ফেসবুকজুড়ে এখন নতুন ট্রেন্ড ‘১০ বছরের চ্যালেঞ্জ’ (10 Year Challenge)। এই ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেকেই ফেসবুকে ১০ বছর আগের ছবির সঙ্গে সদ্য তোলা ছবি পোস্ট করছেন। অনেকের কাছে ফেসবুকের ফিডে ছড়িয়ে পড়া খুব সাধারণ একটি মিম এটি। তবে বিষয়টি এতটা সহজ নয়। আপনার নিরীহ এ ছবি পোস্টের সঙ্গে অন্যের অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশ্লেষকেরা।
গতকাল বুধবার ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ওই ট্রেন্ডের সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা না থাকার ঘোষণা দিয়েছে। ওই মিম ফেসবুকে দেওয়ার হিড়িক পড়ে যাওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেন বিশ্লেষকেরা।
এ ধরনের মিম পোস্ট ও সংগ্রহের কারণ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর পেছনে ফেসবুকের গোপন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। ফেসবুক তাদের নিজস্ব ফেশিয়াল রিকগনিশন অ্যালগরিদম উন্নত করার জন্য এ ধরনের ট্রেন্ড সামনে এনেছে। গোপনে তারা এসব ছবি থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। ফেসবুক অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করেছে। সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্টার্ন স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক অ্যামি ওয়েব বলেছেন, ওই ছবির চ্যালেঞ্জ ফেসবুককে তাদের মেশিন লার্নিং উন্নত করার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ করে দেবে।
সিবিএস নিউজকে ওই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ফেসবুকে ব্যবহারকারী কোনো ছবি আপলোড করলেই ধরতে পারবে ফেসবুক। এ ধরনের ছবি সংগ্রহ করার ফলে ফেসবুকের মেশিন লার্নিংকে উন্নত করার ভয়ানক এক সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ফেসবুক তাদের সিস্টেমকে এমনভাবে উন্নত করতে পারবে, যাতে সামান্যতম পরিবর্তনও তারা ধরতে পারে।
গত সপ্তাহ থেকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে লাখো ব্যবহারকারী ‘টেন ইয়ার চ্যালেঞ্জ’ নামের এই ট্রেন্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছবি পোস্ট করতে শুরু করেন। গত তিন দিনে ফেসবুকে এ চ্যালেঞ্জ ৫২ লাখ সাড়া পেয়েছে বলে জানিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া নজরদারির প্রতিষ্ঠান টলওয়াকার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তোলা ‘বার্ড বক্স’, ‘টপ নাইন ফটো কোলাজ’–এর পর ‘টেন ইয়ার চ্যালেঞ্জ’ ট্রেন্ড জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু এ ট্রেন্ডগুলোয় গা ভাসানোর আগে নিরাপত্তা ও প্রাইভেসির বিষয়টি অনেকেই খেয়াল করেননি।
উইয়ার্ডের প্রযুক্তিবিষয়ক লেখক কেট ও’নিল ‘টেন ইয়ার চ্যালেঞ্জ’ নামের এই মজার বিষয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে একটি মতামত লেখেন। এরপর থেকে এর উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হতে থাকে।
ও’নিল লিখেছেন, এ চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাশাপাশি দুটি ছবি পেয়ে যায় ফেসবুক। এতে ফেসবুকের জন্য ব্যাপক সুবিধা। দুটি আলাদা ও সহজে বিশ্লেষণ করার মতো ছবি ফেসবুক পেয়ে গেলে এরপর ফেসবুকে থাকা অন্য ছবিগুলো বছর হিসেবে সাজালেই ফেসবুকের জন্য ওই ব্যক্তির পরিবর্তন সহজে বোঝা যাবে। বয়সের সঙ্গে মানুষের বদল ধরাটা ফেসবুকের জন্য সহজ হবে এবং তারা কার্যকর প্রযুক্তি তৈরি করতে সক্ষম হবে।
ও’নিল ফেসবুকের তথ্য সংগ্রহের পর পরিপূর্ণ ফলাফল নিয়ে সতর্ক করেন। কারা দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে বা কার চেহারায় পরিবর্তন হচ্ছে, এমন তথ্য ইনস্যুরেন্স কোম্পানির হাতে চলে যেতে পারে।
ফেসবুকের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এ চ্যালেঞ্জ শুরু করার ক্ষেত্রে তারা কোনো ভূমিকা রাখেনি এবং এ থেকে তারা কোনো সুবিধা দেখছে না।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, এটা ব্যবহারকারী সৃষ্ট মিম, যা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুক এই ট্রেন্ড শুরু করেনি। ফেসবুকে থাকা ছবি নিয়েই অনেকেই এ মিম তৈরি করছেন। এ মিম থেকে ফেসবুক কিছুই পাবে না। ফেশিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহারকারী চাইলে যেকোনো সময় চালু বা বন্ধ করতে পারেন।
অবশ্য ফেসবুক এ চ্যালেঞ্জ শুরু না করলেও অনেক দিন ধরেই তারা ফেশিয়াল রিকগনিশনের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করছে। ফেসবুকের এই সফটওয়্যারের ওপর নির্ভর করে নতুন পণ্যও বাজারে ছাড়া হচ্ছে। যেমন সম্প্রতি ফেসবুকের ভিডিও চ্যাট ডিভাইস পোর্টালে এসেছে এ প্রযুক্তি। যাতে এমন ক্যামেরা রয়েছে, যা ঘরের মধ্যে আপনি যেদিকে যাবেন সেদিকে আপনাকে অনুসরণ করবে এবং আপনার মুখের ওপর ফোকাস রাখবে।
এর আগে অবশ্য গুগলের পক্ষ থেকে ১০ ইয়ার চ্যালেঞ্জের অনুরূপ একটি প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। গুগলের আর্টস অ্যান্ড কালচার অ্যাপ ব্যবহারকারীর সেলফির সঙ্গে চিত্রকর্মের মিল খুঁজে দেওয়ার কথা বলা হয় তাতে। এতে ব্যবহারকারী তার ছবি আপলোড করলে ফেশিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তিতে ব্যবহারকারীর ছবি ও চিত্রকর্ম পাশাপাশি দেখানো হয়।
ফেসবুকের প্রাইভেসি ও তথ্য কেলেঙ্কারি ঘিরে সম্প্রতি যেসব বিতর্ক তৈরি হয়েছে, ১০ ইয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, কয়েক দিন বাদে হলেও নতুন ট্রেন্ড নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, এটা ভালো দিক। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতের পুতুল হওয়ার আগে একটু চিন্তা করার প্রয়োজন আছে বৈকি!