সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক সঙ্কট মেটাতে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে দুই হাজার শিক্ষক নিয়োগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বর্তমানে কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, আলিয়া মাদরাসাসহ ৩২৯টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে মোট ১৬ হাজার ৫৫৪টি শিক্ষকের সৃষ্ট পদ রয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপকের পদ রয়েছে ৫০৭টি, সহযোগী অধ্যাপক দুই হাজার ২২১টি, সহকারী অধ্যাপক চার হাজার ২৮৪টি এবং প্রভাষক পদে আট হাজার ২৬টি পদ রয়েছে। দেশের ২১৫টি সরকারি কলেজে শিক্ষক সঙ্কট সবচেয়ে বেশি। প্রায় চার হাজার শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে। সবচেয়ে বেশি শূন্য প্রভাষক পদ। এ পদ খালি আছে প্রায় দুই হাজার। সরকারি কলেজে নিয়োগের জন্য পিএসসির মাধ্যমে যে সংখ্যক সুপারিশ করা হয় তা পর্যাপ্ত নয়, এ কারণে সৃষ্ট পদ থাকলেও শূন্য আসনে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার ওপরে অনেক শিক্ষক নিয়মিতভাবেই অবসর গ্রহণ করছেন। এসব পদ শূন্যই থেকে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, সরকারি কলেজ শিক্ষক সংকট নিরসনে বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ ছাড়া আর কোনো সহজ রাস্তা নেই। আমরা এ বিষয়ে একাধিক বৈঠক করেছি। সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়েছে। সবাই একমত হয়েছে। তার ভিত্তিতে জনপ্রশাসনে ২ হাজার প্রভাষক নিয়োগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দ্রুতই এটি পিএসসিতে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, প্রতি বছর সাধারণ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি কলেজে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এই মোতাবেক ৩৬তম বিসিএস থেকে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ করা গেজেটভুক্ত ৯৩৭ শিক্ষক ৩ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন কলেজে যোগদান করবে। ৩৭তম বিসিএস থেকে ২২৪ এবং ৩৮তম বিসিএস থেকে ৯৯২ শিক্ষক নিয়োগে পিএসসিতে চাহিদা দেয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামছুল হুদা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের অনেক সরকারি কলেজে প্রভাষক পদে শিক্ষক সঙ্কট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে শিক্ষা ক্যাডারে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পিএসসির আয়োজিত সাধারণ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে যে সংখ্যক শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ আসে তাদের নিয়োগ দিয়ে এ সমস্যা দূরীকরণ সম্ভব হচ্ছে না। এখনও অনেক কলেজে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী কলেজের শিক্ষক ধার করে এনেই ক্লাস নিতে হচ্ছে।
পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি কলেজ উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হলেও সেখানে চরম শিক্ষক সংকট রয়েছে। বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমেই এ সংকট নিরসন করা সম্ভব হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের জন্য বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের জন্য অফিসিয়াল আবেদন এখনও আমাদের হাতে এসে পৌঁছেনি। পেলে আইন পরিবর্তনসহ এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।
কখন শিক্ষা ক্যাডারের বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করা হবে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ৩৮তম সাধারণ বিসিএসে’র লিখিত পরীক্ষা চলছে। স্বাস্থ্য ক্যাডারের জন্য আয়োজিত ৩৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বর্তমানে ফলাফল প্রকাশের কাজ শুরু হয়েছে। ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার চাহিদা ক্যাডার পদের চাহিদা পাওয়া গেছে। আগামী সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে শিক্ষা ক্যাডারে বিশেষ বিসিএসের আইন সংশোধন হলে ৪১তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করা হতে পারে।
জানা গেছে, এই বিশেষ বিসিএস আয়োজন করার ক্ষেত্রে পিএসসির চলমান আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। এ আইন পরিবর্তনের জন্য খসড়া আকারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। সেখান খসড়া আইন চূড়ান্ত করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এরপর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে পারবে পিএসসি।