‘হুয়াওয়ে বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি’ নামে একটি বিশেষায়িত নলেজ-শেয়ারিং সেন্টার ঢাকায় চালু করেছে হুয়াওয়ে বাংলাদেশ।
ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আজ গুলশানের বে’স গ্যালারিয়ায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মোঃ খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া (সিনিয়র সচিব) ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যান জুনফেং, চিফ টেকনিক্যাল অফিসার মাজিয়ান-সহ অন্যান্য ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। আরও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি কেমন হবে
সাত হাজার বর্গফুটের হুয়াওয়ের এই অ্যাকাডেমিটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত।
অত্যাধুনিক আইসিটি প্রযুক্তি ও সল্যুশন, ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স ছাড়াও গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের মাধ্যমে হুয়াওয়ে যা অর্জন করেছে সে সকল জ্ঞানও এখানে সরকারি কারিগরি কর্মকর্তা, টেলকো অপারেটর, অ্যাকাডেমিশিয়ান, সিএসই/ইইই শিক্ষার্থীসহ সামগ্রিক ইকোসিস্টেম পার্টনারদের কাছে তুলে ধরা হবে।
এই অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ চলমান রয়েছে।
এখন বাংলাদেশ এই অঞ্চলের মেধার কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশ একাডেমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, তা হলো বাংলাদেশ এ অঞ্চলের ট্যালেন্ট হাবে পরিণত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
অন্যদিকে, বহু বছর থেকে গবেষণা ও উন্নয়নে নিজেদের বিশাল বিনিয়োগের ফলে হুয়াওয়ে অসংখ্য আইসিটি পেটেন্ট এবং জ্ঞান অর্জন করেছে এবং অনেকগুলো বছর ধরে বাংলাদেশে নতুন-নতুন প্রযুক্তি ও সল্যুশন নিয়ে আসার মাধ্যমে হুয়াওয়ে আমাদের টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছে।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশ অ্যাকাডেমির লক্ষ্যও এর ব্যতিক্রম নয়। আমি সত্যিকারভাবে হুয়াওয়েকে ধন্যবাদ জানাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ একাডেমি বাংলাদেশের আইসিটি খাতের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।”
এই নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, “ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে বড় উদাহরণ।।
চীনা কর্মকরতা দের বক্তব্য
এক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের সাথে এর প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিনিময় করতে পারে। হুয়াওয়ে চীনের অন্যতম অন্যতম সেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং এটি গবেষণা ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব প্রদান করছে।”
তিনি আরো বলেন, “হুয়াওয়ে বাংলাদেশে ২৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানটি এদেশে নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে; যা বেশ আশাব্যঞ্জক বলে আমি মনে করি। হুয়াওয়ে বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি বাংলাদেশের ইকোসিস্টেম সহযোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মোঃ খলিলুর রহমান বলেন” গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের আইসিটি ইকোসিস্টেমের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে হুয়াওয়েকে এর নিরলস প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই, এবং এটি সত্যিই প্রশংসনীয়।
আমি বিশ্বাস করি হুয়াওয়ে বাংলাদেশ একাডেমি আইসিটি জ্ঞান আদান-প্রদানের মাধ্যমে এই ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। “
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, “বাংলাদেশে এই ধরনের একটি অ্যাকাডেমি আমাদের দেশের মানুষের জন্য এই খাতের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সর্বশেষ আইসিটি প্রযুক্তি ও প্রায়োগিক জ্ঞান অর্জনের একটি দুর্দান্ত উপায় হবে বলে মনে করি।
এই ধরনের একটি উদ্যোগ এবং সেই সাথে তারা এখন পর্যন্ত অন্যান্য যেসব উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার জন্য আমি হুয়াওয়েকে ধন্যবাদ জানাই। এই ধরনের একটি উদ্যোগ বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ উন্মোচনের সম্ভাবনা রাখে বলে আমি মনে করি।”
অনুষ্ঠানে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, “হুয়াওয়ে বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি চালু করার মাধ্যমে হুয়াওয়ে বাংলাদেশের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জনের সুযোগ উন্মুক্ত করবে।
বিটিআরসি দেশে এ ধরনের ডিজিটাল রূপান্তরকে ত্বরাণ্বিত করার জন্য যে কোন ধরনের সহযোগিতা প্রদানে সচেষ্ট রয়েছে।”
হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার প্যান জুনফেং বলেন, “আমাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ইকোসিস্টেম সহযোগীদের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক হতে পারে।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি একটি নলেজ হাব (জ্ঞান অর্জনের কেন্দ্র) হিসেবে পরিণত হবে; যেখানে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও বৈশ্বিক বিভিন্ন প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হবে। এটি স্মার্ট বাংলাদেশ এর লক্ষ্য পূরণে সরকার, আইসিটিখাতের সকল সহযোগী, শিক্ষক-গবেষক-ছাত্রসহ সকলকে এক জায়গায় নিয়ে আসবে বলে আমি প্রত্যাশা করি”।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশ অ্যাকাডেমির সুবিধা
এই হুয়াওয়ে বাংলাদেশ অ্যাকাডেমির অডিও-ভিজ্যুয়াল সাপোর্ট সম্বলিত চারটি জোন রয়েছে। উন্নত সুযোগ-সুবিধাসহ আরও আছে প্রশিক্ষণ কক্ষ, ষ্টুডিও-গ্রীনরুম (ভিডিও শুটিং/অনলাইন প্রশিক্ষণ/যোগাযোগ), প্রদর্শনী ও প্রেজেন্টেশন (উপস্থাপন) এলাকা এবং হুয়াওয়ে আইডিয়া হাব।
বাংলাদেশে ডিজিটাল রূপান্তরকে ত্বরাণ্বিত করতে গত কয়েক বছর ধরে হুয়াওয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিনসের পর বাংলাদেশে এই ধরণের অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করল হুয়াওয়ে।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশে আইসিটি শিল্পের দ্রুত বিকাশের জন্য বাংলাদেশে গ্লোবাল সার্ভিস রিসোর্স সেন্টারও চালু করতে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান, যেখানে বাংলাদেশ থেকে ১৫০ জন আইসিটি ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেয়া হবে যারা বিশ্বব্যাপী আইসিটি ক্ষেত্রে কাজ করবে।
অন্যদিকে আইসিটি ইনকিউবেটর প্রোগ্রাম, সিডস ফর দ্য ফিউচার ও বাংলাদেশ আইসিটি স্কিল কম্পিটিশনসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে আইসিটি খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিভাবান তরুণদের দক্ষ করে তোলার মাধ্যমে দেশের ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেম তৈরিতে সাহায্য করছে হুয়াওয়ে।
এই প্রোগ্রামগুলো বাংলাদেশের নিজস্ব ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেমের বিকাশে ভূমিকা রাখছে।