২০২১ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের যে লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে তা যথাযথ পরিকল্পনা ও রূপরেখা তৈরি করে না এগোলে অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং হবে। এখন পর্যন্ত আমরা ১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছেছি। আগামী দুই বছরে আরও ৪ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য অর্জনের জন্য এখনই রোডম্যাপ তৈরি করা জরুরি। ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) আয়োজিত ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ১১ বছর পেরিয়ে দুর্দান্তভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকেও ডিজিটাল উন্নয়ন স্পর্শ করেছে। ১১ বছরের ডিজিটাল বাংলাদেশের এ পথ চলায় নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনী ইশতেহারে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিনটিকেই বর্তমান সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে উদযাপন করছে। এ লক্ষ্যে আইসিটি বিভাগ ‘সত্য-মিথ্যা যাচাই আগে, ইন্টারনেটে শেয়ার পরে’ এবং টেলিযোগাযোগ বিভাগ ‘সংযুক্তিতে উৎপাদন, দেশের হবে উন্নয়ন’ সেøাগানে দেশজুড়ে দিনটি উদযাপনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
গত ১১ বছর তথ্যপ্রযুক্তির নানা সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিটিআরসির হিসাবমতে, চলতি বছরের অক্টোবর শেষে দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। মোবাইল ফোন সাবসক্রাইবার ১৬ কোটি ৪১ লাখের বেশি।
আইসিটি বিভাগ সূত্র বলছে, তাদের ইনফো সরকার প্রকল্পের তৃতীয় ফেজের আওতায় ইতোমধ্যে দেশের তিন হাজার আটশ’র বেশি ইউনিয়নে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। কিন্তু প্রকৃত ডিজিটাল উন্নতির ক্ষেত্রে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে। এখ পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার কওে উৎপাদনশীল কাজের খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। দেশে তাই উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ইন্টারনেট পরিষেবার যথাযথ ব্যবহার বাড়ানো, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বাড়ানো যথাযথ প্রশিক্ষণে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, প্রতি ১০% ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পেনিট্রেশনের মাধ্যমে ১.৩৮ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঘটে। প্রতি এক হাজার ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ১০ জনের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু বিটিআরসির হিসাব ধরলে, প্রতি তিন মাসে একবার ইন্টারনেটে প্রবেশ করেছে এমন গ্রাহক নিয়ে বাংলাদেশের ইন্টারনেট গ্রাহক এখন ১০ কোটি। যেখানে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড গ্রাহক মাত্র ৭ শতাংশ।
গত ৯ বছরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশে উন্নতি হয়েছে। নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ৭৩ লাখ ৯৫ হাজার। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ২১৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
বিশ্বের ৬৭টি দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন পণ্য ও সেবা রপ্তানি হচ্ছে। এক বিলিয়ন ডলার এ খাত থেকে রপ্তানি আয় আসছে। তবে ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় করতে চায় সরকার। এ জন্য দেশে ২৮টি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক তৈরি করা হচ্ছে। তবে এসব পার্ক স্বল্প পরিসরে চালু হয়েছে। এসব পার্কে দ্রুত উৎপাদনশীল কার্যক্রম চালু করতে হবে। তা না হলে কাঙ্খিত লক্ষ্যে বাংলাদেশ যথাসময়ে পৌঁছাতে পারবে না।
মেড ইন বাংলাদেশ স্লোগানে যেমন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এ অগ্রযাত্রা আরও বেগবান করতে হবে। প্রয়োজনে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোবে বাড়তি সহযোগিতার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাতে হবে।
সামাজিক যোাগাযোগের মাধ্যমে ভুয়া খবর ঠোকানোর বিষয়টি পুরো বিশ্বের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবার জন্য সচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ আইসিটি ফোরাম (বিআইজেএফ) আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিআইজেএফ সভাপতি মোজাহেদুল ইসলাম,সহ সভাপতি নাজনিন নাহারসহ বিআইজেএফের সদস্যবৃন্দ।