হ্যাকার ভালো হয় আবার খারাপ হয়। একদল গ্রে হ্যাকার আর একদল ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার। হ্যাকারদের দুনিয়া আলাদা। হ্যাকারদের কথা আসলেই আমাদের চোখে মুখোশের আড়ালে লোখানো অদ্ভুত এক চেহারা ভেসে উঠে। ।কিন্তু মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষগুলোকে আমরা চাইলে ও সহজে চিনতে বা দেখতে পারব না, কেননা হ্যাকাররা নিজেদের অন্য সব্বার থেকে আলাদা ভাবেই রাখতে চান। তাদের পরিচয় তারা গোপন রাখেন বিভিন্ন কারণে। দুনিয়া কাপানো ৫ হ্যাকারের কথা জেনে নিন:
১. আদ্রিয়ান লামো (Adrian Lamo)
আদ্রিয়ান লামো ছিলেন একজন কলম্বিয়ান-আমেরিকান কম্পিউটার নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গ্রে-হ্যাট হ্যাকার। তিনি প্রথম আলোচনায় আসেন, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ইয়াহু!, মাইক্রোসফটের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করে। ২০০৩ সালে তিনি গ্রেফতার হন। ২০১০ সালে লামো বিকল্পধারার ওয়েবসাইট উইকিলিকসে তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে আটক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা ব্র্যাডলি ম্যানিং সম্পর্কে এফবিআইকে তথ্য দেন। এরপর এফবিআই ম্যানিংকে গ্রেফতার করে।
আদ্রিয়ান লামো ১৯৮১ সালে বোস্টন, ম্যাসাচুসেট্সয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মারিও লামো-জিমেনিজ ও মায়ের নাম মেরি লামো-এটউড। তিনি সাধারনত হোমলেস হ্যাকার হিসেবে পরিচিত। তিন সাধারনত কফি শপ, গ্রন্থাগার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাফে ব্যবহার করতেন হ্যাক করার জন্য। যদিও তিনি কয়েকটি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা বিশ্লেষণ করেছেন কিন্তু তিনি তার কাজের জন্য কোন টাকা নিতে আপত্তি জানান।[
’৯০-এর দশকের মাঝের দিকে লামো সমকামী ও হিজড়াদের মিডিয়া ফার্ম প্লানেটআউট.কম-এ একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন।১৯৯৮ সালে তিনি সানফ্রান্সিসকো বোর্ড অফ সুপাভাইজর দ্বারা সমকামী ও হিজড়াদের দ্বারা গঠিত ইয়ুথ টাস্কফোর্সের সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন। ২০০১ সালে লামো তাকে চিকিৎসার জন্য দেওয়া বেনজেড্রিন বেশি পরিমাণে প্রয়োগ করেছিলেন।
২০০৪ সালে উইয়ার্ড ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তার সাবেক মেয়ে বন্ধু বলেন, লামো, তাকে অনেক শাসন করতেন এবং লামোর একটি শটগান ছিল যেটা দিয়ে সে তার মেয়ে বন্ধুকে ভয় দেখাত। একই সাক্ষাৎকারে দাবি করা হয়, আদালত তাকে পূর্ণবিশ্রামের নির্দেশ দিয়েছিল। যদিও লামো পরবর্তীতে এই সাক্ষাৎকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন এবং এর সত্যতা নাকচ করে দেন। এছাড়া ২০১০ সালের মে মাসের উইয়ার্ড ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে বলা হয়, লামোর ব্যাকপেক চুরি যাবার পর এক তদন্ত কর্মকর্তা তার অস্বাভাবিক আচরন লক্ষ্য করে ও তাকে আটক করে। তার এই আচরনকে এসপার্জার সিনড্রম বলে আখ্যায়িত করে এবং তাকে ৭২ ঘন্টার চিকিৎসা দেয় যা পরে ৯ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। ২০১১ সালের মার্চে লামো অভিযোগ করেন, ম্যানিং ঘটনার পর থেকে তার জীবন হুমকির মুখে, লামো প্রথম পরিচিতি পান “ইনসাইড-অল.কম নামে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। যেখানে তিনি আমেরিকান অনলাইনের (AOL.com) মুক্তির অপেক্ষায় থাকা একটি সফটওয়ারের গ্রফিক ডিজাইনের স্ক্রিন শট প্রকাশ করেছিলেন। ফলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডর তার ওয়েবসাইটের নিবন্ধন বাতিল করেছিল।
২০০১ সালের ডিসেম্বরে “ওয়ার্ল্ডকম” দ্বারা লামো ব্যাপক প্রশংসিত হন কারণ তিনি তাদের নিরাপত্তা ত্রুটি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এর ডাটাবেজে ঢুকতে সক্ষম হন এবং সেখান থেকে তিনি “লেক্সিসনেক্সিসের” একাউন্ট ব্যবহার করে গুরত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর গবেষণাপত্রে ঢুকতে সক্ষম হন। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে এবং তদন্ত কর্মকর্তারা ১৫ মাস তদন্ত করে আগস্ট ২০০৩ সালে লামো’র বিরুদ্ধে একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জাড়ি করে। কিছুদিন লুকিয়ে থাকার পর ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০.০০টায় তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সেক্রামেন্টোতে যুক্তরাষ্ট্র মার্শালের কাছে অত্মসমর্পন করেন। ১১ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক সিটিতে এফবিআইর কাছে পুণরায় আত্মসমর্পন করেন ও তখন তার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের ৮ জানুয়ারি মাইক্রোসফ্ট, “লেক্সিসনেক্সিসের” এবং দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসএ সাইবার হামলার জন্য অভিযোগ গঠন করা হয়।
পরে আদালত ২০০৪ সালে লামোকে $৬৫,০০০ ডলার জরিমানা, ছয় মাস তার বাড়িতে গৃহবন্দি ও ২ বছরের জন্য পরীক্ষাধীন অবস্থায় রাখার আদেশ দেয়। অভিযোগগুলো হলো, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ইয়াহু! ও ওয়ার্ল্ডকমের নিরাপত্তা ত্রুটি প্রকাশ করে দেওয়া। ১৮ মাস পর্যবেক্ষনে থাকা অবস্থায় লামো ২০০৬ সালের ৯ মে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষকে তার রক্তের নমুনা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কর্তৃপক্ষ তার ডিএনএ নথিভুক্ত করার জন্য তার রক্ত চেয়েছিল পরে লামো’র আইনজীবী বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে লামো রক্ত দিতে রাজি হননি।
২. কেভিন মিটনিক (Kevin Mitnick)
বিশ্বের সুপরিচিত ও ভয়ংকর হ্যাকারদের মধ্যে মিটনিক একজন যিনি আখ্যায়িত হয়েছেন The most wanted computer criminals in United States এবং The most dangerous hacker in the World হিসেবে। টাচ টোন এবং ভয়েস কন্ট্রোলের মাধ্যমে সেলফোন ব্যবহার করে মিটনিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর আক্সেস নিতেন। মটোরোলার মত বৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এই জিনিয়াসের দ্বারা হ্যাকড হয়েছিল যা তাকে সেই দিনগুলিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছিল।
৩. কেভিন পলসেন (Kevin Poulsen)
Dark Dante নামে পরিচিত আমেরিকান এই হ্যাকার FBI ডাটাবেজ ও স্টেশন ফোন লাইন্স হ্যাক করে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন। বর্তমানে তিনি Wired News এর সিনিয়র ইডিটর হিসেবে কর্মরত আছেন।
৪. গ্রে ম্যাককিনন (Gary McKinnon)
Solo হিসেবে পরিচিত স্কটিশ কন্সপিরেসির এই থিয়োরিস্ট U.S এর এয়ার ফোর্স, আর্মি, ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, নাসা, নেভির মত বড় বড় নেটওয়ার্কে অবৈধভাবে প্রবেশ করে বিশ্বরেকর্ড করেন। গ্লোবাল এনার্জি ক্রাইসিস সমাধানের নিমিত্তে এগুলো থেকে তিনি এলিয়েন স্পেসক্র্যাফট এর যাবতীয় প্রমাণাদি চুরি ও নষ্ট করেন যা ইউএস আদালতের ভাষ্যমতে প্রায় $৭০০০,০০০ ক্ষতির সমতুল্য।
৫. জোনাথান হেমস (Jonathan James)
১৬ বছর বয়সের আমেরিকান এই কিশোর হ্যাকিংকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করেছিলেন যা তাকে ১৬ বারেরও বেশি কারাগারে নিয়ে গিয়েছিল। ইউএস ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট তার এই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছিল। ১.৭ মিলিয়ন ডলারের নাসা সফটওয়্যার চুরি করে নাসার সার্ভার ও সিস্টেমকে শাটডাউন করতে বাধ্য করেছিলেন তিনি। সাইবারস্পেসে তার এই অস্বাভাবিক ব্যবহার জেমসকে ১০ বছর কম্পিউটার স্পর্শ করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করেছিল।
লেখক: সাদিকুর রহমান
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া