিধাসমূহ ব্যবহারের সুযোগ করে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
গ্রামীণফোন অ্যাকসেলারেটর প্রোগ্রাম-এর ষষ্ঠ ব্যাচে (প্রাক-অ্যাকসেলাটেরর -৪৭৬, অ্যাকসেলারেটর-৬৪৫)অন্তর্ভুক্তির জন্যে মাত্র ৩ সপ্তাহেই মোট এগারোশ’র বেশি আবেদন জমা পড়ে। সবগুলো আবেদন যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে নির্বাচিত ৪৫ টি দলকে যথাযথ নিয়মানুযায়ী (বৈধ কাগজপত্র দাখিল, একক ও দলগত সাক্ষাৎকার) আমন্ত্রণ জানানো হয়। বুট-ক্যাম্পে অংশ নেয়া দলগুলোর মাঝে ৩৫ টি দলকে পরবর্তী পর্বের জন্যে মনোনীত করা হয়। এই পর্যায়ে স্টার্টআপগুলোকে মুখোমুখি স্বাক্ষাতকার এবং পিচ-প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিস্তৃত পড়িসরে মূল্যায়ন শেষে তুমুল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মোট ৯টি প্রতিষ্ঠান জিপি অ্যাকসেলারেটরের ষষ্ঠ ব্যাচের চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ করে নেয়।
এই আয়োজন সম্পর্কে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “২০২১ সালের মধ্যে তরুণদের জন্য ১০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরী করা হবে আর এই স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোই আমাদের এই লক্ষ্য অর্জনে অন্যতম সহায়ক হবে। এই তরুণদের জন্য সরকারের সকল প্রকার সহায়তা অব্যাহত থাকবে। আমি জিপি অ্যাকসেলারেটরের উদ্ভাবনী প্রজেক্টগুলো দেখে অভিভূত এবং উজ্জীবিত হয়েছি। তরুণদের জন্য এই ধরনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ জানাই।”।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি বলেন, “ডিজিটাইজেশনের এই যুগে অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তনসমূহের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্যে নিজেদের উপযোগী করে তোলাটাই আমাদের জন্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের ডেভেলপার, উদ্ভাবক এবং স্টার্টআপসমূহকে সহায়তা প্রদানের লক্ষে আমরা জিপি অ্যাকসেলারেটর প্রোগ্রামটি আয়োজন করে থাকি”।
গ্রামীণফোন অ্যাকসেলাটেরর ২.০ মূলত প্রাক-অ্যাকসেলাটেরর এবং অ্যাকসেলাটেরর- এই দুটি ভাগে আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রাক-অ্যাকসেলারেটর দুই মাসের একটি আয়োজন। এতে অংশগ্রহণকারী দলসমূহ তাদের ব্যবসায় ধারণাটির যৌক্তিকতা প্রমাণ করে থাকেন এবং তাদের ব্যবসায় ধারণার মৌলিক দিকটি উপস্থাপন করে থাকেন। এই পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ এবং মেন্টরশিপ প্রদানের মাধ্যমে দলসমূহের ব্যবসায় ধারণাসমূহকে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেবার জন্যে এবং পণ্য কিংবা সেবা বাজারে বিক্রয়ের উপযোগী করে তুলতে সহায়তা প্রদান করা হয়।
অ্যাকসেলারেটর প্রোগ্রামটি সাড়ে ৪ মাসব্যাপী একটি আয়োজন। এতে এমন দলগুলোই অংশগ্রহণ করে যাদের ইতোমধ্যেই বিক্রয় উপযোগী পণ্য কিংবা সেবা প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচিত দলসমূহ দেশী-বিদেশী মেন্টর, বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ এবং পেশাজীবীদের সহায়তায় ব্যবসায়ের উন্নয়নের জন্যে খুবই দরকারী বিষয়সমূহ, যেমন টার্ম-শীট, ভ্যালুয়েশন, ফাইনেন্সিয়াল মডেলিং, ব্র্যান্ডিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। আর প্রোগ্রামের শেষ পর্যায়ে স্টার্টসগুলোর ব্যবসায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ নিশ্চিত সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করা হয়ে থাকে। আর্থিক পরিমাপে এই সহায়তা সমূহের বাজারমূল্য প্রায় ৬৫,০০,০০০ টাকার সমমানের।
গ্রামীণফোন অ্যাকসেলারেটর প্রোগ্রামের কার্যকরি অংশীদার সীডস্টার-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, পিয়েরে অ্যালাইন ম্যাসন বলেন, “গ্লোবাল স্টার্টআপ মানচিত্রে বাংলাদেশকে এক অনন্য অবস্থানে পৌঁছে দেবার অভিন্ন লক্ষ্যে বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের সাথে একত্রে কাজ করে চলেছে সীডস্টার। স্থানীয় স্টার্টআপসমূহকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দারুণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে জিপি অ্যাকসেলাটেরর প্রোগ্রাম।“
এ প্রসঙ্গে মিনহাজ উদ্দিন আনোয়ার, হেড অব ইকোসিস্টেম, বলেন, “আমরা ব্যাচ-৬# বিয়ন্ড বাউন্ডারিজ এর নয়টি স্টাস্টআপগুলোকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সহায়তা করতে আগ্রহী। তারা যেসব সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, সেই সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধানে আমরা তাদের সহায়তা প্রদান করবো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন সীডস্টার-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা পিয়েরে অ্যালাইন ম্যাসন; বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশনের স্টার্টআপ বাংলাদেশ-এর বিনিয়োগ উপদেষ্টা টিনা জাবীন; বেসিস এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর; এমওএআর এর সহ প্রতিষ্ঠাতা নাবিলা নওরীন; গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও ও সিএমও ইয়াসির আজমান; গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি এবং অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।
গ্রামীণফোন অ্যাকসেলারেটর-এর ষষ্ঠ ব্যাচের চূড়ান্ত পর্যায়ে স্থান করে নেয়া দলসমূহ হলো- বেষ্ট প্রাইস (ব্যবসায়িক লেনেদেনের ক্ষেত্রে নিলাম নির্ভর মার্কেটপ্লেস), ঢাকা কাস্ট (ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যে বিশেষ সেবা), দর্জি-ই (অনলাইন নির্ভর টেইলর সেবা), এক্সপ্লয়েট (পর্যটন ও আবাসন সেবা), ল্যান্ড-নক (ফিল্ডে নিয়োজিত কর্মীদের পর্যবেক্ষণ করার সেবা), লেট’স ফার্নিশ (আসবাবপত্র ভাড়ার প্ল্যাটফর্ম), পোষাপেটস (গৃহপালিত পোষা প্রাণীদের জন্যে আইওটি নির্ভর সেবা), আমার-স্টক (শেয়ার মার্কেট সংক্রান্ত সেবা) এবং শপ-ওয়ে (বাংলাদেশের দ্রুততম ডিজিটাল বিপণন ব্যবস্থা)।