বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ নিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু এর ঠিক এক মাস আগেই একদল গবেষক জানিয়েছিলেন যে চীনের উহানে অস্বাভাবিক এক ফ্লুজনিত রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
এক্ষেত্রে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছিলেন। অর্থাত্ ডব্লিউএইচওর আগেই ঝুঁকি শনাক্ত করতে পেরেছিলেন তারা। এ ঘটনায় একটি প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে, এআই প্রযুক্তি বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধে কতটা কার্যকর ভূমিক রাখতে পারে? অথবা যথাসময়ে এ প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে জনজীবন কতটা সুরক্ষিত করা যায়?
গ্লোবাল ডিজিজ সার্ভিল্যান্স প্লাটফর্ম হেলথম্যাপের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে এ বিষয়ে কাজ করছেন ম্যাসাচুসেটসের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞানী ক্লার্ক ফ্রেইফেল্ড। তিনি বলেন, ‘মহামারী প্রতিরোধে এআই প্রযুক্তির ভূমিকা কতখানি, সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এআইয়ের মাধ্যমে আমরা কেবল প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে পারি। তবে বাস্তবতা হলো, আপনি যখন নতুন কোনো শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগে ভুগবেন, তা কতখানি মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে সে ব্যাপারে বলাটা কঠিন।’
তথ্যভিত্তিক ঝুঁকি নিরূপণ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটামিনার বলছে, করোনাভাইরাসজনিত কভিড-১৯ রোগের ঝুঁকির বিষয়ে তারাই প্রথম সতর্ক করেছিল। উহানের বিভিন্ন হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রত্যক্ষদর্শীদের সোস্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, ভাইরাসটির উত্পত্তিস্থল উহানের সি ফুড মার্কেট জীবাণুমুক্ত করার ছবি ও চীনের জাতীয় বীর বনে যাওয়া ওয়েনলিয়াংয়ের সতর্কবার্তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা এ ঝুঁকি নিরূপণ করেছিল।
টরন্টোভিত্তিক ডিজিজ ট্র্যাকিং ফার্ম ব্লুডটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কামরান খান বলেন, ‘যখন আপনি নতুন কোনো রোগ নিয়ে কাজ করবেন, তখন সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন না।’ নভেল করোনাভাইরাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এটি অনেকটাই ১৭ বছর আগে সংক্রমিত হওয়া সার্স মহামারীর মতো। তবে নতুন ভাইরাসটি কতটা সংক্রামক, সে বিষয়ে আমরা জানতে পারিনি।’
অর্থাত্ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মহামারীর প্রাথমিক লক্ষণ বা ঝুঁকি শনাক্ত করা যায়। কিন্তু এর সংক্রমণক্ষমতা বা ভয়াবহতা সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা পাওয়া নাও যেতে পারে। ক্লার্ক ফ্রেইফেল্ড বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো মানবজাতিকেই নিতে হবে।’
তবে এআই বা মেশিন লার্নিং সিস্টেম মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে পারে। মহামারীর ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করা থেকে শুরু করে প্রতিষেধক তৈরি ও তা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এটি সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এটাই বা কম কি? সূত্র: এএফপি