একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী কৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে বাংলাদেশে শিশুদের জন্য অনলাইন সুরক্ষার মাত্রা আরও জোরদার করতে গ্রামীণফোন, টেলিনর গ্রুপ ও ইউনিসেফ আজ একটি অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
ইন্টারনেট শিশুদের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা তথ্য, শিক্ষা, ক্ষমতায়ন এবং অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে তাদের বিকাশে সহায়তা করতে পারে। তবে অনুপযুক্ত উপকরণ ও আচরণের মাধ্যমে ইন্টারনেট শিশুদের সহিংসতা, নিগ্রহ ও অপব্যবহারের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
“বাংলাদেশে শিশুর অনলাইন সুরক্ষার মাত্রা বাড়ানো ও জোরদার করা” শীর্ষক প্রকল্পটি ১২ লাখ শিশু-কিশোরকে অনলাইনে নিরাপদ থাকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে। বাবা-মায়েদের সংবেদনশীল করে তোলাও এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য, কেননা ইন্টারনেটে শিশুরা কী ধরনের বিষয়বস্তুর সম্মুখীন হয়— তা নিয়ে ভীতির কারণে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে বাধা দেয়। এটা শিশুদের ইন্টারনেট থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগকে ব্যাহত করে। শিশুদের অনলাইন সুরক্ষায় সহায়তা দিতে এই প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ বাবা-মা, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
ইউনিসেফ -এর ডেপুটি রিপ্রেসেনটেটিভ ডারা জনস্টন বলেন, “বাংলাদেশে প্রতিটি শিশু যাতে সুরক্ষিত এবং সব ধরনের সহিংসতা, নিগ্রহ ও অপব্যবহার থেকে মুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করতে কাজ করে ইউনিসেফ। বাংলাদেশের সব শিশুকে অবশ্যই যথাযথ দক্ষতা অর্জন করে নিরাপদে এবং উপযুক্ত পরিবেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে সক্ষম হতে হবে। আমরা আশা করি এই অংশীদারিত্ব শিশুর অনলাইন সুরক্ষা সম্পর্কে বাস্তবসম্মত পরামর্শগুলোর প্রাতিষ্ঠানিকরণ করবে এবং এগুলো বাংলাদেশে শিশুদের জন্য শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।”
একটি সমন্বিত যোগাযোগ প্রচারাভিযানের মাধ্যমে প্রকল্পটি ২ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাবে, যা অনলাইনে শিশুর সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে সহায়তা করবে এবং সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণে অন্তত ৫০ হাজার মানুষকে সম্পৃক্ত করবে। এই প্রকল্প বাংলাদেশে অনলাইনে শিশু সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির বিষয়টিকে মূলধারায় আনার পরিকল্পনার বিষয়ে একমত হতে নীতিমালা প্রণয়নকারী অংশীদারদের আহ্বান জানাবে।
গ্রামীণফোন লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার ওলে বিয়র্ন বলেন, “আমরা যেহেতু ডেটা যুগে প্রবেশ করেছি, তাই সব বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে অনলাইনে নিরাপত্তার বিষয়টি কীভাবে আমাদের সমাজকে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রভাবিত করে তা বিশ্বময় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ইন্টারনেট যেভাবে একটি শিশুর শেখা, বিকাশ ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে তা আমরা অস্বীকার করতে পারি না।”
তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে একটি ভারমাস্য আনতে এবং শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ডিজিটাল অভিজ্ঞতা তৈরি করতে প্রতিবছর আমরা গ্রামীণফোনে এই চাইল্ড অনলাইন সেইফটি ক্যাম্পেইন আয়োজন করি। আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইন্টারনেট বিষয়ে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং যথাযথ জ্ঞান অর্জন করবে। শিক্ষা গ্রহণে তাদের ইন্টারনেটের সুবিধা গ্রহণ এবং স্মার্ট হওয়ার ও নিজের হৃদয়কে ব্যবহারের গুরুত্ব বুঝতে পারা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
এই অংশীদারিত্ব স্কুলগুলোর ভেতরে টেকসই ও অন্তর্নিহিত সমাধান তৈরির দিকে লক্ষ্য রাখার মাধ্যমে অফলাইন সুরক্ষা বিষয়ক সমস্যাগুলোরও সুরাহা করবে। এর আওতায় থাকা স্কুলগুলোতে একটি ফোরাম বা ‘সেফ ক্লাব’ তৈরিতে এটা সহায়তা করবে, যেখানে শিশু সুরক্ষার বিষয়গুলোর চিহ্নিত করা যেতে পারে।
চুক্তি স্বাক্ষরকালে টেলিনর গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট, (সাসটেইনইবিলিটি) মনীষা ডগরা বলেন, “টেলিনর গ্রুপ বিশ্বাস করে যে সংযোগ সমাজের ক্ষমতায়ন করতে এবং বৈষম্য কমাতে পারে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১০ নম্বর লক্ষ্য অর্থাৎ বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে আমাদের বৈশ্বিক অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আমরা ২০২০ সালের মধ্যে যেসব দেশে আমাদের কার্যক্রম রয়েছে সেসব দেশজুড়ে ৪০ লাখ শিশুকে অনলাইনে শিশুর নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে আজকের এই অংশীদারিত্ব। ২০১৪ সাল থেকে ইউনিসেফকে আমাদের বৈশ্বিক অংশীদার হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত এবং একসঙ্গে আমরা শিশু অধিকার বিষয়ক ও ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছি।”
কীভাবে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয় সে বিষয়ে শিশু, তাদের বাবা-মা ও লালন-পালনকারীদের সচেতন করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে এবং “বি স্মার্ট, ইউজ হার্ট” শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ঝুঁকি কমিয়ে আনতে ২০১৮ সাল থেকে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন ও টেলিনর।
এই প্রকল্প দেশব্যাপী ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী এবং ৭০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক, বাবা-মা ও লালন-পালনকালীদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। নিরাপত্তা পদক্ষেপকে ঘিরে আরও ভালো বোঝাপড়া, সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা গড়ে তুলতে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছিল এবং একটি ইতিবাচক ডিজিটাল শিক্ষার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক— উভয়েই এটা গ্রহণ করতে পারে।