প্রায় প্রতিদিনই দেশে বিপুল পরিমান খাদ্য অপচয় হচ্ছে, একই সাথে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারনে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। একই সিকির অপরদিকের চিত্রে পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্যের অভাবে ভুগছেন নির্দিষ্ট একটি জনসংখ্যা। উপরুক্ত দৃশ্যকল্পটি আরো পরিষ্কার হয়ে ওঠে পবিত্র মাহে রমজানে, অস্বাস্থ্যকর ও অতিরিক্ত খাবারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। বিলাসি ইফতারির নামে ডাস্টবিনে জায়গা পাচ্ছে অতিরিক্ত খাবার, অন্যদিকে শুধু পানি আর শুকনো মুড়ির নির্ভরতায় রোজা আছেন দেশের সহস্র মানুষ। টেকসই লক্ষমাত্রা ৩ (SDG-3) অর্জনে ও জনগণের মাঝে নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস এবং অপচয় রোধে সচেতনতা তৈরী করার প্রকল্প পরিকল্পনার লক্ষ্যে জেনল্যাব ও এইচ এন্ড এইচ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে “হেলথ ও ফুড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট” বিষয়ে ৯ এপ্রিল ২০২২ জাতীয় প্রেস ক্লাবে গোল টেবিল আলোচনাটি আয়োজিত হয়।
জেনল্যাবের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাতুল দেব এবং এইচ এন্ড এইচ ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার জনাব এম. সাফাক হোসেনের পরিকল্পনায় ও রাতুল দেবের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়।
গাইবান্ধা ১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড۔ এম.সাখাওয়াত হোসেন (অবঃ), জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জনাব শাইখ সিরাজ উপস্থিত ছিলেন|
গুরুত্বপূর্ণ এই আলোচনায় সংস্লিষ্ট বিভাগ ও সরকারি দপ্তর থেকে উপস্থিত ছিলেন আরো অনেকে, গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা۔অনুপম হোসেন, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের এনএইচটিটিএই এফ এন্ড বি প্রোডাকশন বিভাগীয় প্রধান জাহিদা বেগম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা অধিদপ্তর থেকে জনাব মোঃ রেজাউল করিম, হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার এবং প্রেসিডেন্ট ডাঃ শেখ মইনুল খোকন, বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি থেকে এক্সেকিউটিভ বডির দুইজন প্রতিনিধি, ইউনিস্যাব প্রেসিডেন্ট শেমি ওয়াদুদ, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি সদস্য ও বিএনও লুব্রিক্যান্টস এর পরিচালক জনাব সালাউদ্দিন ইউসুফ, জেনল্যাবের যোগাযোগ ও জনসংযোগ ব্যবস্থাপক ইশরাত বিনতে রউফ, জেনল্যাবের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা ব্যবস্থাপক চৌধুরী হাসান ইবনে ওবায়েদ, জেসিএই ঢাকা নর্থ প্রেসিডেন্ট শাখাওয়াত হোসেন সবুজ, স্পনসর আরমেক সার্ভিসেস লিমিটেড এর প্রতিনিধি মেজর۔ নুরুল আফসার(অব) এর প্রতিনিধি মেজর খালেদ তাদের মাঝে প্রমুখ।
জেনল্যাবের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাতুল দেবের সঞ্চালনায় ৩ঃ১৫ মিনিটে গোল টেবিল আলোচনা শুরু হয়, তিনি বলেন, আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু নির্দ্বিধায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ণ লক্ষ্যমাত্রা ৩ এবং ১২ অর্জনের যাত্রায় এই আলোচনা প্রয়োজনীয়। তিনি আরো বলেন, আজকের এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে সকলের মতামত তুলে ধরা এবং একটি গঠনমূলক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া।
গনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনুপম হোসেনের বক্তব্যের মাধ্যমে গোল টেবিল আলোচনা সঞ্চারিত হয়, এককালের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার তার রোমাঞ্চকর বুলির মাধ্যমে তার মতামত তুলে ধরেন, পাশাপাশি চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্ষতিকারক খাদ্যদ্রব্য যেমন কোমল পানীয় এবং অন্যান্য প্যাকেটজাত পণ্যের প্রচারণার উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করার বিষয়ে মাননীয় সংসদ সদস্যের কাছে আন্তরিক অনুরোধ জানান।
গাইবান্ধা ১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমি মনে করি আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু আমাদের স্টেট পলিসিতে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশে সরকারের উপর এককভাবে দায়ীত্ব প্রেরণ করলে আশানরুপ ফলাফল পাওয়া কঠিন, বরং সরকার যদি ছোট বড় বেসরকারি ও যুবসংগঠনের সাথে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়ে উঠবে।
পরবর্তী বক্তব্য প্রদান করেন জেনল্যাবের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা ব্যবস্থাপক চৌধুরী হাসান ইবনে ওবায়েদ, তিনি আলোচনায় একটি নতুন দৃষ্টিকোণ সংযোজন করেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে গণ-সচেতনতা তৈরীতে যুব-সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। এই বিষয়ে যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জন-সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সঞ্চালক রাতুল দেব পরবর্তী বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য অনুরোধ করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড۔ এম.সাখাওয়াত হোসেনকে। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমরা স্বাভাবিক জীবনে আমাদের প্রয়োজনের অধিক খাদ্য ক্রয় এবং তৈরী করি যার দরুন আমাদের খাদ্য অপচয় হয়। পরিসংখ্যান মতে ২০২১ সালে বাংলাদেশে বার্ষিক ৭৫টন খাবার অপচয় করা হয়। তিনি মাননীয় সংসদ সদস্যের বরাবর অনুরোধ করেন যাতে খাদ্য অপচয় রোধে কার্যকরি নীতিমালা প্রনয়ণ করা হয়।
জেনল্যাবের যোগাযোগ ও জনসংযোগ ব্যবস্থাপক ইশরাত বিনতে রউফ জেন ল্যাবের পক্ষ থেকে সরকার, এনজিও, যুব উন্নয়ন সংস্থা গুলোর একযোগে জাতীয় ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলোতে “নিউট্রিশন প্লেট টেস্ট ” পাইলট প্রজেক্ট এর প্রস্তাব রাখেন l এই প্রজেক্ট এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি বন্টন ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব l
বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা অধিদপ্তর প্রতিনিধি জনাব মোঃ রেজাউল করিম বলেন, আমাদের দেশে যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশ কিছু রেগুলেশন নির্ধারিত থাকে, দুঃখজনকভাবে খাদ্য ব্যবসার ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত এইরুপ কোনো রেগুলেশন প্রেরণ করা হয় নি। তিনি আরো বলেন খাদ্য নিরাপত্তা অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ট্রেইনিং এবং পরিকল্পনার ভিত্তিতে খুব শিঘ্রই এইসব বিষয়ে কার্যকরী পদ্দক্ষেপ গ্রহন করবে। মাননীয় সংসদ সদস্যের বিজ্ঞাপন বিষয়ে মন্তব্যের প্রতুত্তরে তিনি বলেন, তারা আসন্ন জুন মাসের সময়কালে বিজ্ঞাপন বিষয়ক একটি নীতিমালা প্রেরণ করবেন।
পরিশেষে সঞ্চালকের বক্তব্যে সমগ্র আলোচনার মূল প্রত্যাশা ফুটে ওঠে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে খাদ্য সমস্যা সবসময়ে আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়, অপুষ্টির পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে জনসংখ্যার সিংহভাগ এর প্রতি বাড়ছে হৃদরোগ সহ অন্যান্য দূরারোগ্য রোগের ঝুকি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই অবস্থার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক পদক্ষেপের অধিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে সাধারণ জনগনের সচেতন আচরণ। নিজেদের অবস্থান থেকে সামান্য সচেতনতা খাদ্য অপচয় রোধ ও
স্বাস্থ্যকর জীবনপদ্ধতি নির্মাণের পাশাপাশি টেকসই লক্ষ্যমাত্রা-৩ (SDG-3) অর্জনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।