‘ই-কমার্সের ডাক’ স্লোগানে ২০ এপ্রিল, শনিবার নগরীর প্রধান ডাকঘরে (বয়রা) বসছে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ই-শপের মেলা। দিনব্যাপী এই ই-কমার্স মেলার যৌথ আয়োজক বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব)। সকালে মেলার উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মন্ডল।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, খুলনা প্রধান ডাকঘরের ডিপিএমজি মো: জাহাঙ্গীর আলী খাঁন, ই-কমার্স ডাক মেলার আহ্বায়ক, আসিফ অহনাফ এবং সহ-আহ্বায়ক আদনান আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও কাঁচামালের বিপুল সমারোহকে কেন্দ্র করে একসময় খুলনা রসের চিনি শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। ব্রিটিশ অধ্যায়ে এর অবসান ঘটে। তবে ১৯৫০-এর পরবর্তীকালে জেলায় শিল্প বিস্তার ঘটতে শুরু করে। ১৯৫০ -১৯৭০-এর দশকে বড় মাপের কিছু শিল্প কারখানা গড়ে উঠে। কারখানা, স্টীল মিল, বৈদ্যুতিক তার কারখানা, চাল ও ময়দার কারখানা, বরফকল, প্রেস, কাঠের কারখানা ইত্যাদি। পরবর্তীতে ঔষধ তৈরীর কারখানাও গড়ে ওঠে। এছাড়া ১৯৬৩ সালে এখানে প্রথম কোল্ড স্টোরেজ বা মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপিত হয়। মূলতঃ বহুসংখ্যক শিল্প কল-কারখানার উপস্থিতি একে নগর পরিচিতি এনে দেয়। কৃষি খাতে জনগণের অংশগ্রহণ কম। খুলনার শিল্প এলাকা বলতে শিরোমনি, খালিশপুর, বয়রা ও রূপসা-ই প্রধান। আর খুলনা জেলার দৌলতপুর, ফুলতলা, আলাইপুর, কপিলমুনি ও ডুমুরিয়া উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য কেন্দ্র। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে এই কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে প্রান্তিক মানুষের সংযোগ ঘটাতে এই মেলা আগামীতে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা আশা করছি আগামীকালের মেলায় সপরিবারে সবাই আসবেন। বিশেষ করে তরুণ উদ্যোক্তারা যেন মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সেমিনারে অংশ নিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আবাহনে দ্রুত বদলে যাওয়া বিশ্ব পরিস্থিতিতে নিজেদের ক্যারিয়ারকে এগিয়ে রাখতে সচেষ্ট হবেন।
বক্তব্যে তিনি আরো জানান, মেলা উপভোগ করারা পাশাপাশি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে এই সময়ের গ্লোবল ভিলেজের ব্যবসায়ের ডিজিটাল রুাপন্তর নিয়ে ৩টি বিষয় ভিত্তিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে ই-কমার্সের ডাক মেলায়। সকাল সাড়ে ১১টায় হবে ‘গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে ই-কমার্স’, ‘নারী উদ্যোক্তাদের ই-কমার্স সেবায় তথ্যআপা’ দুপুর ১২:০০ টায় এবং বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে ‘প্রফেশনাল আইটি স্কীলড ক্যরিয়ার’ শীর্ষক সেমিনার।
মেলার আহ্বায়ক জানান, মেলা প্রাঙ্গনে থাকছে ৩২ টি স্টল। এর মধ্যে ২টি প্যাভিলিয়ন ও ৩টি মিনি প্যাভিলিয়ন। মেলায় অংশ নিচ্ছে দেশে প্রথমবারের মতো বিভাগীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত ই-কমার্সের ডাক মেলার টাইটেল স্পন্সর দারাজ। নির্ভরযোগ্যতার সঙ্গে গ্রাম পর্যায়ে অনলাইনের ক্রয়কৃত পণ্য গ্রাহকে হাতে পৌঁছে দেয়ার সবচেয়ে বড় ই-নেটওয়ার্ক ই-পোস্ট, পড়ুয়াদের অতিপরিচিত ই-শপ রকমারি.কম, দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের ই-কমার্স ভেঞ্চর শপুরা, ঘরকন্যাদের কাছে ঐতিহ্যবাহী ব্র্যান্ড সিঙ্গার, দেশেজুড়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করা প্রিয়শপ, নারী উদ্যোক্তাদের ই-কমার্স উদ্যোগ জাতীয় তথ্য আপাসহ, খাসফুড,রেসিজস্ট্রো, আজকেরডিল অপকম, এএসএল কমার্জ, এটুআই, লেইফিতা, ট্রাভেলমেট, গিকি সোশ্যাল, ফুডকর্নার, ইভ্যালি, ক্রাফট ভিশন, অন্যকিছু, ক্রিয়েটিভ আইটি’র মতো নানা মাত্রিক অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ আহনাফ বলেন, সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত উদ্যোক্তা-ভোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য মেলায় থাকছে বিষয় ভিত্তিক ৩টি সেমিনার। সেমিনারে উপস্থাপন করা হবে কী ভাবে ই-পোস্ট সেবার মাধ্যমে দ্বিতীয় বন্দর নগরিকে ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে গ্লোবাল বন্দরে রূপান্তর করা যায় সে বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।
এসময় মেলায় নানা চমক ও মূল্য ছাড়ে নিজেদের পরিবেশিত পণ্য ও সেবার পসরার তথ্যও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য সংগীত সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মেলায় ওয়ান টাইম ওটিসি চার্জে ৫০% ছাড় দিয়েছে এসএসএল কমার্জ। ডোমেইন ও হোস্টিংয়ে ৫০০ এমবি থেকে ২জিবি এবং ইজিয়ার অ্যাপে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা ছাড় ঘোষণা করেছে রেজিস্ট্রো।মেলা প্রাঙ্গনে দর্শনার্থীদের ফ্রি ডায়াবেটিকস চেকআপ করবে দিনরাত্রি। অ্যাপ ডাউনলোডে ১০০ টাকার শপিং ভাউচার এবং খুলনার মধ্যে ফ্রি হোম ডেলিভারি ঘোষণা করেছে প্রিয়শপ। প্রতি ঘণ্টায় ২টি করে বই উপহার ও ৩০% মূল্য ছাড় দেবে রকমারি.কম। সোনার নাকফুল উপহারের ঘোষণা দিয়েছে লেইসফিতা.কম। ২০% ছাড় দিয়েছে খাস ফুড, ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্যাশ ডিসকাউন্ট দিচ্ছে সিঙ্গার। গ্রাফিক্স নকশা, ওয়েব তৈরির ফ্রি প্রশিক্ষণ দেবে ক্রিয়েটিভ আইটি। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে দারাজের অ্যাপ ডাউনলোড করলেই দর্শনার্থীরা উপহার হিসেবে পাবেন এক লিটার তেল।
এর বাইরেও মেলা প্রাঙ্গণে প্রতিঘণ্টায় র্যাফেল ড্রয়ে মোবাইল ফোনসহ নানা আকর্ষণীয় উপহার জেতার সুযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত,ই-কামার্সের ডাক মেলার পৃষ্ঠোপোষকতা করেছে চালডাল.কম, রেজিন্ট্রো.কম, রকমারি.কম, প্রিয়শপ, দিনরাত্রি, এমএমইভাই, স্পিকলার, ফাইবার অ্যাটহোম, এসএসএল কমার্জ এবং মাসিক কম্পিউটার জগৎ।