এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সেবা হলো মোবাইল আর্থিক সেবা। বাংলাদেশ এবং ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে ব্যাংকিং সেবার বাইরের জনগনকে ব্যাংকিং সেবা দিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এসব মোবাইল আর্থিক সেবা। বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত এই সেবাগুলো বাংলাদেশের ৫৫ শতাংশ মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশে বিকাশ, রকেট, নগদ এবং ভারতে পেটিএম এর মতো কোম্পানিগুলো এই অঞ্চলে অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে, কারণ তারা দশকের পর দশক ধরে চলমান সমস্যার সমাধান করেছে এবং মোবাইল সেবা তৈরি করেছে যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আড়াই বিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম। আর্থিক সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন নয়, তবে এসব কোম্পানি দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন আনতে পেরেছে। পেগাসাস টেক ভেঞ্চারস এর জেনারেল পার্টনার এবং ইজেনারেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান শামীম আহসান গত শুক্রবার ভারতের মুম্বাই এর দি ললিত হোটেলে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া ফিনটেক ফোরামের বার্ষিক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
তিনি ইন্ডিয়ান ফিনটেক ফোরামের আমন্ত্রণে এই আয়োজনের “কীভাবে আন্তর্জাতিক স্টার্টআপ ভারতের ফিনটেক ইকোসিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে এবং ভারতের স্টার্টআপ কীভাবে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যেতে পারে?” শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। এই আয়োজনের সার্বিক সহায়তায় ছিলো ভারতের মহারাষ্ট্র সরকার এবং ন্যাশনাল পেমেন্ট কমিশন অব ইন্ডিয়া।
ইকোনমিক টাইমসের সম্পাদক অমল ডেথের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন- ইনভেস্ট ইন ডেনমার্কের কান্ট্রি ম্যানেজার (ভারত ও সিঙ্গাপুর) শঙ্কর সুবরামানিয়াম, কুডস এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পবিত্র ওয়ালভেকার এবং ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এনপিসিআই) এর পণ্য ও উদ্ভাবন বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিশাল কানভাটি।
শামীম আহসান প্রস্তাব করেন যে, বিমসটেক ও সার্কের মতো আঞ্চলিক সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিক খাত বিশেষজ্ঞ এবং নীতিনির্ধারকদের সাথে নিয়ে ফিনটেক সল্যুউশন যুক্তকরণের মাধ্যমে ক্রস-বর্ডার পেমেন্টস ও ই-কমার্সকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং এই অঞ্চলে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
শামীম আহসান আরও বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন মতে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ফান্ড ট্রান্সফার এবং পেমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি ফিনটেকের কাছে তাদের ২৮ শতাংশ বাজার হারাবে আর ব্যাংকগুলো বাজার হারাবে প্রায় ২৪ শতাংশ।
সমগ্র ফিনটেক খাত ভীষনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। গত ৩ মাসে ভারতের ফিনটেক কোম্পানিতে ৬৭৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে, যেখানে একই সময়ে পুরো এশিয়ার প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ১.৮ বিলিয়ন ডলার। গত ২ বছরে ফিনটেক কোম্পানিতে বি সিরিজ বিনিয়োগের পরিমান প্রায় দ্বিগুন হয়েছে, যার মাধ্যমে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে খাতটি ম্যাচুরিটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ফিনটেকের সফলতা এটা দেখলে বোঝা যায় যেখানে আলিপে’র অভিযোজন ফেসবুক ও গুগলের চেয়েও দ্রুত এবং অ্যান্ট ফিন্যান্সিয়াল বিশ্বের ১০টি মূল্যবান আর্থিক সেবার মধ্যে অন্যতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ব ২০২৪ সাল নাগাদ রাউন্ড দ্য ক্লক রিয়েল টাইম পেমেন্ট (আরটিপি) এবং ইন্টারব্যাংক সেটেলমেন্ট সেবার প্রচারণার পরিকল্পনা জানিয়েছে। ফিনটেক ইকোসিস্টেমকে পুরোপুরি গড়ে তুলতে এরকম নীতিনির্ধারক এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে শক্তিশালী সহায়তা দরকার এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেও একই ধরণের প্লাটফর্ম করা প্রয়োজন।
ইন্ডিয়া ফিনটেক ফোরামে সাড়ে চার শতাধিক কোম্পানি ও পাঁচ হাজারের অধিক ব্যক্তিরা সদস্য হিসেবে যুক্ত রয়েছে, যারা ফিনটেক ইকোসিস্টেম তৈরিতে ওতপ্রোতভাবে কাজ করছে। ফিনটেক কোম্পানিতে সেরা উদ্ভাবনকে স্বীকৃতি দিতে ভারতে অন্যতম সেরা অনুষ্ঠান হিসেবে আয়োজিত হয় ইন্ডিয়ান ফিনটেক অ্যাওয়ার্ড। চতুর্থবারের মতো আয়োজিত এবারের ফিনটেক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজক ইন্ডিয়া ফিনটেক ফোরাম এর সহযোগি হিসেবে ছিলো মহারাষ্ট্র সরকার, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কোপেনহেগেন ফিনটেক, প্যারিস ফিনটেকসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি অংশীদাররা।