ওয়্যারলেস শিল্প আমাদের কাজ করার এবং খেলার পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। আর ফাইভ জি এরইমধ্যে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। খুব শীঘ্রই কয়েকটি শহরে এবং শীঘ্রই বিশ্বজুড়ে, ফাইবার অপটিক গতি অদৃশ্যভাবে আমাদের সমস্ত পকেটে পৌঁছে যাবে। আর টেলিভিশন, থ্রী ডি ছবি এবং নতুন অ্যাপ্লিকেশন এমন কিছু নিয়ে আসবে যা আমরা কখনো আমাদের মোবাইল ডিভাইসে আসতে পারে ভাবিনি।
যার জন্য এরইমধ্যে বাণিজ্যিক মোবাইল ফোন সরবরাহকারী এবং সরঞ্জাম বিক্রেতারা সিক্স জি তৈরির জন্য তীব্রভাবে কাজ করছে এবং জনসাধারণ আগ্রহের সাথে তার জন্য অপেক্ষা করছে। বিশ্বজুড়ে গবেষকরা ওয়্যারলেস বিশ্বের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সিক্স জি উৎপাদন করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে সিক্স জি কি এবং কেমন হবে এটি? এখনো কেউ পুরোপুরি জানেন না এটি সম্পর্কে। বিশ্বজুড়ে কয়েক শতাধিক আন্তর্জাতিক মানের সংস্থা আগামী দশকে এটি আবিষ্কার করবে। তবে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা যায় যে, ২০৩৫ সালের মধ্যে সিক্স জি মানুষের গণনার গতির হারে বেতার সংকেত প্রেরণের দক্ষতা অর্জন করবে। গবেষকরা এটিকে ‘ওয়্যারলেস চেতনা’ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। অর্থাৎ সিক্স জি এর মাধ্যমে মানব বুদ্ধি তাৎক্ষনিকভাবে বায়ুতে প্রেরণ করা যেতে পারে। এছাড়াও রিমোট কন্ট্রোল রোবট এবং মানুষের মতো ক্ষমতাসম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যাপ্লিকেশনগুলোর কাজ সিক্স জি সেলফোনের মাধ্যমে সক্ষম হতে পারে।
ভবিষ্যতের সেলফোনগুলো ৯৫ গিগা হার্টজের উপরে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় কম্পাঙ্ক ব্যবহার করে দুর্দান্ত চ্যানেল ব্যান্ডউইথ এবং উচ্চ নির্দেশক অ্যান্টেনা ব্যবহার করতে সক্ষম হবে যা দুর্দান্ত কভারেজ দিবে। এই ফ্রিকোয়েন্সিগুলো আজকের ফোর জি সেলফোন ফ্রিকোয়েন্সিগুলোর চেয়ে ৪০ গুণ বেশি এবং নতুন ফাইভ জি ফ্রিকোয়েন্সিগুলোর চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বেশি। এটি গত বছর ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের বাণিজ্যিকীকরণের জন্য তৈরি করা হয়।
উচ্চতর সংবেদনশীলতা এবং চিত্রের সাথে মিলিয়ে সঠিক অবস্থান এবং দিকনির্দেশ অনুসন্ধান সিক্স জি দিয়ে সম্ভব হয়ে উঠবে। এর একটি উদাহরণস্বরূপ, ভবিষ্যতের সিক্স জি ফোন আপনার চারপাশের বাতাসে বিস্ফোরক বা বিষাক্ত রাসায়নিকের জন্য পরীক্ষা করতে সক্ষম হবে এবং আপনার খাবারটি খাওয়া নিরাপদ কিনা তা নির্ধারণ করতে সক্ষম হবে। এটি আপনাকে নাইট ভিশন ব্যবহার করে অন্ধকারে দেখতে এবং মানুষের চোখের চেয়ে আরও ভাল চিত্র সরবরাহ করতে সহায়তা করবে। তাছাড়াও সিক্স জি ফোন গগলস ব্যবহারের মাধ্যমে চশমা প্রতিস্থাপন করতে পারবে, যা হেডফোনের বিকল্পও হতে পারে।
গবেষণায় আরো দেখা যায় যে, সিক্স জি ফোনগুলো স্থানীয় চারপাশের মানচিত্র তৈরি করে এবং ফোনে দিকনির্দেশক হিসেবে কিংবা আপনার পাশের ঘরে কেউ আছে কিনা তা জানতে এটি কার্যকর হতে পারে। যদিও এই ধারণাগুলোর অনেকগুলো এরইমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কয়েকটি সংস্থার গবেষণা ল্যাবগুলোতে রয়েছে। তবে প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে এই ধারণাগুলো সিক্স জি যুগে (২০৩০ সালের দিকে প্রত্যাশিত) প্রাইম টাইমের জন্য প্রস্তুত থাকবে।
যেসব দেশ এই নতুন প্রযুক্তিগত দক্ষতা তৈরিতে নেতৃত্ব দেয় তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র কর্তৃত্ব থাকবে। এ কারণেই মৌলিক গবেষণা একটি জাতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে চীন, জাপান এবং কোরিয়ার মতো দেশগুলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) গবেষণাকে একটি জাতীয় অগ্রাধিকারে পরিণত করেছে। ফাইভ জি এর গুরুত্ব এবং বিশ্বব্যাপী মানদণ্ডের প্রতিযোগিতার কথা বিবেচনা করে সব দেশের জন্য ওয়্যারলেস যোগাযোগ গবেষণা এবং সাধারণভাবে আইসিটিকে জাতীয় অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি ।