গত বছর চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দেশের বাজারে সরবরাহকৃত চারটি স্মার্টফোনের তিনটিই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ছিল। অথচ একই বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বাজারে সরবরাহকৃত চারটি স্মার্টফোনের মাত্র একটি ছিল স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এবং বাকি তিনটি ছিল আমাদানীকৃত। বাংলাদেশ সরকার দেশে সিবিইউ (সম্পূর্ণভাবে তৈরি ইউনিট) স্মার্টফোন আমদানি নিরুৎসাহিত করছে।
একই সঙ্গে দেশের চাহিদা পূরণে স্থানীয়ভাবে স্মার্টফোন উৎপাদন এবং সংযোজনে দেশী-বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোকে নানা ধরনের ছাড় দিচ্ছে, যা দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করছে। ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোন বাজার নিয়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ এখন স্মার্টফোন উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশের হ্যান্ডসেটের বাজার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে। গত বছরজুড়ে ডিভাইস সরবরাহ ২ কোটি ৯৬ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের সেলফোন বাজারের ৭৬ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে নিয়ে আধিপত্য বিস্তার করে আছে ফিচার ফোন। গত বছর বাজারটিতে মোট যতসংখ্যক ইউনিট সেলফোন সরবরাহ হয়েছে, তার মধ্যে ২ কোটি ২৭ লাখ ইউনিটই ছিল ফিচার ফোন। আইডিসির তথ্যমতে, গত বছর ফিচার ফোন সরবরাহে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির দেখা মিলেছে। অন্যদিকে গত বছরজুড়ে স্মার্টফোন সরবরাহ ৬৯ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে। শুধু স্মার্টফোন সরবরাহে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি এসেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
২০১৯ সালের জুনে বাংলাদেশ সরকার দেশীয় স্মার্টফোন উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে সম্পূর্ণভাবে তৈরি স্মার্টফোন আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক আগের ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। ফলে গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে স্মার্টফোন বাজার এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হয়। তবে ফিচার ফোন বর্ধিত আমদানি শুল্কের বাইরে থাকায় গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে সরবরাহ বাড়ে ২০ দশমিক ১ শতাংশ।
চীনভিত্তিক ব্র্যান্ডগুলো দেশের বাজারে তুলনামূলক দামি ও উন্নত স্পেসিফিকেশনের স্মার্টফোন মডেল সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। এর সুবাদে স্মার্টফোনের গড় বিক্রয়মূল্য (এএসপি) গত বছর আগের বছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৯৯ ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া গত বছর দেশের স্মার্টফোন বাজারে ফোরজি প্রযুক্তি সমর্থিত স্মার্টফোনের দখল বেড়ে ৬৯ শতাংশে পৌঁছেছে। ফোরজি সমর্থিত স্মার্টফোনের চেয়ে থ্রিজি ফোনের দাম প্রায় অর্ধেক হওয়ায় বাজারের ৩১ শতাংশ এখনো থ্রিজি ফোনের দখলে রয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছর স্থানীয়ভাবে সংযোজন করা স্মার্টফোনের সংখ্যা ২০ লাখ ইউনিট ছাড়িয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৭ লাখ ইউনিট। ২০১৮ সালে সরকার দেশী-বিদেশী মোট নয়টি কোম্পানিকে স্থানীয়ভাবে সেলফোন সংযোজনের অনুমতি দেয়। দুই বছরেরও কম সময়ে এখন দেশে উৎপাদিত স্মার্টফোন দিয়ে স্থানীয় চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। দেশে সেলফোন সংযোজনকারী কোম্পানিগুলো হলো স্যামসাং, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, এডিসন ইন্ডাস্ট্রিজ, কার্লকেয়ার টেকনোলজি বিডি, আলামিন অ্যান্ড ব্রাদার্স, আনিরা ইন্টারন্যাশনাল, ওকে মোবাইল, ট্রান্সশন বাংলাদেশ এবং বেস্ট টাইকুন (বিডি) এন্টারপ্রাইজ। এছাড়া দেশে স্মার্টফোন উৎপাদন শুরু করেছে রিয়েলমি।
গত বছর বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারে স্থানীয় ডিভাইস ব্র্যান্ড সিম্ফনিকে পেছনে ফেলে শীর্ষ অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে স্যামসাং। গত বছরজুড়ে স্যামসাং ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন সরবরাহ ১১ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের চেয়ে ৮৭ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। বিশেষত টায়ার-২ ও টায়ার-৩ ক্যাটাগরির শহরগুলোয় কার্যক্রম সম্প্রসারণ স্যামসাংকে শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসতে সহায়তা করেছে। দেশের বাজারে স্যামসাং যতসংখ্যক ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছে, তার এক-পঞ্চমাংশ ছিল গ্যালাক্সি এ২ কোর ডিভাইসটি। এছাড়া গ্যালাক্সি এ১০ ডিভাইস বাংলাদেশের বাজারে স্যামসাং ব্র্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিক্রি হওয়া স্মার্টফোন।
গত বছরজুড়ে সিম্ফনির স্মার্টফোন সরবরাহ ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ কমায় বাজার দখলে দ্বিতীয় অবস্থানে জায়গা হয়েছে ব্র্যান্ডটির। গত বছর আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় উৎপাদনে গুরুত্ব দেয় সিম্ফনি। একই সময় পুরনো মডেলগুলোর মূল্য নতুন করে নির্ধারণ করে প্রতিষ্ঠানটি। অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত স্পেসিফিকেশনের ডিভাইস সরবরাহে জোর দিচ্ছে সিম্ফনি।
গত বছর ডিভাইস সরবরাহ ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে বাজার দখলে তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে জায়গা পেয়েছে ট্রানশান। আলট্রা-লো-অ্যান্ড ডিভাইস দিয়ে বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্ব দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আইডিসির তথ্যমতে, বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারে চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন ও শাওমি।