বাংলাদেশের মতো প্রযুক্তিবান্ধব একটি দেশে ব্লকচেইনের মতো নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পল ব্রাইজেক। ব্লকচেইন হলো ডেটা সংরক্ষণ করার একটি নিরাপদ ও উন্মুক্ত পদ্ধতি। যে পদ্ধতি অনুযায়ী ডেটাগুলো বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি চেইন আকারে সংরক্ষণ করা হয় এবং এতে ডেটার মালিকানা সংরক্ষিত থাকে। এই পদ্ধতিতে ডেটা সংরক্ষণ করলে কোনো একটি ব্লকের ডেটা পরিবর্তন করতে চাইলে সেই চেইনে থাকা প্রতিটি ব্লকে পরিবর্তন আনতে হবে, যা অসম্ভব। তাই এই পদ্ধতিতে ডেটা সংরক্ষণ করাটা বেশ নিরাপদ।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্যান্ডার ইনকরপোরেশনের উদ্যোক্তা পল ব্রাইজেক। ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে ব্রাইজেক জানান, ব্লকচেইন প্রযুক্তি প্রয়োগে এ দেশে ডিজিটাল খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব। ইতিমধ্যে এস্তোনিয়া ও দুবাইয়ে এ প্রযুক্তির প্রয়োগ দেখা গেছে। গবেষণা অনুযায়ী, ৩৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে ব্লকচেইন প্রযুক্তির। বাংলাদেশে আর্থিক, রাইড শেয়ারিং, চিকিৎসা খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি প্রয়োগের সুযোগ আছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
সেমিনারে বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা চলোর পক্ষ থেকে ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করা ও এ-সংক্রান্ত সেবা চালুর ঘোষণা দেন চলোর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী দেওয়ান শুভ। তিনি বলেন, এ পদ্ধতি প্রয়োগে খরচ কমবে। এতে চালক ও যাত্রী লাভবান হবেন। এ ছাড়া নিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রে এ ব্লকচেইন ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আফিয়া ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও বাংলাদেশের স্থানীয় উদ্যোক্তা ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করা মীর হক জানান, সম্প্রতি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট ফক্সের সঙ্গে ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় কীভাবে ব্লকচেইন কাজে আসতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, এটি নতুন ধরনের ইন্টারনেট, যা পৃথিবী বদলাতে পারে, দারিদ্র্য দূর করতে পারে, বেকারত্ব কমাতে পারে, এমনকি মোবাইল ব্যাংকিংও নিরাপদ করতে পারে।
মীর হক জানান, বাংলাদেশের স্থানীয় উদ্যোক্তা ও মেধাবীদের নিয়ে ব্লকচেইনভিত্তিক সেবা দিতে চান তাঁরা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এখানকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংযোগ করে ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করতে চান। দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী টেনে আনতে চান। তাঁদের সঙ্গে ইউএনডিপি আছে। নিজেদের অর্থায়নে ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করে আরও এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দেশে কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে শুরুতে চলোকে তাঁদের স্থানীয় সহযোগী করেছেন। ভবিষ্যতে দেশ ও বিদেশে ব্লকচেইন নিয়ে আরও সেবা দিতে কাজ করবেন তাঁরা।