করোনা পরিস্থিতিকালীন সময়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প (iDEA) “ফুড ফর ন্যাশন” নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করে। এরই আলোকে iDEA প্রকল্পের “স্টার্টআপ বাংলাদেশ” ব্যানারে জুলাই ২০২০ এ ডিজিটাল হাটের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং এই প্ল্যাটফর্মটিতে কারিগরি সহায়তা করে আইসিটি বিভাগের এটুআই (a2i) ও একশপ। এ উদ্যোগটি বাস্তবায়নে আজ ২১ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে “ফুড ফর ন্যাশন” এর “ডিজিটাল কোরবানির হাট”-এর সর্বাধিক প্রচারকারী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। পরে, যথাযথ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে iDEA প্রকল্পের অফিসে উক্ত অনুষ্ঠানের বাছাইকৃত ১ জন ইউডিসি উদ্যোক্তাসহ সেরা ১০ জনের নাম ঘোষনা করা হয় এবং তাদের মধ্যে উপস্থিত উদ্যোক্তাগণকে ক্রেস্টসহ সম্মাননা প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ। এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব পার্থপ্রতিম দেব এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন iDEA প্রকল্পের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন যে, প্যানডেমিকের সময় সকলের মধ্যে অনেক ভয়-ভীতি ছিল এবং সে সময় অনেকটা যুদ্ধের মত অবস্থার সৃষ্টি হয়। ঠিক সেই সময়ে তথ্য-প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এর দুরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি এর সঠিক নির্দেশনায় এই চ্যালেঞ্জকে সফলভাবে মোকাবেলা করার চেষ্টা চলমান রাখে আইসিটি বিভাগ। করোনার সময় খাদ্য ব্যবস্থাপনায় অনেক ঝুকিঁ ছিল এবং কোরবানির সময় লোকসমাগমের বিষয়টিও উল্লেখ্য। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এই ডিজিটাল হাট যথেষ্ট ভুমিকা রেখেছে বলে জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ। সবশেষে, ডিজিটাল হাটের মত সফল একটি উদ্যোগের নেপথ্যে থেকে যারা কাজ করেছেন এবং একই সাথে এই পুরো আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া, তিনি আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে করোনা পরিস্থিতিতে এ ধরনের ভার্চুয়াল আয়োজনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে প্রচারণায় সহোযোগিতার জন্য বিজয়ীদের প্রত্যেককে এবং আয়োজকসহ সংশ্লিস্ট সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব পার্থপ্রতিম দেব বলেন, প্রথমবারের মত এ ধরনের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করলেও ফলাফল হিসেবে এই করোনাকালীন সময়ে সকলের কাছ থেকে সহোযোগিতার পাশাপাশি জনগনের থেকেও ভালো সারা পাওয়া গিয়েছে এবং প্রশংসিত হয়েছে। ই-কমার্স অর্থাৎ অনলাইনে বিজনেস প্রোমোশনের ক্ষেত্রেও এটি যথেষ্ট কাজ করেছে। পরে তিনি এই উদ্যোগের সাথে সংশ্লিস্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
iDEA প্রকল্পের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান এবং তিনি এই আয়োজনের সাথে যারা পার্টনার হিসেবে সংযুক্ত হয়েছেন তাদের সকলের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, করোনার সময়ে ভোক্তা এবং উৎপাদনকারির মধ্যে যোগাযোগের যে ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছিল সেটা দূর করতে “ফুড ফর ন্যাশন” যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। খুব শীঘ্রই “ফুড ফর ন্যাশন” এর জন্য অ্যাপস্ তৈরির কাজ সম্পন্ন করা হবে এবং সকলে ব্যবহার করতে পারবে।
করোনা ভাইরাসের কারণে জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার অনলাইনে কোরবানির পশুর ডিজিটাল হাট আয়োজন করতে আগ্রহী হয়। আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে iDEA প্রকল্পের “ফুড ফর নেশন” প্লাটফর্মে এই হাটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দেশের সর্ববৃহৎ এই ডিজিটাল হাটের জন্য সারা বাংলাদেশ থেকে এখানে গরুর খামারী, চাষী ও স্বতন্ত্র ব্যবসায়ীরা এই প্লাটফর্মে বিনামূল্যে https://foodfornation.gov.bd/qurbani2020/ ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে নিবন্ধনসহ পশুর ছবি আপলোড করে বিক্রি করার সুযোগ পান। একইসাথে সাধারণ ক্রেতারাও অনলাইন থেকে পছন্দ করে তাদের প্রয়োজনীয় পশু ক্রয় করতে সক্ষম হন। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের ভুমিকা ছিল অনেক। দেশে মোট ৫২৯৩ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে এবং তাদের জন্য করোনা পরিস্থিতিতে এই ডিজিটাল হাট কোরবানির পশু বিক্রিতে একটি বড় সুযোগ এনে দেয়। এই “ফুড ফর নেশন” প্লাটফর্মে প্রায় ১৩ হাজার বিক্রেতা, পাইকার, উদ্যোক্তাগন সংযুক্ত রয়েছে এবং সেই সময়ে ডিজিটাল হাটে গরু, মহিষ, ছাগল এর সংখ্যা প্রায় ৬৩০০ যেখানে অনলাইনে ভিজিটরের সংখ্যা ছিল ৫,৫২,৮৩৭। সারা বাংলাদেশ থেকে সকল ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মধ্যে যে উদ্যোক্তা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক খামারী, চাষী ও কোরবানির পশুর তথ্য আপলোডের মাধ্যমে প্রচারণা করে কোরবানির পশু বিক্রি করতে পেরেছেন তাদের পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। এরই আলোকে খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ মহারাজপুরের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে অনুপ কুমার অধিকারী সেরা ১ জন বিজয়ী হিসেবে ৫০,০০০ টাকার মূল্যমানের পুরস্কারসহ ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। এছাড়া, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সেরা ১০ জনকে সর্বাধিক প্রচারকারী পুরস্কার হিসেবে ৫০০০ টাকার চেকসহ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এরা হলেন- মো: আল-হেলাল (শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ০১- খুলনা), মোঃ মমিনুল হক রাজু (চিথলিয়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ০১-খুলনা), মো: আবু রায়হান মন্ডল (পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ডিজিটাল সেন্টার ০১-রংপুর), মোঃ নাহিদ হোসেন (শ্রীধরপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ০১- যশোর), আনোয়ার হোসেন (উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা , পাকুন্দিয়া , কিশোরগঞ্জ), মোঃ তাহের খান (আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ০১- চুয়াডাঙ্গা), মোঃ সোহাগ (তাড়াইল ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ,কিশোরগঞ্জ), সাফায়েত হোসেন (মোস্তফাপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার) এবং মুহাম্মদ আতাউর রহমান (দামপাড়া, নিকলী, কিশোরগঞ্জ)।
উল্লেখ্য, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আক্রমণে সারা দেশের খাদ্য ও কৃষিপন্য ব্যবস্থাপনায় আসে নতুন চ্যালেঞ্জ। দেশের খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী প্রান্তিক কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পেতে পারে এবং সেই সাথে ভোক্তারা যাতে তাদের চাহিদা মোতাবেক সহজে, স্বল্প সময়ে এবং সঠিক মূল্যে প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্য পেতে পারে সে লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আইসিটি বিভাগ “ফুড ফর ন্যাশন”- প্ল্যাটফর্ম তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে। নতুন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্মটি বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আইসিটি বিভাগের অধীনে বাস্তবায়নাধীন iDEA প্রকল্পের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে তরুণ উদ্যোক্তা কোম্পানি বা স্টার্টআপ, কৃষান, আই ফার্মার, ডিজিটাল আড়ৎদার, চালডাল, শপআপ, ট্রাক লাগবে, সহজ ট্রাক, পাঠাও-সহ প্রায় ১২টি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান এ প্ল্যাটফর্মে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে সংযুক্ত হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, এটুআই, কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশন, সিটি কর্পোরেশন, ই-ক্যাব, বাংলাদেশ পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট স্টার্টআপসমূহ সবাই এ উদ্যোগকে সফল করতে একযোগে কাজ করে। এছাড়া, আইসিটি বিভাগের এটুআই (a2i) এর একশপ উদ্যোগ ফুড ফর ন্যাশন প্ল্যাটফর্মটির সহায়তায় সংশ্লিষ্ট খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্যের কেনাবেচার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা করে।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন iDEA প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ও উপ-সচিব কাজী হোসনে আরা। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন একশপ, এটুআই-এর হেড অব ই-কমার্স রেজওয়ানুল হক জামি। উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন iDEA প্রকল্পের পরামর্শক ও iDEA প্রকল্পের ডিজিটাল হাটের কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ ওমর ফারুক, কমিউনিকেশনস্ বিষয়ক পরামর্শক সোহাগ চন্দ্র দাস এবং শারমিন আকতার-সহ আইসিটি বিভাগ, বিসিসি, এটুআই, একশপ এর কর্মকর্তাগণসহ, স্টার্টআপবৃন্দ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের প্রতিনিধিগণ।